কুমিল্লা দেবীদ্বারে নিখোঁজ শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

কুমিল্লা দেবীদ্বারে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু কণ্যার ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ বাজারের প্লাষ্টিক ব্যাগ ভর্তি গলিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ।

রোববার দুপুরে দেবীদ্বার থানা পুলিশ শিশুটির নিজ বাড়ি দেবীদ্বার পৌর এলাকার চাপানগর (চম্পকনগর) থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূর, উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর গ্রামের নজরুল ইসলাম মাষ্টারের বাড়ির সামনে ‘দেবীদ্বার-চান্দিনা’ সড়কের পাশে একটি ব্রীজের গোড়া থেকে বাজারের ব্যাগ ভর্তি ক্ষতবিক্ষত গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে।

পুলিশ শিশুটির মরদেহের ছোরতহাল রিপোর্ট তৈরী পূর্বক ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেছে।

কাচিসাইর গ্রামের স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শি আমেনা বেগম নামে এক গৃহবধূ জানান, শিশুটির চেহারা বিকৃত ছিল, সারা শরীর ফুলে গেছে, শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রদ্বারা পোচানো ছিল, গোপাঙ্গনেও কাটা দাগ ছিল, কানের লতিগুলো ছেড়া ছিল।

নিহতের মা হোছনা আক্তার ও দাদা জহিরুল ইসলাম জানান, শিশুটির কানে এক জোড়া স্বর্নের রিং ছিল, সেগুলো ছিনিয়ে নিতেই কেউ কানের লতি ছিড়ে ফেলে এবং তাদের চিনে ফেলার ভয়ে তাকে হত্যা করতে পারে।

ফাহিমা আক্তার(৫) দেবীদ্বার পৌর এলাকার চাপানগর গ্রামের ট্রাক্টর চালক মোঃ আমির হোসেন’র একমাত্র সন্তান। সে গত ৭ নভেম্বর বিকেলে বাড়ির আঙ্গীনায় খেলতে যেয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় নিজ গ্রামে, স্বজনদের বাড়ি, হাসপাতাল সহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজা খুজি করে এবং মাইকিং করে না পেয়ে গত ১১ নভেম্বর তার পিতা আমির হোসেন দেবীদ্বার থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করেন।

এদিকে কবিরাজ মাঈনুদ্দিনের ভক্ত চাপানগর গ্রামের একাধিক মুরিদান ফাহিমাকে উদ্ধারে পৌর এলাকার দেবীদ্বার গ্রামের হাজী আবুল কাসেম চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশের ভাড়াটিয়া কবিরাজ মাঈনুদ্দিনের স্মরনাপন্ন হতে পরামর্শ দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভক্ত জানান, ফাহিমাকে উদ্ধারে ১০ হাজার টাকা কন্ট্রাকে কবিরাজ মাইনুদ্দিন গত ৫দিন ধরে প্রতিরাতেই জ্বীন চালান দিয়ে আসছিলেন, প্রতি রাতেই তাকে ফিরিয়ে দিবে বলে আশ্বস্ত করেন। রাতে কোন মানুষ ঘর থেকে বেড়োতে কিংবা কোন ধরনের শব্দ করতে পারবেন না। মানুষ ঘুরাঘুরি করলে জ্বীন ফাহিমাকে ফিরিয়ে দেবেনা। কবিরাজ মাঈনুদ্দিন বলেন, কখনো এলাহাবাদ গ্রামে আছে, আবার বলেন, ফতেহাবাদ গ্রামে আছে, তবে সে জীবিত আছে। আপনারা আমার কথামত নিয়ম মেনে না চললে ফাহিমাকে জ্বীন ফিরিয়ে দেবেনা বলে তিনি জানান।

স্থানীয়রা জানান, রোববার ভোরে পথচারীরা ঘটনাস্থলে একটি বাজারের ব্যাগ ভর্তি মানুষের পায়ের অংশ বেড়িয়ে থাকতে দেখে ৯৯৯ নম্বরে ফোনে খবর দেন। সংবাদ পেয়ে পিবিআই’র একটি দল ও দেবীদ্বার- ব্রাক্ষণপাড়া সার্কেল এ,এস,পি আমিরুল্লাহ, দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আরিফুর রহমান উপ-পরিদর্শক(এসআই) নাজমুল হাসান ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মোঃ জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করেন। এসময় শিশু উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে নিখোঁজ শিশু ফাহিমার পিতা-মাতা, দাদা-দাদী এবং স্বজনরা তার মাথার চুল এবং গায়ের হলুদ গেঞ্জী দেখে শনাক্ত করেন।

এব্যপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমেক হাসপাত মর্গে পাঠানো হয়েছে। ৬/৭দিন আগে তাকে হত্যা করে বাজারের প্লাষ্টিকের বেগে করে ফেলে যাওয়ায় সারা শরীর পঁচে গেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরই হত্যাকান্ডের মোটিভ উদঘাটন করা যাবে এবং হত্যাকারীদের চিহ্নীত করে আইনের আওতায় আনা হবে। মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

আরো পড়ুন