কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেল রিকশা চালক মোহন

ডেস্ক রিপোর্টঃ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় রিকশাচালক বাবার সাথে নিজেও শুরু করে রিকশা চালানো। পরিবারের অন্নসংস্থানের পাশাপাশি ছোট বোনের ভরণ-পোষণ পরবর্তীতে নিজের এবং বোনের লেখাপড়ার খরচ চালানোর বড় দায়িত্বটা ছোট কাঁধে তুলে নেয় মোহন মিয়া।

এভাবে রিকশা চালিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উর্ত্তীণ হয় সে। কোচিং ছাড়াই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে চান্স পায় আইন বিষয়ে । কিন্তু রিকশাচালক বাবার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়।

স্বপ্ন এসে চোখের সামনে দোলা দিলেও স্বপ্ন পূরণের পথটা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে মোহনের স্বপ্নটা ভেস্তে যায়নি। আর্থিক দৈন্যতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবে না মোহন, এমন খবরটা পৌঁছে গেলো কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত মো. আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছে।

তিনি নিজেই মোহনের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলেন। মোহন জানায়,তার বাড়ি নরসিংদী জেলার মাধ্বধী উপজেলার খড়িয়া গ্রামে। বাবা মো. দেলোয়ার হোসেন রিকশা চালক। মা রাশিদা বেগম গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে মোহন মেজ। বড় ভাই মনির হোসেন রিকশা চালক।

স্ত্রী সন্তান নিয়ে আলাদা থাকে। মোহন জানায়, পঞ্চম শ্রেণি পড়া অবস্থায় পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ও নিজের লেখাপড়া চালিয়ে নেবার জন্য রিকশার প্যাডেলে পা রাখে। দীর্ঘ পাঁচ বছর রিকশা চালায়। এসএসসি পাস করার পর রিকশা চালানো বন্ধ করে।

টিউশনি করে এইচএসসি পাস করে। তারপর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। ভর্তি পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়ে ভর্তি হয়। তবে পরবর্তীতে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাবে সে চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে মোহনের।

রিকশা চালক বাবার পক্ষে লেখাপড়ার খরচ চালানো সম্ভব নয়, এ কথাটা মোহনের চেয়ে কে ভালো বুঝবে! তবে মোহনের দুশ্চিন্তার ভাঁজকে প্রসারিত হতে দেননি কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিন সার্কেল) সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত মো.আবদুল্লাহ আল মামুন।

তিনি নিজে মোহনের খোঁজখবর নিয়ে তার অফিসে ডেকে নেন। তারপর মোহনকে কিছু আর্থিক অনুদান দেয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারে সে জন্য মোহনকে একটি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলে দেন এবং প্রতিমাসে কিছু আর্থিক প্রণোদনা ওই অ্যাকাউন্টে দেবেন বলে মোহনকে আশ্বস্ত করেন।

মোহনের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ্ধসঢ়; আল মামুন বলেন, আসলে মাস্টার জহির উদ্দিন স্মৃতি পাঠাগারের পক্ষ থেকে মোহনের লেখাপড়ার খরচ চালানোর সিদ্ধান্ত নেই।

এ বিষয়টা মোটেও সাহায্য সহযোগিতা নয়, বিষয়টা আমাদের মানবিক-সামাজিক দায়বদ্ধতা। আর সে জায়গা থেকে মেধাবী শিক্ষার্থী মোহনের জন্য কিছু করার চেষ্টা মাত্র। আর আমি বিশ্বাস করি মোহনের মত আত্মপ্রত্যয়ীরা একদিন ঠিকই সফল হবে।

লেখাপড়ার এমন সহযোগিতা পেয়ে কুবির শিক্ষার্থী মোহন মিয়া আনন্দে কেঁদে ফেলেন। খবরটা তার বাবা মাকে দেন। ছেলের পাশে দাঁড়ানো মানুষজনের জন্য মন ভরে দোয়া করেন। মোহন জানালেন, মামুন স্যার আমাকে যে সহযোগিতা করলেন ইনশাল্লাহ আমি পড়াশুনা করে মানুষের মত মানুষ হয় এর প্রতিদান সমাজকে দেব।

আরো পড়ুন