কুমিল্লা নিমসার কাঁচাবাজারে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ!

ক্রেতা-বিক্রেতার নাভিশ্বাস

কুমিল্লার নিমসার কাঁচাবাজারে কৃষক, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিটি পণ্যের বিপরীতে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসার এলাকায় জাতীয় প্রধান ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারী কাচাঁমালের বাজারটির অবস্থান। স্থানীয়সহ সারাদেশে নিমসার বাজার নামেই যার পরিচিতি। সরকারী ও ব্যক্তিগত জায়গায় গড়ে উঠা বাজারটি মহাসড়কের ফোরলেনের উভয় অংশজুড়ে প্রায় এককিলোমিটার পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও নানাজাতের শাক-সব্জি, তরিতরকারি, মৌসুমীসহ বারোমাসি ফল, নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্য সামগ্রী বিক্রির জন্য নিয়ে আসছে কৃষক, ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বত্ত ভোগীরা। রাত বাড়ার সাথে সাথে বাজারের ব্যস্ততা বেড়ে দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারের ব্যস্থতাও কমে যায়।

রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নিলফামারী, গাইবান্ধা, কুষ্টিয়া, যশোহর, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জয়দেবপুর, গাজীপুর, বাগেড়হাট, খুলনা, ভোলা, ফরিদপুর, বরিশাল, চট্রগ্রাম, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজারসহ সারাদেশ ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, কন্টেইনার, পিক-আপ, মিনিট্রাক, ট্রাক্টর, সিএনজি, অটোরিক্সা, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, রিক্সাযোগে কাঁচাবাজারের খাবার ও ব্যবহারের প্রয়োজনীয় যতসব পণ্য উৎপাদিত হয় তার সবগুলোই বিক্রির জন্য নিয়ে আসে এই পাইকারী বাজারে। এসব পণ্যের বেশীর ভাগ আড়তে ঠাই হলেও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তরকারি, শাকসব্জি কৃষকরা খোলা আকাশের নীচে উন্মুক্ত স্থানে দাড়িয়ে বিক্রি করছে।

পরবর্তীতে আবার কুমিল্লার সবগুলো উপজেলা, মহানগরীসহ আশপাশের ঢাকা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষèীপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা কখনো এককভাবে কখনোবা দলবদ্ধ হয়ে এসব তরিতরকারী, মৌসুমী ফলসহ অন্যান্য মালামাল ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে খুচরা বিক্রির জন্য।

সরেজমিন বাজার ঘুরে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, বাজারে পাইকাররা পন্য নিয়ে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান বা অন্যান্য যানবাহনে এনে কখনো রাস্তার উপর গাড়ি রেখে অন্য গাড়িতে মালামাল লোড-আনলোড করে। আবার কখনো মালামাল আড়তে রেখে বিক্রি করছে। এঅবস্থায় আড়তদাররা প্রতিদিন ১শ টাকা খাজনা দিলেও একটি ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান থেকে চাহিদার গুরুত্ব বুঝে মালামাল অন্য ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানে উঠা-নামানোতে ২-৩ হাজার টাকা খাজনা আদায় করছে। এছাড়াও কাঁচামরিচ, লেবু, বিভিন্ন ফলমুল, টমেটোসহ বাজারে চাহিদা থাকা অন্যান্য পণ্য বস্তা বা প্লাষ্টিকের ঝুড়ি প্রতি অতিরিক্ত নির্দিষ্ট হারে খাজনা আদায় করছে। এক্ষেত্রে আম প্রতি ঝুঁড়ি ১০ টাকা, প্রতি কাঠাঁল ৪ টাকা, তরমুজ-বাঙ্গী ২ টাকা, লেবু এক বস্তা ৪০ টাকা, বড় চটের বস্তা ৬০ টাকা, সব্জি প্রতি কেজি ২ টাকা, ধনিয়া শতকরা ১০ টাকা, প্রতিটি মুরগীর দোকান ৫০ টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে বাবসায়ীরাও পরবর্তীতে পাইকারদের কাছে অতিরিক্ত মুল্যে মালামাল বিক্রি করছে। যার প্রভাব পরবর্তীতে খুচরা বাজারগুলোতে ক্রেতাদের উপর পড়ছে। আর এভাইে বাজারটিতে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের কারণে পরবর্তীতে খুচরা বাজারগুলোতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে প্রতিদিন।

জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকার প্রতিটি পণ্যের আকার, পরিমান নির্দিষ্ট করে খাজনার পরিমান নির্ধারন করে দিলেও নিমসার বাজারে ইজারাদার ও তাদের লোকজন সরকারী নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা করেন না। এদিকে বাজারে স্থানীয়ভাবে নজরদারী না থাকায় ইজারাদার ও তার লোকজন বেপরোয়া হয়ে উঠায় পণ্যের মুল্যও বেড়ে চলছে অস্বাভাবিক।

নিমসার বাজারের ইজারাদারের অনিয়মে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রথম দফায় দেশের বিভিন্নস্থান থেকে যে তরিতরকারি-সব্জি,মৌসুমী ফলের চালান নিয়ে আসছে ট্রাক,কাভার্ডভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে। সেগুলো থেকে প্রথম দফায় প্রতি ট্রাক (বড়) আম থেকে সরকার নির্ধারিত ৩৬ টাকা, আনারস ৩৮ টাকা, কাঠাল ৪৩ টাকা, মুলা ২০ টাকা, কলা ৩৩ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও ইজারাদার নিচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।বাজারের সবগুলো পণ্যের ক্ষেত্রেই রয়েছে এই বৈষম্য।

একইভাবে একই বাজারথেকে স্থানীয়ভাবে ক্ষুদ্র পাইকাররা একই পণ্যকিনে নেওয়ার ক্ষেত্রেও ইজারাদার তাদের থেকেও পণ্যের পরিমান (কখনো মোঠা, সংখ্যা, বা কেজি হিসেবে খাজনা) অনুযায়ী নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নিচ্ছে। এঅবস্থায় ২০-৩০ টন ওজনের বড় ট্রাকগুলো থেকে দু’দফা ৪/৫ হাজার টাকা খাজনা আদায় করছে। যা সরকারী নির্ধারিত উল্লেখিত টাকার ৩০/৪০ গুণের বেশী। একই অবস্থা আড়তদারের ক্ষেত্রেও। সেখানে কাঁচা মাল তরিতরকারি , লতি, কচুর মুখী, লিচুর দোকান (বড়) প্রতি ১৮, ১২, ১৮ টাকা নির্ধারিত। সেখানে ইজারাদার ঝুড়ি প্রতি টাকা নিচ্ছে খাজনা হিসেবে।

এ বিষয়ে নিমসার বাজার ইজারাদার হুমায়ুন কবির এর কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান, আসলে ইউএনও অফিস থেকে যে কাগজ আমাদেরকে দেয়া হয়েছে সেটা পড়ে দেখা হয়নি, আগে যারা খাজনা তুলতো আমরা তাদের থেকে ১/২শ টাকা কম নিচ্ছি। আমরা অতিরিক্ত খাজনা নিচ্ছিনা।

বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তানভীর হোসেন জানান, আমরা খুব তাড়াতাড়ি বাজারে খাজনা আদায়ের একটা তালিকা বোর্ড টানাবো। সেই সাথে ইজারাদারদের সাথে বসে আলোচনাও করে নিব। কেউ যদি সরকারের নির্ধারিত টাকার বেশি খাজনা আদায় করে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

আরো পড়ুন