কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই কোটি টাকার সড়কে তিন বছরেই ফাটল

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। তিন বছর না যেতেই প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটির এমন দশায় প্রশ্ন উঠেছে কাজের মান নিয়ে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দায়সারাভাবে নির্মাণ, তদারকির অভাব ও নিয়ম না মেনে ভারী যান চলাচলের ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন আয়োজন করতে গিয়ে ২০১৯ সালের শেষের দিকে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রধান ফটক থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত সড়কটি নির্মাণ করে ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রধান ফটক থেকে জিরো পয়েন্ট ৭ ইঞ্চি, জিরো পয়েন্ট থেকে ক্যাফেটেরিয়া ৬ ইঞ্চি এবং ক্যাফেটেরিয়া থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত ৫ ইঞ্চি পুরুত্বে আরসিসি ঢালাইয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হয়।

গত সোমবার সড়কটিতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে বড় ধরনের ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ক্যাফেটেরিয়ার সামনেসহ কয়েকটি স্থানে রড বেরিয়ে এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে ৫ ও ৬ ইঞ্চি পুরুত্বে তৈরি মুক্তমঞ্চ থেকে শহীদ মিনার এলাকায়। সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, নির্মাণের দুই মাসেই ফাটল দেখা দেয় সড়কটিতে। সে সময় সংস্কার করা হলেও তেমন কাজে আসেনি। প্রকল্পের মেয়াদের শেষের দিকে পুনরায় সংস্কারের কথা বলা হলেও তিন বছরে কোনো সংস্কার করেনি কর্তৃপক্ষ।

প্রকৌশল দপ্তর বলছে, অতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে এমনটা হয়েছে। নতুন করে অর্থ বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে।

তবে এক বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী বলেন, রাস্তার ফাটল বা ভাঙন পুরুত্বের ওপর নির্ভর করে না। এখানে দুটি স্ল্যাবের সংযোগস্থলে পানি ঢুকেছে। ফলে ঢালাইয়ের নিচের ওই জায়গার বালু সরে গিয়ে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে। এতে হালকা ওজনের গাড়ি চলাচল করলেও ভাঙন সৃষ্টি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, আরসিসি ঢালাইয়ের সড়ক করা হয় টেকসইয়ের জন্য। সে সড়ক যখন এত দ্রুত ভেঙে যায়, তখন কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক।

কাজল হোসাইন নামে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর ভাষ্য- কর্তৃপক্ষ শুধু বরাদ্দ দিয়েই সকল কাজের দায় সারে। কাজের সময় যথাযথ তদারকি করা হলে অল্প ক’দিনেই এ রাস্তায় ভাঙন ধরতো না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক এসএম শহিদুল হাসান বলেন, আরসিসি ঢালাইয়ের পূর্ণশক্তি অর্জনে ২৮ দিনের সময় দিতে হয়। কিন্তু সড়কটি তৈরির সময়ে সমাবর্তন ও বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের কাজ চলমান ছিল। ঢালাই দেওয়ার দু’দিন পরই বালু-সিমেন্টের ট্রাক চলাচল করেছে। সে সময় সড়কটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করলেও অনেক দিন পরই তা ভেঙেছে। তবে এটি সংস্কার করা সম্ভব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের উপপরিচালক ড. শাহাবুদ্দিন বলেন, এগুলো দেখাশুনার দায়িত্ব প্রকৌশল দপ্তরের। তারা জানালে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান তিনি।

আরো পড়ুন