কুমিল্লার আলেখারচরে ঝুঁকিতে গাড়ি চালকরা, উল্টোপথে ঘুরছে গাড়ি
মো.জাকির হোসেনঃ দেশের প্রধান জাতীয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার আলেখারচরে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যানবাহন চালকরা প্রতিদিনই নিষিদ্ধ ইউ-টার্ন’এ গাড়ি ঘুরাচ্ছে। এতে প্রতিদিন চরম ঝুঁকিতে রয়েছে মহাসড়কে চলাচলরত দ্রুতগতির হাজার হাজার গাড়ি চালকরা। ব্যস্ততম এলাকাটি দিয়ে মহাসড়কের ফোরলেনের যাতায়াতছাড়াও কুমিল্লা মহানগরীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার অন্যতম প্রধান সড়ক এই পথে।
দেশের প্রধান জাতীয় ও ব্যস্ততম মহাসড়কের কুমিল্লার অবস্থান রাজধানী ঢাকা-বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অনেকটা মাঝামাঝি। আমদানী-রপ্তানীর মালামালের সিংহভাগ ট্রাক, কাভার্ডভ্যান,লং ভেহিকেলসহ ভারীযানবাহনে সম্পন্ন হওয়ায় এমনিতেই মহাসড়কটি ব্যস্ততম। তাছাড়া পর্যটন খ্যাত কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, রাঙ্গামাটি , বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রামগড়, কাপ্তাইতে প্রতিদিনই সারাদেশ থেকে ভ্রমনে আসা-যাওয়া করছে লাখ লাখ মানুষ। এরবাইরে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষèীপুর, চাঁদপুর থেকেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে সারাদেশে চলাচল করছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ এসব মানুষদের পরিবহনে রয়েছে আধুনিক বিলাস বহুল বাস, কার, মাইক্রোবাসসহ দ্রুতগতির বিভিন্ন শ্রেনীর যানবাহন। ২০১৬ সালে মহাসড়কটি ফোরলেনে উন্নীত হওয়ার পর অনেকটা গতির প্রতিযোগীতা চলে বিভিন্ন শ্রেনীর যানবাহন চালকদের মাঝে। দ্রুততমসময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে চালকদের এই অসম প্রতিযোগীতায় কখনো কখনো দুর্ঘটনাও ঘটে। হতাহত হচ্ছে অনেকেই। মহাসড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সড়ক ও জনপথ বিভাগ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বাস বা ট্রাক ‘বে’ , ইউটার্ন, ইউটার্ন নিষিদ্ধে সতর্কতামূলক চিহ্ন একে দেয়। সরেজমিন মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বিভিন্নস্থানে ঘুরে দেখা গেছে নির্ধারিত ‘বে’ ছাড়াও মহাসড়কের কোটবাড়ি নন্দনপুর,আলেখারচর বিশ্বরোড, নাজিরাবাজার , কাবিলা, নিমসার , কোরপাই , গোবিন্দপুর,কাঠেরপুল , চান্দিনা, গৌরীপুর,দাউদকান্দিসহ একাধিকস্থানে মালবাহী বিভিন্ন যানবাহন চালকরা অবৈধ পার্কিং করে রাখছে। এতে কখনো কখনো অপেক্ষমান গাড়িকে চলন্ত গাড়ি ধাক্কা দিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত হচ্ছে।
এদিকে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আলেখারচর’এ মহাসড়কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এলাকায় ফোরলেনের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়াতে ইউটার্ন ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও চালকরা তা মানছেনা। আলেখারচর এলাকায় মহাসড়কের ঢাকা-চট্টগ্রাম দু’দিক হয়ে কুমিল্লা মহানগরীতে প্রবেশ ও বের হওয়ারও দুটি সড়ক রয়েছে। ফলে এমনিতেই এই স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঢাকার দিক থেকে আসা গাড়িগুলোর ইউটার্ন আলেখারচর মোড়ে নিষিদ্ধ করে তীর চিহ্ন একে দেয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়,কুমিল্লা আলেখারচর এলাকায় জেলা শহর হয়ে প্রতিদিন অসংখ্য বিভিন্ন শ্রেনীর যানবাহন মহাসড়ক পথে রাজধানী ঢাকা বা চট্টগ্রামসহ সিলেট,ময়মনসিংহসহ বিভিন্নস্থানে যাতায়াত করছে। এসময় আলেখারচর পৌঁছে মহাসড়কে উঠার জন্য যানবাহনের চাপে দীর্ঘসময় অপেক্ষমান থাকতে হয়। একইভাবে মহাসড়কের ফোরলেনের কুমিল্লাগামী অংশ হয়ে আসা অসংখ্য গাড়িও নানা কারণে আলেখারচর এসে নিষিদ্ধ থাকার পরও ইউটার্নে গাড়ি ঘুরাচ্ছে। তিন রাস্তার এই মোড়ে কুমিল্লাগামী ফোরলেন অংশে ইউটার্ন নিষিদ্ধ লিখা সাইনবোর্ড বা সংকেত চিহ্ন সড়ক ডিভাইডারের মাঝখানে নির্দেশনাসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে জুড়ে দেওয়া হলেও কোন চালকই মানছে এই নির্দেশনা। ফলে প্রতিদিনই ফোরলেনের কুমিল্লাগামী অনেক যানবাহন আলেখাচর এসে নিষিদ্ধ থাকার পরও উল্টোপথে গাড়ি ঘুরায়। ফলে ঢাকা.চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা শহর থেকে আসা গাড়িগুলোর গতি থেমে যায়। এতে প্রতিদিনই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। হতাহত হচ্ছেন অনেকেই। দেশের জাতীয় এই মহাসড়কের প্রতিদিন এই অনিয়ম চললেও আলেখারচর মোড় থেকে মাত্র ২’শ মিটার দুরত্বে ময়নামতি হাইওয়ে ক্রসিং থানার ।
শুধু আলেখারচর এলাকায় ফোরলেনে নিষিদ্ধ ইউটার্নে গাড়ি ঘুরাচ্ছেনা,মহাসড়কের ফোরলেনের উভয় অংশে আলেখারচর থেকে ময়নামতি সেনানিবাস পর্যন্ত মহাসড়কের উল্টোপথেও প্রতিদিন চলছে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল , রিক্সাসহ বিভিন্ন শ্রেনীর যানবাহন। এতে দ্রুতগতির যানবাহন চালকদের ঝুঁকিতে চালাতে হচ্ছে গাড়ি। কখনোবা মানুষ রাস্তা পারাপারের সময় এসব যানবাহনের চাপায় প্রান হারাচ্ছে। এই যখন অবস্থা চলছে দিনের পর দিন তখন খেয়াল নেই হাইওয়ে পুলিশের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল একটি সুত্র জানায়, মহাসড়কে নিরাপদ যানবাহন চলাচলে পদুয়ারবাজার , ময়নামতি সেনানিবাস বা সোনারগাঁও এলাকায় হাইওয়ে পুলিশ যেভাবে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে, আলেখারচর মোড়েও তেমনি হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্বপালন করলে নিরাপদে যানবাহন চালকরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। এব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ সঠিক দায়িত্ব পালন করলে নিষিদ্ধ ইউটার্ন ও উল্টোপথে গাড়ি চালানো বন্ধ হবে। দুর্ঘটনায় হতাহতের হাত থেকে বেচেঁ যাবেন পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীরা।
জানতে চাইলে ময়নামতি হাইওয়ে ক্রসিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন,উল্টোপথে গাড়ি চালানোর সুযোগ নাই। এরকম কোন চালক করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।