কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনে চতুর্মুখী লড়াই
দলীয় প্রার্থী নেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) উপনির্বাচনে। তবে এরপরও কুসিক নির্বাচনে ‘দলের সমর্থন পেয়েছেন’ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহার উদ্দিন বাহারের মেয়ে ডা. তাহসিন বাহার সূচনা। মাঠে আছেন মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নূরুর রহমান মাহমুদ তানিম।
এদিকে বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলটি থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতা মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার মাঠে আছেন। বিএনপির একটি অংশ আছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ধারণা করা হচ্ছে, মনোনয়ন বাতিল না হলে এবার কুসিকে লড়াই হবে চতর্মুখী।
কুসিক উপনির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল গত মঙ্গলবার ১৩ ফেব্রয়ারি। এই দিন কুসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে এই চারজনই মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। চারজনই ভোটের মাঠেও আছেন।
সম্প্রতি কুসিক মেয়র পদে উপনির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় একক প্রার্থী হিসেবে তাহসিন বাহারের নাম ঘোষণা করা হয়। ফলে সিটির নির্বাচনে আলোচনায় থাকা বাহারের অনুসারী মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম সেলিম, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ, যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ নূরুর রহমান, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, আদর্শ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান।
অন্যদিকে সাংসদ বাহারের বিরোধীরা বলছেন, তাঁরা এখনো ঠিক করেননি কোন প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন। যদিও তাহসিন বাহারকে বাদ দিলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকেন আর একজন। তিনি নূরুর রহমান মাহমুদ।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভিপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নূরুর রহমান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি প্রভাবশালী নেতারা আমাকে সমর্থন দেবেন।’ সূত্র বলছে, কুমিল্লার প্রভাবশালী ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আফজল খানের মেয়ে সাবেক সাংসদ আঞ্জুম সুলতানা সীমা, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সফিকুল ইসলাম শিকদার, সাবেক জিএস জাকির হোসেন, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কবিরুল ইসলাম শিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমানসহ অনেক নেতা তাঁর পাশে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নূরুর রহমান মাহমুদ বলেন, ‘নগরবাসীর সমর্থনের পাশাপাশি বঞ্চিত অনেক নেতা-কর্মীর সমর্থন রয়েছে আমার প্রতি।’
এ প্রসঙ্গে সাবেক সাংসদ সুলতানা সীমা বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে বসে প্রার্থী চূড়ান্ত করব। তখন আপনাদের বিস্তারিত জানাব।’
বাহারের মেয়ে তাহসিন বাহার কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কিনেছি। নগরবাসীর সমর্থন নিয়ে আমি মেয়র নির্বাচিত হলে স্বচ্ছতা ও সততা নিয়ে কাজ করব।’
বিএনপি নেই, আছেন বহিষ্কৃত নেতা
এদিকে বিএনপি এই ভোটে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, এ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। আগামী কুমিল্লা সিটি নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না বা কাউকে সমর্থন দিচ্ছে না।
তবে মাঠে আছেন নেতা কুসিকের সাবেক মেয়র ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল হক সাক্কু। তিনি বলেছেন, ‘আমি দুইবারের মেয়র ছিলাম। গতবার আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফেল করানো হয়েছে। এবার বাকি সময়ের জন্য আবার নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে।’
আর কুমিল্লা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের শ্যালক বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, ‘গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল অংশ নেয়নি। এখনো নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা নেই। তারপরও সাংবিধানিক ব্যবস্থা ঠিক রাখার স্বার্থে আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেব।’
তফসিল অনুযায়ী কুসিক উপনির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ ফেব্রুয়ারি এবং ৯ মার্চ ইভিএমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।