কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালালদেরও দুই শিফট!
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লা ও নোয়াখালীর সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান হলো কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তবে নানা সংকট আর সমস্যা নিয়ে বর্তমানে রুগ্নভাবে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রায়ই ৫০০ শয্যার এ সেবা কেন্দ্রে দ্বিগুণ-তিনগুণ রোগীও ভর্তি থাকে। প্রতিটি পদে জনবল সংকট রয়েছে। শৌচাগারেরও বেহাল দশা। দালাল ও ওষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরাও হয়রানি করে প্রচুর। এমনকি এখানে দালালরাও দুই শিফটে পালাক্রমে দালালি করে বেড়ায়।
১৯৯২ সালে ২৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে কুমেক হাসপাতাল। ২০১৩ সালে ৫০০ শয্যায় বৃদ্ধি করা হয়। তবে নতুন কোনো জনবল নিয়োগ হয়নি। চাকুরি শেষ, বদলি, মৃত্যুসহ নানা কারণে বহুপদ এখনো শূন্য। প্রয়োজনের চার ভাগের একভাগ জনবল দিয়ে সেবা দিতে নিয়মিত হিমশিম খাচ্ছে কুমেক কর্তৃপক্ষ। তার উপর রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি।
কুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ডাক্তারদের যথাসময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া নিয়ে বহুদিনের অভিযোগের সমাধান হয়েছে। কারণ প্রায় দুই মাস আগে কর্মকর্তা-কর্মচারি ও ডাক্তারদের ফিঙ্গারিং ডিভাইসে হাজিরা চালু হয়েছে। এখন যথাসময়ে ডাক্তারদের কর্মস্থলে পাওয়া যায়।
কুমেক হাসপাতালে নানা প্রয়োজনে নিয়মিত আসা স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আবদুল হান্নান জানান, ডাক্তাররা পদে পদে কমিশনের জন্য বসে থাকেন। ওষধ কোম্পানির কমিশন, ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার থেকে বিভিন্ন টেষ্টের কমিশন, প্রাইভেট হাসপাতালে রেফার করে কমিশন সব জায়গায় কমিশন। অনুমোদনহীন কোম্পানির সাপ্লিমেন্ট ওষধ লেখার অভিযোগও রয়েছে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের শৌচাগারগুলোর দশা বেহাল। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। অনেক শৌচাগারে নেই লাইট, বদনা ও পানির কল। কোনটার দরজা ভাঙা আবার কোনোটিতে নেই সিটকানি। ইনডোরের প্রায় বেডে তেলাপোকা ও ছারপোকার উৎপাত তো রয়েছেই।
হাসপাতাল ও টয়লেট অপরিষ্কারের বিষয়টি নিয়ে ওয়ার্ড মাষ্টার ইলিয়াস মিয়া জানান, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি প্রয়োজন ৫’শতাধিক, আছে মাত্র ১৭০ জন। রোগী থাকার কথা ৫০০ জন, রোগী ভর্তি করা হয় হাজারের উপরে। তারপরও অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে কর্মচারিরা কাজ করে যাচ্ছেন।
হাসপাতাল সংলগ্ন ডায়াগনষ্টি সেন্টার ও ওষধের দোকানগুলো দালালদের আশ্রয়কেন্দ্র। প্রায় প্রতিটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও ওষধ দোকানভিত্তিক কাজ করে দালালদের একাধিক চক্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনও হয়েছে তাদের কৌশল। দালালরা ইনডোর আউটডোরে চক্রভিত্তিক দুই শিফটে কাজ করে। রয়েছে নারী দালাল ও বৃদ্ধ দালালদের দল। পাঞ্চাবি, টুপি পড়ে দালালদের চক্র এমনভাবে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে, সাধারণ রোগীরা মনে করেন তার কল্যাণেই যেন কাজ করতে এসেছেন।
গেইট পাশের নামে রোগীদের স্বজনদের থেকে নিয়মিত অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। আরো অভিযোগ রয়েছে পরীক্ষার ক্ষেত্রেও। কিছু স্থানে রসিদের লিখিত সংখ্যা থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয় এবং এ কাজের জন্য হাসপাতালের কর্মচারিদের একাংশ জড়িত এবং তারাই বহিরাগত ও দালালদের হাসপাতালে প্রবেশে সহযোগিতা করে।
সিটি স্ক্যান, এক্সরে, আল্ট্রসনোগ্রাম, ইকো, এমআরআই, এক্স-রে, এন্ডোসকপি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চলছে নিয়মিত। এ বিষয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছে রোগীরা। তবে তাদের অভিযোগ দালালদের উৎপাত কিছুতেই কমছে না। আউটডোর, ইনডোর সবখানে দালাল চক্র বিদ্যমান।
এদিকে বহু অপেক্ষার পর ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) সেবা চালু করা হয়েছে। সহিংসতায় শিকার নারী ও শিশু এখান থেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা, আইনি সহায়তা, পুলিশি সহায়তা, সামাজিক সেবা, শেল্টার হোম, মনোসামাজিক কাউন্সেলিং, পুনর্বাসন, ফরেনসিক ডিএনএ সেবাসহ একইসঙ্গে সকল সহযোগিতা পাবে। বর্তমানে এখানে ১০টি সিট রয়েছে। চাহিদা হলে আসন আরো বৃদ্ধি করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন কর্মকর্তা এড. ফয়সাল আহমেদ সাব্বির।
হাসপাতাল পরিচালক ডা. স্বপন কুমার অধিকারি বলেন, দালাল ও ঔষধ শিল্পের প্রতিনিধিদের বারবার সতর্ক করা হচ্ছে, যদি ধরা পরে পুলিশে দেয়া হবে। অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, যদি এ ধরনের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে যথাযত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ