সাব্বিরের মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি মাকেও, দাফন ৪০ মিনিটে
বাগেরহাটের চিতলমারীর একাদশ শ্রেণির ছাত্র সাব্বির ঢাকায় বেড়াতে এসে ছাত্র আন্দোলনে শহিদ হয়। বাইরে ঘুরতে যাবে বলে ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়। ১৯ জুলাই উত্তরার ৭ নং সেক্টরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সে।
সাব্বিরের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে পুলিশি পাহারায় মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যে তার দাফন সম্পন্ন করতে বলে। ছেলের মুখ তার মাকে পর্যন্ত দেখতে দেয়নি।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম নিহত সাব্বিরের বাবা ও বোনকে সঙ্গে নিয়ে এসব কথা বলেন।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ এবং আব্দুল্লাহ আল নোমান।
তাজুল ইসলাম বলেন, থানা থেকে ফোন করে নিহত সাব্বিরের দুলাভাইকে পুলিশ বলে এখনই মরদেহ নিয়ে যান, দেরি হলে মরদেহ দেওয়া হবে না। তখন দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তার মরদেহ নিয়ে বাগেরহাটের চিতলমারীর উদ্দেশে রওনা হয়। রাস্তায় লাশের গাড়ি বার বার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের হামলার শিকার হয়। অ্যাম্বুলেন্সের গ্লাস ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। রাস্তায় পুলিশ গাড়ি থামিয়ে ভিতরের লাইট বন্ধ করে গোপনে নিয়ে যেতে বলে। পুলিশের নির্দেশ মতো চুপচাপে মরদেহ সাব্বিরের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। সেখানে দেখা গেলো পুলিশি পাহারা, মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যে মরদেহ দাফন করতে বলা হলো। ছেলের মুখ তার মাকে পর্যন্ত দেখতে দেয়নি।
চিফ প্রসিকিউটর আরো বলেন, রংপুরের আলোচিত আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড এবং আশুলিয়া হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলাসহ উত্তরা, যাত্রাবাড়ীর নির্মম হত্যাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করে বিচারের জন্য নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে যে, কত দ্রুত ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা যায় তার ওপর।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন টিমের কার্যক্রম চলমান থাকলেও ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি না থাকায় বিচার কার্যক্রম থমকে আছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার গত ১৩ জুলাই অবসরে যান। অন্য এক সদস্য বিচারপতি হাইকোর্টে ফিরে গেছেন। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে কোনো বিচারপতি নেই।
তবে এক সপ্তাহের মধ্যে বিচারক নিয়োগ দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের আশা করেছেন বলে গত ১৫ সেপ্টেম্বর জানান চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম।
প্রেস বিফ্রিংয়ে সাব্বিরের বাবা সহিদুল বলেন, আমার একমাত্র ছেলে সাব্বির। ঘটনায় দিন বার বার তাকে ফোন দিয়ে রুমে যাওয়ার জন্য বলি। দেশের পরিস্থিতি ভালো না, সে বললো সন্ধ্যা ৬টার পর যাবে। এরপর শুনতে পাই আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। এটা শুনে আমি পাগলের মতো হয়ে গেছি।