১৫ বছর ধরে ঝুলে আছে দেবিদ্বার পৌরসভার নির্বাচন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে ঝুলে আছে দেবিদ্বার পৌরসভার নির্বাচন। ফলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির বদলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পৌর প্রশাসক’র দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে সরকারের কোটি টাকায় নির্মিত পৌরসভার দ্বিতল ভবনটি পড়ে আছে মুখ থুবড়ে। ভবনটি এখন গরু-ছাগলের বিচরণ ক্ষেত্রসহ বখাটেদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। ওই ভবনের পরিবর্তে পৌরসভার প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে সদরের অবস্থিত পৌর গণপাঠাগারে। এতে একদিকে যেমন পৌরভবন শহরবাসীর সেবায় কোনো কাজে আসছে না তেমনি পৌরসভার গণপাঠাগারটির কার্যক্রমও চলছে খুঁড়িয়ে। লক্ষ টাকার বইয়ের নেই কোন হদিস।
ভুক্তভোগী একাধিক পৌরবাসী জানান, পৌরসভা প্রতিষ্ঠার একযুগ পার হলেও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না পৌরবাসী। নির্দিষ্ট জায়গায় ডাস্টবিন না থাকা, ময়লা-আর্বজনা, পয়:বর্জ্য পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা, লাইটিং ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এছাড়াও সার্টিফিকেট উত্তোলন, জন্মমৃত্যু নিবন্ধন, ইমারত নির্মাণের অনুমতিসহ বিভিন্ন কাজে পৌর অফিসে হয়রানীর শিকার হতে হয়। নির্বাচিত জন প্রতিনিধি থাকলে এ দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
জানা গেছে , প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দেবিদ্বার পৌরসভার গুনাইঘর এলাকায় দৃষ্টিনন্দন করে ‘দেবিদ্বার পৌর ভবন’ নির্মাণ করে ২০০২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে পৌরসভার কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরবর্তীতে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে যাতায়াত সমস্যা ও নাগরিক সেবার সুবিধার অজুহাতে ওই পৌর ভবন তালাবদ্ধ রেখে পৌরসভার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে দেবিদ্বার মাজেদা আহসান মুন্সী পৌর গণপাঠাগারে। এতে সরকারি অর্থে নির্মিত পৌর ভবনটি গত প্রায় ৭ বছর ধরে অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। এখন পুরো ভবন জুড়ে গরু-ছাগলের বিচরণ ও বখাটেদের আড্ডাস্থলে পরিণত হওয়াসহ নষ্ট হচ্ছে দরজা-জানালা ও মূল্যবান আসবাবপত্র।
অপরদিকে পৌর গণপাঠাগারে পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনার কারণে পাঠাগারের কার্যক্রম কাগজে-কলমে চালু থাকলেও বাস্তবে তা বন্ধ রয়েছে। মাসের ৩০দিনেই অনুপস্থিত থাকে লাইব্রেরিয়ান । তাছাড়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশাসক হিসেবে এ পৌরসভার দায়িত্ব পালন করে আসেছেন।
পৌরসভা অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় দুই ব্যক্তি পৌরসভার সীমানা সংক্রান্ত এবং পৌরসভা বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় পৌরসভা প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৫ বছর অতিবাহিত হলেও পৌর নির্বাচন আলোর মুখ দেখছে না।
অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, ২০০৭ সালে বড় আলমপুর, ভিংলাবাড়ি, ফতেহাবাদ ও মরিচাকান্দা এ চারটি গ্রাম পৌরসভার অন্তর্ভূক্ত না করতে সুপ্রিমকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন স্থানীয় আবদুল মতিন। এরপর ২০০৯ সালের ১৭ মে পৌরসভা বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে আরেকটি মামলা দায়ের করেন স্থানীয় আছাদুজ্জামান পাঠান। এই দুটি মামলার একটি নিষ্পত্তি হলেও এখনোও বিচারাধীন রয়েছে আরও একটি।
একাধিক সূত্র জানায়, স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলে ত্রিমুখী গ্রপিং ছাড়াও কমপক্ষে ৭/৮ জন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী আছেন। এতে এ পৌরসভার প্রথম মেয়র কে হবেন এ নিয়ে দলে চলছে টানাপোড়েন। তাই দলীয় কোন্দল নিরসন না করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মতো বিএনপি দলীয় প্রার্থীর কাছে দলের প্রার্থীর চরম ভরাডুবির আশঙ্কায় কৌশলে নির্বাচনে আগ্রহী হচ্ছে না ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা। ফলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় এ পৌরসভার কাঙ্খিত উন্নয়নও হচ্ছে না।
পৌর সম্ভব্য মেয়রপ্রার্থী হাজী আবুল কাশেম ওমানী জানান, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকলে পৌরবাসী আরও উন্নয়নের মুখ দেখতো। ড্রেনেজ, বৈর্জ্য, পয়:নিষ্কাশন ও রাস্তাঘাটসহ যাবতীয় উন্নয়ন দ্রুত ত্বরান্নিত হতো। মামলাগুলো যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তি করে নির্বাচন দিতে কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি করছি।
কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল জলিল জানান, দেবিদ্বারের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে পৌর নির্বাচন একান্ত জরুরী। নির্বাচন হলে পৌরবাসীর সকল সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান দেওয়া সম্ভব হতো। তাই পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে নির্বাচন হওয়া খুব জরুরী।
পৌর প্রশাসক ও দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবীন্দ্র চাকমা বলেন, পৌরভবনটি উপজেলা সদর থেকে দূরে হওয়ায় স্থানীয়দের যাতায়াতের সমস্যাসহ নানাবিধ কারণে অস্থায়ীভাবে গণপাঠাগার ভবনে পৌরসভার কাজ-কর্ম চালানো হচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সহসা পৌরসভার স্থায়ী ভবনে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া চলমান মামলা নিষ্পত্তি হলে পৌরসভার নির্বাচন হতে আর কোন বাঁধা থাকবে না।
উল্লেখ্য যে, দেবিদ্বার পৌরসভার আয়তন ২৩৯.১৪ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৪ লাখ ২৭ হাজার ৯১৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২ হাজার ৩৮৬ জন এবং নারী ২ লাখ ২৫ হাজার ৫২৭ জন। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১ হাজার ৮৪৮ জন মানুষ বসবাস করছে। এ পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪৪ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৪০ জন এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ২৮ হাজার ১০৪ জন।