একসঙ্গে এইচএসসি পাস করলেন ৪৩ বছর বয়সের স্বামী ও ৩৩ বছরের স্ত্রী

এবার শিক্ষার যে কোনো বয়স নেই, তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন কিশোরগঞ্জের মো. বদিউল আলম (নাঈম) ও শারমীন আক্তার দম্পতি। নিজেদের প্রবল আগ্রহের ওপর ভর করে লোকলজ্জার ভয় দূরে ঠেলে মাঝ বয়সে পা দিয়ে একসঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এই দম্পতি। মো. বদিউল আলমের বয়স এখন ৪৩ এবং তার স্ত্রী শারমীন আক্তারের ৩৩ বছর।

গতকাল মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে উত্তীর্ণ হওয়ার খবর পেয়ে যেন আনন্দের বন্যা বইছে এই দম্পতির মাঝে। বাবা-মায়ের এমন সাফল্যে খুশির জোয়ারে ভাসছে ছেলে-মেয়েরাও। চলতি বছর বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঢাকার অধীনে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন এ দম্পতি। মো. বদিউল আলম পেয়েছেন জিপিএ-৪.২৯ এবং শারমীন আক্তার পেয়েছেন জিপিএ-৪.৫০।

এর আগে, ২০২২ সালে নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল (এসএসসি) পাস করেন এ দম্পতি। তখন মো. বদিউল আলম নাঈম পেয়েছিলেন জিপিএ-৪.৯৫ ও শারমীন আক্তার পেয়েছিলেন জিপিএ-৫। বিয়ের আগে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দিতে না পারলেও কয়েকবার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যবসা ও সাংসারিক চাপে শেষ পর্যন্ত পড়ালেখাটা হয়ে ওঠেনি। তবে মনের জোর এবং স্বজনদের উৎসাহে পড়াশোনা করে এসএসসি উতরানোর পর নাঈম-শারমীন দম্পতি এবার এইচএসসিতেও সাফল্য অর্জন করলেন হাতে হাত রেখে।

জানা যায়, ২০২০ সালে তৎকালীন কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম লুনা ও বড় মেয়ের উৎসাহে নতুন করে পড়াশোনা করার আগ্রহ জাগে তাদের। নয়তো নতুন করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি মোটেও সম্ভব ছিল না এ দম্পতির। ওই বছরই স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে ভর্তি হন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদরাসায়। মো. বদিউল আলম কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের দ্বাড়িয়াকান্দি গ্রামের মো. কনু মিয়া ও মোছা. সাজেদা দম্পতির ছেলে। পেশায় তিনি একজন ঠিকাদার। ১৯৯৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় তার অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তখন।

এদিকে শারমীন আক্তার কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার মঙ্গলকান্দি গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেন ও মায়া বেগম দম্পতির মেয়ে। ২০০৮ সালে নবম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় মো. বদিউল আলম নাঈমের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও বড় মেয়ে বুশরা আক্তার বীথি গর্ভে এসে যাওয়ায় আর পরীক্ষা দিতে পারেননি। তখন থেকেই লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় তার।

ঠিকাদার মো. বদিউল আলম ও শারমীন আক্তার দম্পতির সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান। বড় মেয়ে বুশরা আক্তার বীথি এবার স্থানীয় ছয়সূতী ইউনিয়ন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও মেজো ছেলে রেদোয়ান আলম সিয়াম একই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সবার ছোট মেয়ে তাসনীম (৫) এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি।

এদিকে লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম হায়দার বলেন, বদিউল আলম ও শারমীন আক্তার দম্পতি এ বছর আমাদের কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেছেন। মাঝ বয়সে এসে ব্যবসা-সংসার সামলিয়েও তারা দুজনে যে নজির গড়েছেন, এটা দেশবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তারা কলেজে নিয়মিত ছিলেন এবং লেখপড়ায়ও মনোযোগী ছিলেন। আমি প্রায়ই ক্লাস রুমে গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিতাম। তাদের সাফল্যে আমরা খুবই খুশি।

আরো পড়ুন