কুমিল্লায় আ.লীগের সম্মেলনের কার্ডধারীদের হাতে পিস্তল-রাইফেল!

কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন চলাকালে বাইরে অস্ত্রের মহড়া, গুলি ও ককটেলবাজির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনায় গতকাল রোববার রাত ৮টা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। তবে ঘটনাস্থলের আশপাশের সড়ক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে থাকা সাতটি সিসিটিভি ফুটেজ ও সংগৃহীত ছবি দেখে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। আইন প্রয়োগকারী একটি সংস্থা দাবি করেছে- এরই মধ্যে সাকিব ও মীর সামদানি নামের দু’জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একাধিক নেতা জানান, সাকিব ও মীর সামদানি স্থানীয় এমপি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের অনুসারী। তাদের গলায় ফিতায় ঝোলানো সম্মেলনের স্বেচ্ছাসেবক টিমের কার্ড ছিল।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নজরদারি ও নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে এভাবে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলির ঘটনায় গতকালও নগরজুড়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার ছয় বছর পর ২০১৭ সালের ২২ জুলাই সম্মেলন ছাড়াই প্রথমবারের মতো মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৭১ সদস্যের ওই কমিটিতে কুমিল্লা সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারকে সভাপতি এবং বর্তমান সিটি মেয়র আরফানুল হক রিফাতকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটিতে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের মেয়ে ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে সহসভাপতি করা হয়। তবে নেতৃত্বের বিরোধের কারণে স্থানীয়ভাবে এমপি বাহার ও এমপি সীমাকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে একই মঞ্চে দেখা যায়নি। এতে পুরোনো সেই আফজল-বাহার দ্বন্দ্ব জিইয়ে থাকে। সর্বশেষ মহানগর কমিটি গঠন নিয়ে দু’পক্ষে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রাজনীতির মাঠ গরম হয়ে ওঠে। এমপি সীমা ও তার অনুসারীরা ঘোষণা দেয় তারা যে কোনো উপায়ে সম্মেলনস্থলে যাবে। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দেখা দেয় উত্তেজনা। এর মধ্যে গত শনিবার অনুষ্ঠিত দলটির মহানগর সম্মেলন মঞ্চের বাইরে এমন ঘটনায় কেন্দ্রীয় নেতারা বিব্রত হন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। প্রধান অতিথি ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতা বিশেষ অতিথি ছিলেন। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য চলাকালে সম্মেলন এলাকার বাইরে ককটেল বিস্ম্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা।

এ ঘটনার ৪১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে গতকাল এমপি আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, ছবি গণমাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে। এসব দেখে অস্ত্রবাজদের শনাক্ত করা হোক। তারা যদি আমার পক্ষের কেউ হয় তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

একাধিক ফটোসাংবাদিক জানান, অস্ত্র উঁচিয়ে ফাঁকা গুলি করার সময় ছবি তুলতে গেলে নেতাকর্মীর তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। সমকালের ফটোসাংবাদিক এন কে রিপনের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে মেমোরি কার্ড রেখে শনিবার রাতে ক্যামেরা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অস্ত্রবাজদের অনেকে মুখোশ ও হেলমেট পরিহিত ছিল। এ সময় অস্ত্র হাতে একে অপরকে অস্ত্র চালানোর কৌশলও দেখিয়ে দিতে দেখা যায়। তবে এসব অস্ত্রবাজি, ককটেল বিস্ম্ফোরণের ঘটনার জন্য একপক্ষ আরেক পক্ষকে দায়ী করছে।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেন, এমপি সীমা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। তাঁকে সম্মান জানিয়ে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে তিনি সম্মেলনস্থলে না ঢুকে পরিকল্পিতভাবে ঝামেলা পাকাতে চেয়েছেন। অস্ত্রবাজি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সম্মেলন মঞ্চে ছিলাম, বাইরে কী ঘটেছে, কিংবা কারা ঘটনা ঘটিয়েছে- তা জানা নেই। তবে আমাদের কেউ এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা নয়।’

কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হানিফ সরকার জানান, অস্ত্রবাজি, গুলি ও ককটেল বিস্ম্ফোরণের ঘটনায় রোববার রাত পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি, এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি রাজেশ বড়ূয়া জানান, ঘটনাস্থল ও আশপাশের অন্তত সাত স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ছবি দেখে তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান জানান, অস্ত্রবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল তাদের আমরা খুঁজছি। অস্ত্রধারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

সূত্রঃ সমকাল

আরো পড়ুন