কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলছে, স্থগিত থাকছে পরীক্ষা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি বিপুপ্তির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বন্ধ হওয়া আবাসিক হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দুর্গাপূজার ছুটি শেষের একদিন আগে রোববার থেকে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও আগের ঘোষণা অনুযায়ী ১০ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত সব পরীক্ষা স্থগিতই থাকছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরী জানান।
শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সভা শেষে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোববার বেলা ১২টায় সব আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে। শুধুমাত্র বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থীরাই হলে উঠতে পারবেন।
আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিজস্ব পরিবহন ব্যতীত অন্য সব ধরনের পরিবহন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না বলেও জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে হলগুলোতে আবাসিক শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাও থাকছেন। নানা জটিলতায় অনেকে এখনও আবাসিক শিক্ষার্থীর বৈধতা পাননি। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে ওইসব শিক্ষার্থীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, “হলে ওঠার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই আবাসিকতা থাকতে হবে। রোববার ১২টা থেকেই শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারবেন।
“তবে যাদের আবাসিকতা নেই কিন্তু আগে হলে থাকতেন, এমন শিক্ষার্থীরা হলের অফিস থেকে আবাসিক ফরম নেবেন এবং ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে হলে উঠবেন। আবাসিকতার আইডি কার্ড করার জন্য আমরা দেড় মাস সময় দেব।”
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের প্রভোস্ট জিল্লুর রহমান বলেন, “হলে যাদের আবাসিকতা নেই তাদেরকে সাময়িক পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। আবাসিকতার জন্য ফরম পূরণ করে হলে উঠতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে।”
এদিকে, পরীক্ষা স্থগিত রেখে হল খুলে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, হল খুলে দিতে পারলে প্রশাসন কেন পরীক্ষা নিতে পারবে না?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে খেয়াল রাখছি। যে কাজটি তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে সেটিই বিশ্ববিদালয় প্রশাসন করবে।”
সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের ২৮ মে মো. ইলিয়াস মিয়াকে সভাপতি ও রেজাউল ইসলাম মাজেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর একই বছরের ২৫ নভেম্বর ১৬১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।
এক বছরের জন্য গঠিত কমিটি প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে চলেছে। ওই কমিটির নেতাদের অনেকের এখন আর ছাত্রত্ব নেই; অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছেন। কেউ আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করছেন। সভাপতি ইলিয়াস মিয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, তারও ছাত্রত্ব নেই। তিনি ১৫ বছর ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে একা একটি কক্ষে থাকছেন বলেও অভিযোগ আছে।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার রাত ১১টা ৪৯ মিনিটে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফেইসবুক পেইজে সংগঠনের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মেয়াদোত্তীর্ণ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আধা ঘণ্টার মধ্যেই ছাত্রলীগের ফেইসবুক পেইজ থেকে তা আবার সরিয়ে নেওয়া হয়।
আর এতেই ‘বিভ্রান্তির’ সূচনা ঘটে। ‘বিলুপ্ত’ কমিটির বিরোধীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, প্রেস বিজ্ঞপ্তি সঠিক, কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। আবার ‘বিলুপ্ত’ কমিটি বলছে, এটি ভুলে চলে এসেছে। সামনে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দেওয়া হবে।
এর অংশ হিসেবে পরদিন ১ অক্টোবর দুপুর আড়াইটার দিকে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতা এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহীর অনুসারীরা অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে সমাবেশ ও হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
এর পর পরই ছাত্রলীগের ‘বিলুপ্ত কমিটি’র সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের অনুসারীরা ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রামদা, ছেনিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হাজির হয়। এতে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ক্যাম্পাসে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ক্যাম্পাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ২ অক্টোবর থেকে সব হল সিলগালা ও পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তখন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটির বিষয়ে জানার জন্য চেষ্টা করেও সংবাদমাধ্যমগুলো ছাত্রলীগের সভাপতির বক্তব্য জানতে পারেনি। বিভ্রান্তি দূর করতে ছাত্রলীগ কোনো বিবৃতিও দেয়নি। এ বিষয়ে তারা ছিলেন চুপ।
চার দিন পর ৩ অক্টোবর ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় সাংবাদমাধ্যমকে বলেন, “কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বলবৎ আছে এখনও। কমিটি এখনও বিলুপ্ত হয়নি। চলতি মাসের শেষের দিকে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে কমিটি তুলে দেওয়া হবে। সেই পর্যন্ত বর্তমানরাই দায়িত্ব পালন করবেন।”
এরপর থেকে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করে।