কুমিল্লায় একজন পঙ্গু রাসেল ও তার সংগ্রামী জীবন
জাহাঙ্গীর আলম ইমরুলঃ শৈশবে ট্রেনে কাটা পড়ে দুটি পা ও একটি হাত হারিয়ে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন রাসেল। এর কয়েক বছরের মাথায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবাকে হারিয়ে কৈশোরে ভাসেন দুঃখের সাগরে।
পঙ্গুত্ব আর দারিদ্র্যের যাতাকলে পড়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বঞ্চিত হন রাসেল। তারপরও থেমে থাকেননি রাসেল। প্রতিজ্ঞা করলেন কারো কাছে হাত না পাতার। কিন্তু উপার্জনের তেমন কোন পথ খোলা নেই তার সামনে। তাই উপায়ান্তর না দেখে একটি মাত্র হাতের উপর নির্ভর করেই তিনি প্রতিদিন রাস্তায় নামেন অটো রিক্সা নিয়ে।
অনেক সুস্থ্য সবল মানুষও যখন সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও উপার্জনের পথ হিসেবে বেছে নেয় ভিক্ষাবৃত্তি অথবা কোন অনৈতিক পন্থা। তখন দু’পা, এক হাত হারানো পঙ্গু রাসেল প্রমাণ করলেন ভিক্ষাবৃত্তি না করেও মাথা ঊঁচু করে বেঁচে থাকা যায়। ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা চালিয়ে উপার্জন করে, তা দিয়ে পরিবার চালান রাসেল।
পঙ্গুত্ব নিয়েও ভিক্ষাবৃত্তি না করে একটু পরিশ্রমের দ্বারা সমাজে মাথা উঁচু করে চলা যায় তাই প্রমাণ করলেন কুমিল্লার এক হাত, দু’পাহীন পঙ্গু রাসেল।
রাসেলের জন্মস্থান জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলায়। দরিদ্র্য বাবার কর্মের সূত্র ধরে বিগত বিশ বছর যাবৎ তাদের পরিবার কুমিল্লা শহরে বসবাস করে আসছে। বর্তমানে রাসেলের পরিবার নগরীর ধর্মপুর রাস্তার পাশে একটি টিনের ঘরে ভাড়ায় বসবাস করেন।
বাবা মারা যাবার পর সংসারের সকল দায় দায়িত্ব চাপে রাসেলের উপর। এর পর থেকেই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করে চলেছেন পঙ্গু রাসেল। মা আর ছোট ছোট ভাই-বোনদের পড়াশোনা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করছেন, বিয়ে দিয়েছেন বড় বোনকে। রাসেলের মা বলেন, ছেলে কারো কাছে হাত না পেতে কঠোর পরিশ্রম করে তাদের মুখে আহার তুলে দেয় এটাই তার কাছে বড় আনন্দ আর এটাই তার একমাত্র শান্তনা।
এতো কষ্টে উপার্জন করে সংসারের ঘানি টানছেন অথচ তার চোখে মুখে কোন ক্লান্তির ছাপ নেই। সদা হাস্যোজ্জ্বল রাসেল তারপরও কারো কাছে হাত পেতে বেঁচে থাকতে চান না। রাসেলের জীবনযুদ্ধ ও সততায় মুগ্ধ তার প্রতিবেশিরা। তারা বলেন, রাসেল অশিক্ষত আর পঙ্গু হলেও তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
তবে রাসেল জানলেন, তার পেশাটি তার জন্যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যদি কোন দিন হাতে কিছু পুঁজি হয় তাহলে এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশা ছেড়ে কবুতর-হাঁস-মুরগীর খামার করার স্বপ্ন দেখেন রাসেল।
রাসেলের বিষয়টি কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ আবুল ফজল মীর এর নজরে আনলে তিনি রাসেলকে সহায়তার হাত বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আগে আমাকে রাসেলের চাহিদাগুলো জানতে হবে। তার পর আমরা তার চাহিদা বুঝে যথাযথ পদক্ষেপ নেব।
পঙ্গু রাসেলের মতো উদ্যমী যুবকদের দেখে বেকার যুব সমাজ উদ্বুদ্ধ হবে এমনটাই মনে করছেন সমাজের বিশিষ্টজনেরা। সমাজের প্রতিটি রাসেলের ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ একটি কর্মসংস্থান নিশ্চিতে সরকার আন্তরিকতাই হবে মে দিবসের স্বার্থকতা।