কুমিল্লায় করোনার মাঝে নতুন আতংক ডেঙ্গু
কুমিল্লায় গত কয়েক দিন ধরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমেছে। তবে নতুন আতঙ্ক হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু জ্বর। চলতি মাসের প্রথম আট দিনে কুমিল্লায় ১৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জুলাই কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে প্রথম ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। বর্তমানে ভর্তি আছেন ৩৪ জন। তাদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় কুমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে আলাদা ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়েছে। ওই কর্নারে আলাদাভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে।
এদিকে এডিস মশা ধ্বংসে মশক নিধক স্প্রে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) কর্তৃপক্ষ। কুসিকের প্রধান নির্বাহী ড. সফিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল ও জেলা সদর জেনারেল হাসপাতলে যারা ভর্তি হয়েছেন, তাদের অধিকাংশ জেলা শহরের বাইরের বাসিন্দা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বেশিরভাগ রোগী ঢাকা কিংবা আশপাশের জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে পানির নমুনা নিয়ে এতে এডিস মশার লার্ভা আছে কি-না পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকার জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনালের একটি জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পায় স্বাস্থ্য বিভাগ। আর কোথাও লার্ভা পাওয়া যায়নি। লার্ভা পাওয়ার পর মশক নিধক স্প্রে করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মশক নিধক ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। আগামী দুই মাস প্রতিরোধক প্রক্রিয়া চলবে।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল কর্মকর্তা সৌমেন রায় জানান, কুমিল্লায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে রোগী ভর্তি বাড়ছে। এ পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৩৬ জনের। তাদের মধ্যে চলতি মাসের গত ৮ দিনেই ১৮ জনের শনাক্ত হয়েছে। বাকি ১৮ জনের গত মাসে (আগস্ট) শনাক্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল এলাকায় এডিস মশার লার্ডা পাওয়া যায়। সেখানে মশক নিধক স্প্রে করার পর দ্বিতীয়বার পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। পরে আর লার্ভা পাওয়া যায়নি।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, সম্প্রতি ডেঙ্গু সংক্রমিত এলাকা রাজধানীর খুব কাছাকাছি হওয়ায় যেকোনও বাহনের মাধ্যমেই এডিস মশা কুমিল্লায় চলে আসতে পারে। ঢাকার সঙ্গে কুমিল্লার যোগাযোগ খুবই ভালো। সেক্ষেত্রে যে কোনোভাবেই এই মশা কুমিল্লায় হানা দিতে পারে।
অন্যদিকে নোংরা পানিতে এডিসের বিস্তার নিয়ে খুব একটা চিন্তা না থাকলেও, জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। আর কুমিল্লা শহরে নির্মাণাধীন ভবনের সংখ্যা বেশি। তাই এসব ভবনে বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে এডিস মশার আশ্রয় হতে পারে বলে ধারণা স্বাস্থ্য বিভাগের।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনকে সঙ্গে নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে। এখন পর্যন্ত জেলায় ৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী ঢাকা কিংবা আশপাশের জেলায় আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন অনেকে।
কুমিল্লা মেডিক্যালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, কুমিল্লা মেডিক্যালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে এখনও সাত পুরুষ ও এক নারী ভর্তি রয়েছেন। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধিতে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মেডিক্যালের সপ্তম তলায় মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়েছে। এই কর্নার আলেদাভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ভর্তি করা হবে।