কুমিল্লায় টনসিল অপারেশন করতে গিয়ে লাশ হলো মিম
কুমিল্লায় টনসিল অপারেশন করতে গিয়ে মিম নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর হাসপাতালে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত চিকিৎসকসহ কর্মকর্তারা।
রোববার (২৩ জুন) রাত সাড়ে ১১টায় নগরীর হেলথ অ্যান্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, অপারেশন থিয়েটারে অতিরিক্ত অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার কারণে হার্ট ব্লক হয়ে মারা গেছে মীম। নিহত মিম আকতার (১৫) ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অলুয়া কৃষ্ণপুর এলাকার মো. বিল্লাল হোসেনের মেয়ে। সে কংসনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, কোরবানির ঈদের এক সপ্তাহ আগে গলায় টনসিলের ব্যথা নিয়ে মায়ের সঙ্গে কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা এলাকার ফেইথ মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন চিকিৎসক মো. জহিরুল হকের কাছে যায় মিম। তারপর চিকিৎসক জহিরুল হকের পরামর্শে গলার কিছু পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেখালে তিনি অপারেশনের কথা বলেন।
সেই অনুযায়ী রোববার (২৩ জুন) বিকেলে মিম তার মা লিপি আক্তারের সঙ্গে টনসিল অপারেশনের জন্য কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা এলাকার ফেইথ মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন চিকিৎসক মো. জহিরুল হকের কাছে আসে। তারপর অপারেশনের খরচ বাবদ ১৪ হাজার টাকা লাগবে বলে জানান চিকিৎসক।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চিকিৎসক জহিরুল অপারেশনের জন্য মিমকে একই এলাকার ফেইথ মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারের অপর পাশে অবস্থিত হেলথ্ অ্যান্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পরপরই মিমের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। ১০ মিনিট পর চিকিৎসক জহিরুল বের হয়ে স্বজনদের বলেন মিম হার্ট অ্যাটাক করেছে। তাকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিতে হবে। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় মিম।
মিমের মা লিপি আক্তার বলেন, আমার মেয়ে সুস্থ স্বাভাবিক ছিল। গলায় ছোট একটা টনসিল হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে জহির ডাক্তার বের হয়ে বলে আমার মেয়ে হার্ট অ্যাটাক করেছে। তারপর তারাই আমার মেয়েকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এর আগে পথে আমার মেয়ে মারা গেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। সরকারের কাছে, প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই।
মিমের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পর জহির ডাক্তার আমারে অপারেশনের টাকা ফেরত দিতে চান। আমাকে বলছে- আমরা যত টাকা চাই উনি আমাদের দেবেন। টাকা দিয়ে আমার মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছেন। আমরা রাজি না হওয়ায় জহির ডাক্তার আমার মেয়ের পরীক্ষার রিপোর্টসহ যাবতীয় কাগজ নিয়ে হাসপাতাল তালা মেরে পালিয়ে গেছেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমরা থানায় অভিযোগ করব। সিভিল সার্জন অফিসে অভিযোগ করব।
এদিকে ঘটনার কিছু সময় পরই ফেইথ মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টার এবং হেলথ্ অ্যান্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালের কর্মকর্তারা হাসপাতালে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে চিকিৎসক জহিরুল হকের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে, এ ঘটনা পর ৯৯৯-এ কল পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ। নিহত মিমের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে।