কুমিল্লার যেখানে মানুষ বেচা-কেনার হাট বসে !
ডেস্ক রিপোর্টঃ কাজের প্রয়োজনে এখন কুমিল্লার বিভিন্ন হাটবাজারে মানুষ বেচা-কেনা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাজের সন্ধানে মানুষ দলে দলে এ সকল হাট-বাজারে বিক্রি হবার জন্য আসে। এরা বিক্রয় হয় দিন, সপ্তাহ কিংবা মাস চুক্তিতে। এ হাটে মানুষ বেচা-কেনা নিয়ে চলে দরকষাকষি। দু’পক্ষের মধ্যে বেচা-কেনা তথা মজুরীর ব্যাপারে দফা-রফা হবার পর শেষ হয় বিক্রি পর্ব। বিক্রি হওয়া এই মানুষগুলো অবস্থা সম্পন্ন জোতদার, মহাজন, অবস্থা সম্পন্ন কৃষকের সাথে পিছু পিছু তাদের বাড়ি যায়। সাথে থাকে নিজের দৈনন্দিন ব্যবহারের কাপড়ের পুটলি, ধান কাটার কান্তে, কাটা ধান বহনের উপযোগী এক ধরনের বাঁশের লাঠি। মানুষ বেচা-কেনার এ হাটে সুঠামদেহী কম বয়স্ক লোকের দাম বেশি, শারীরিক ভাবে দুর্বল, রোগা আর বয়স্কদের দাম তুলনামূলক ভাবে এখানে কম।
কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার, চৌয়ারা বাজার, সুয়াগঞ্জ বাজার, বিজয়পুর বাজার, লালমাই বাজার, বুড়িচং উপজেলার নিমসার বাজার, চান্দিনা বাজারসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাজার সমূহে ধান কাটা মৌসুমে ও ধানের চারা রোপণের মৌসুমে বেচা-কেনার হাট বসে। এ সকল বাজারের মধ্যে পদুয়ার বাজার, শুয়াগঞ্জ বাজার, চৌয়ারা বাজার, নিমসার বাজার, লালমাই বাজার, বাঘমারা বাজার মানুষ বেচা-কেনার জন্য বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। ধান কাটা ও ধানের চারা রোপণের মৌসুমে প্রতিদিনই এ সকল বাজারে শ্রম বিক্রির জন্য ভিড় করে শত শত শ্রমজীবী মানুষ। পণ্যের মত বিক্রি করে তাদের শ্রম। ধানকাটা ও ধানের চারা রোপণের মৌসুমে এ শ্রমজীবীদের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময়টায় মজুরী ও বাড়ে সমান তালে। ভর মৌসুমে প্রতিভাবান কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরী নির্ধারণ হয় ৬০০শ‘ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়। এর সাথে তিন বেলা খাবার। মৌসুমের কাজ কমে আসলে তা নেমে আসে ৪৫০ টাকায়। বাজারে বিক্রি হতে আসা এ সব শ্রমজীবী মানুষগুলো যে দিন নিজকে বিক্রি করতে পারে না, সেদিন তাদের রাত কাটে বাজারের কাছাকাছি কোন মসজিদ, মাদ্রাসা কিংবা স্কুল ঘরের বারান্দায়। কখনো আধা পেটে বা কখনো উপোষ রাত কেটে যায় তাদের। সকাল হতেই আবার বিক্রি হবার আশায় ছোটাছুটি।
কুমিল্লা উল্লেখিত হাট বাজার গুলোতে ঘুরে দেখা যায়। এ সাল হাট-বাজারে শ্রম বিক্রি করতে আসা অভাবী মানুষদের মধ্যে বেশির ভাগই রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও ঠাকুরগাঁও জেলায়। পদুয়ার বাজারে কথা হয় রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার ময়রাবাড়ি গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে রহিদুল (২২) এবং একই উপজেলার চিড়িয়াখাল গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের চেলে শমসের আলী (২৫) এর সাথে। তারা জানায়, ক‘দিন আগে তাদের এলাকায় তামাক কাটার কাজ ছিল। এখন এলাকায় কোন কাজ নেই। নিজদের আর্থিক অবস্থা ভাল না হবার কারণে তারা কাজের আশায় ছুটে এসেছে এ এলাকায়। তাদের জমি-জমা না ছিল তা তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে নদী গর্ভে চলে গেছে। বিজয়পুর বাজারে কথা হয় ময়মনসিংহ জেলার ধোরার উপজেলার কাউসার কান্দি গ্রামের শেখ কাশেম আলীর ছেলে শেখ রজ্জব আলী (৩৫) ও সুরুজ আলীর ছেলে রফিক (৩০) এর সাথে। এ এলাকায় তারা পাঁচদিন আগে এসেছে। গত ক‘দিন লালমাই এলাকার এক গৃহস্থের ধানের চারা রোপণ করেছে। তাদের নিয়োগ দাতা ঐ গৃহস্থ দিনে ও রাতে ৩ বেলা খেতে দিয়েছ। রাতে শোবার জন্য কাঁথা বালিশ দিয়েছে বলে তারা জানায়। তাদের মৃত নিয়োগদাতা গৃহস্থ ভাল লোক হলে থাকা খাবারের অসুবিধে হয় না। এমনটি না হলেই যত অসুবিধে। নিয়োগ দাতাতের অনেকেই কাজের মানুষকে মানুষই মনে করে না। চৌয়ারা বাজারে কথা হয় নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার হরিণ ধরা গ্রামের আজগর আলীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৩০) এর সাথে। কাজের জন্য এ এলাকায় তার আসার কারণ জানতে চাইরে সে জানায়, নিজ এলাকায় তাদের কোন জায়গাজমি নেই। এলাকায় এ সময় কোন কাজ না থাকায় কাজের আশায় সে ছুটে এসেছে এখানে। কাজ পেয়ে গেলে বেশ ক‘দিন থাকবে। আর না পেলে দুই একদিন অপেক্ষা করে সোজা বাড়ি ফিরে যাবে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজের খোঁজে ছুটে আসা অভাবী মানুষগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায়, এ এলাকায় শ্রম বিক্রি করে তারা যা আয় করবে তা বাড়ি নিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ ও অন্যান্য কাজে লাগাবে। কৃষির ভর মৌসুমে তাদের এলাকায় শ্রমিকের মজুরী খুব কম। তবু ও মৌসুমে তারা তাদের এলাকায় কাজ করে। এলাকায় করার মত কোন কাজ না থাকলেই তারা বেরিয়ে পড়ে কাজের সন্ধানে। আসে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটা ধানের চারা রোপণ ও অন্যান্য কাজ করে কিছু রোজগার করে বাড়ি ফিরে যায়। এভাবেই কাজের মৌসুমে এদের অনেকেই ছুটে আসে এ এলাকায় এ রোজগার মৌসুমে হলেও এটা তাদের পরিবারের জন্য কিছুটা হলে ও আর্থিক সচ্ছলতা এনে দেয়।