কুমিল্লার চার না সিলেটের প্রথম

সমীকরণটা দারুণ- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বিপিএল ফাইনালে কখনো হারেনি। ওদিকে প্রথমবার ফাইনালে ওঠা সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার দলকে ফাইনালে হারাতে পারেনি কোনো প্রতিপক্ষ। বিপিএল ইতিহাসেই শুধু নয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ইতিহাসে টানা তিনবার শিরোপা জেতা অধিনায়ক মাশরাফী। ২০১২, ২০১৩ ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সে, ২০১৫ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ২০১৭ রংপুর রাইডার্সকে শিরোপা এনে দেন। দল ফাইনালে উঠলে প্রতিবারই জিতেছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে চার শিরোপা জয়ের রেকর্ডধারী। এদিকে কুমিল্লা মাশরাফীর নেতৃত্বেই প্রথম শিরোপা জিতেছিল ২০১৫ সালে। এরপর ২০১৮ এবং ২০২২ আসরে ফাইনালে উঠে শিরোপা জিতেই থেমেছে দলটি। আর গত দুবারের অধিনায়ক ছিলেন ইমরুল কায়েস। কুমিল্লা ও মাশরাফী; দুই পক্ষের অজেয় রথ টেনে নেওয়ার পাশাপাশি আজ আরও এক লড়াইয়ের দেখা মিলবে- অধিনায়ক ইমরুলের তৃতীয় শিরোপা না মাশরাফীর রেকর্ড পাঁচ।

প্রথম কোয়ালিফায়ারে ১২ ফেব্রুয়ারি শেষ ম্যাচ খেলেছিল কুমিল্লা। ইমরুলরা তিনদিন বিশ্রামের পর ফাইনালে নামার সুবিধা পাচ্ছেন। আর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলার একদিন পরই সিলেটকে নামতে হচ্ছে শিরোপা লড়াইয়ে। কালকের অনুশীলনে তাই এর প্রভাব ছিল। বেলা ২টার দিকে মিরপুরে এলেও অ্যাকাডেমি মাঠে শুধু গা গরমের ফুটবল খেলেই হোটেলে ফিরেছে দলটির খেলোয়াড়রা। ব্যাট বলের কোনো অনুশীলন করেনি দল। তাদের মধ্যে অধিনায়ক মাশরাফী ছিলেন না। রাজনৈতিক কাজে নড়াইলে ছুটতে হয়েছিল তাকে। কুমিল্লাও জোরেশোরে প্রস্তুতির কিছুই করেনি। মূল পেসার-স্পিনাররা অ্যাকাডেমি মাঠের সেন্টার উইকেটে বোলিং করেছেন ইমরুল-মঈন আলি-জনসন চার্লসকে। মঈন আলিই নতুন হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় নেটে কাটিয়েছেন।

দুই দল আসরে তিনবার মুখোমুখি হয়েছে। দুই জয় কুমিল্লার আর প্রথম জয়টি ছিল সিলেটের। তাই প্রথম কোয়ালিফায়ারের পর সিলেটকে ফাইনালে চেয়ে পেয়েও গেছেন ইমরুল। এবার নিজেদের চ্যালেঞ্জটা জিততে চান, ‘দেখুন একটা দলকে আমরা দুবার ১২০ (১৩৩, ১২৫) এর ভেতর অলআউট করেছি। তো আমার মনে হয় আমাদের বোলিং আক্রমণটা তাদের আটকে দেওয়ার জন্য ভালো। কাল ভিন্ন কিছুও হতে পারে, কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে তো আমার চাওয়া থাকবেই, একটা দলকে যখন আপনি দুবার অলআউট করবেন কম রানে, তখন সে আত্মবিশ্বাসটা থাকে।’

ইমরুল তাদের চিন্তায় সহজ প্রতিপক্ষ হিসেবে সিলেটকে পেয়েছেন। সিলেটের জন্য অতীত ফলের হিসেবে কুমিল্লা কঠিন। কিন্তু সিলেটের ওপনার নাজমুল হোসেন শান্ত জানালেন দল প্রতিপক্ষের দিকে তাকাচ্ছে না। নিজেদের পরিকল্পনা রেখে সঠিক পথে এগোতে চান, ‘আমরা কার বিপক্ষে খেলছি এটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। আমাদের লক্ষ্য হলো যে পরিকল্পনাগুলো কাল কীভাবে প্রয়োগ করব। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে যারা ভালো খেলবে তারাই জিতবে।’

দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রংপুরের বিপক্ষে ১৮২ রান করেও কঠিন অবস্থায় পড়েছিল সিলেট। কিন্তু মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার নেতৃত্বে শান্তরা মাঠে দারুণ উজ্জীবিত হয়ে ওঠা সিলেটকে ফাইনালে তোলে। শান্ত নিজে দুটি চার বাঁচানো ফিল্ডিং করেছেন। জাকির হাসান একটি ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া রান আউট ও ১৯তম ওভারে অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়েছেন। এই ছোট অবদানগুলো সিলেটকে মাঠে তাতিয়ে রেখেছে। শান্ত মনে করেন মাশরাফীর উজ্জীবনী শক্তিতে তারা এতটা ভালো খেলছেন। সঙ্গে সিলেটের সমর্থকদের ভালোবাসা তাদের এতদূর এনেছে। এবার সিলেটকে এর প্রতিদান দিতে চান শান্ত, ‘(মাশরাফী) নিঃসন্দেহে খুবই ভালো অধিনায়কত্ব করেছেন। তবে আমার মনে হয়, পুরো দল হিসেবেই আমরা ভালো করেছি। উনি অনেক সাহসী মানুষ। এই সাহসটাই হয়তো উনার বড় একটা শক্তির জায়গা। আর সিলেট এর আগে কখনো ফাইনালও খেলেনি। যদি শিরোপা জিততে পারি এটা সিলেটবাসীর জন্য অনেক বড় অর্জন হবে। দল হিসেবে আমাদেরও ভালো লাগে।’

এই মাশরাফীকে নিয়েই কুমিল্লার এখন আলাদাভাবে ভাবতে হচ্ছে। এতদিন শুধু বোলিং করছিলেন। কিন্তু গত দু ম্যাচ ধরে ব্যাটিং অর্ডারের ওপরে উঠে আসছেন মাশরাফী। ক্যামিও ইনিংসে দলকে একটা ভালো অবস্থানে রেখে যাচ্ছেন। বোলিংয়েও রান আটকে দিচ্ছেন বিপক্ষের। শান্তর কথায় মাশরাফীর জন্যই দল ফাইনালে উঠেছে, এবার কি তাহলে তার জাদুতেই শিরোপাটাও জিতবে! ইমরুল অবশ্য এটা বিশ্বাস করেন না, ‘দেখুন, প্রত্যেক দলেরই একজন অধিনায়ক থাকেন, প্রত্যেক দলেরই একটা পরিকল্পনা থাকে, আমার দলটাকে কীভাবে চালাব। শেষ ম্যাচে তিনি খুব ভালো ব্যাট করেছেন, মোমেন্টামটাই বদলে দিয়েছেন। কিছু সিদ্ধান্ত এমন ফলে যায়। আমি তো অধিনায়ক হিসেবে ওদের ৫০ রানে অলআউট করে দিতে চাইব। যদি আগে ব্যাট করি, তাহলে তো চাইব রানটা যেন ২০০’র বেশি করি। চাওয়াতেই তো আর সব কিছু হবে না, মাঠে গিয়ে… কালকের খেলাটা পুরোটাই হবে মানসিক খেলা, কারণ হাই ভোল্টেজ খেলায় যে যত বেশি নার্ভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, যে যত বেশি নিজেকে শান্ত রাখতে পারবে, তাদের দল তত বেশি ভালো করবে।’

ইমরুল বলেছেন বটে, জাদুর কাঠি নেই। তবে মাশরাফী ও তার হাতে অবশ্যই উপস্থিত। নয়তো এক দলকে টানা ১০ জয়ে ফাইনালে তোলা আর ওদিকে বড় নামহীন এক দলকে নিজে গুছিয়ে প্রথম আসরেই ফাইনালে নিয়ে আসা সহজ কথা নয়। এবার দেখার হবে ওই জাদুর কাঠি চূড়ান্ত ভাবে কার হাতে থাকে।

আরো পড়ুন