কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ ৪ তরুণের লক্ষ্য ছিল হিজরত, র‍্যাবের হাতে আটক

‘হিজরতের’ উদ্দেশে ঘর ছাড়েন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাত তরুণ। তাদের পর একই উদ্দেশে বের হন আরো চার তরুণ। তবে তাদের ওপর আগে থেকেই ছিল র‍্যাবের নজরদারি। এই চার তরুণকে আটক করেছে র‍্যাব। তবে আজ শনিবার রাত পর্যন্ত তাদের পরিচয় জানাননি র‍্যাব কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, আটক হওয়া চারজনের কাছ থেকে আগে নিখোঁজ সাতজনের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। তারা সবাই আনসার আল ইসলামের মতাদর্শী। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে কথিত হিজরতের উদ্দেশে তারা ঘর ছাড়েন। তবে তারা কিভাবে কী উদ্দেশে ঘর ছাড়ছেন এ ব্যাপারে না বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে চারজন ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। আটক চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদে নিখোঁজদের বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে জঙ্গিবাদে এদের উদ্বুদ্ধ করা ব্যক্তিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এর আগে ২৩ আগস্ট কথিত হিজরতের কথা বলে পরিবারকে চিঠি লিখে ঘর থেকে বেরিয়ে যান কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সাত শিক্ষার্থী। নিখোঁজ তরুণরা হলেন ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইমরান বিন রহমান (১৭), সামি (১৮), কুমিল্লা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম (১৮), নিহাল (১৭), ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত (১৯), অনার্স তৃতীয় বর্ষের আমিনুল ইসলাম আলামিন (২৩) এবং ঢাকার ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স শেষ করা নিলয় (২৫)। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর প্ররোচনায় এই তরুণরা ঘর ছেড়েছেন।

র‍্যাব সূত্র জানায়, সন্তানদের সন্ধানের দাবিতে ২৫ আগস্ট র‌্যাবের কাছে একটি আবেদন করেন নিখোঁজ তরুণদের পরিবারের সদস্যরা। পরে র‍্যাব এ ব্যাপারে গোয়েন্দা তৎপরতা এবং নজরদারি বাড়ায়। এরপর ‘হিজরতের’ উদ্দেশে বের হওয়া অন্য চার তরুণকে আটক করে র‍্যাব।

র‍্যাবের দাবি, আটক চারজন নিখোঁজ সাতজনের ক্লোজ গ্রুপে (ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ) ছিল। উদ্ধারের পর তাদের মোটিভেশন করানো হয়। পরে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের গতিবিধি সম্পর্কে নজর রাখা হচ্ছে।

র‍্যাব কর্মকর্তারা জানান, এই সাত তরুণের সবাই ধার্মিক এবং পরস্পর পরিচিত। এর মধ্যে ছয়জন কুমিল্লা শহরের উদ্ভাস কোচিং সেন্টারে কোচিং করতেন। তারা ২৩ আগস্ট কোচিংয়ে যাওয়ার কথা বলে বাসা ছাড়েন। তাদের বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। তাদের সন্ধান করতে গিয়ে এই চারজনকে আটক করে র‍্যাব। তারাও ওই সাত তরুণের মতো হিজরত করতে চেয়েছিলেন বলে দাবি করছে র‍্যাব।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘আমাদের হাতে আটক হওয়া এই চারজনই নিখোঁজ সাতজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মতাদর্শের অনুসারী। এখনো সাতজনের অবস্থান শনাক্ত করা না গেলেও তাদের ইন্ধনদাতাদের খোঁজ চলছে। কুমিল্লায় আরো অনেক তরুণ জঙ্গিবাদী আদর্শে জড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে পরিবার সন্তান নিখোঁজ হওয়ার কোনো তথ্য থানা-পুলিশকে জানাচ্ছে না। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’

আরো পড়ুন