কুমিল্লা নয় মাস পর কবর থেকে ব্যবসায়ীর কঙ্কাল উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কুমিল্লায় দাফনের নয় মাস পর ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে ব্যবসায়ীর কঙ্কাল উত্তোলন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে রোববার সন্ধ্যায় (২৪ জুন ২০১৮) কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কালির বাজার ইউনিয়নের ধনুয়াইশ গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের কঙ্কাল উত্তোলন করা হয়। খলিলুর রহমান ওই একই এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। তার স্ত্রীসহ সিয়াম হোসেন নামে পাঁচ বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, মৃত খলিলুর রহমান কুমিল্লা সদরের কালিরবাজারে একটি স্টুডিওসহ পাঁচটি দোকানের মালিক ছিলেন। ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে পাশ্ববর্তী উজিরপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের সাথে তার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে আলমগীর হোসেনের পরিবারের সকল সদস্যদের সাথেও খলিলুর রহমানের সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়। সম্পর্কের একপর্যায়ে খলিল আলগীরের মেয়ে রুনা আক্তারের (১৯) সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। খলিলুর রহমানের স্ত্রী ও ছেলে থাকা শর্তেও পরক্রিয়ায় জড়িত হওয়ায় পর আলমগীর, তার স্ত্রী শাহিদা বেগম চাপ দেয় রুনা আক্তারকে বিবাহ করার জন্য। এক পর্যায়ে ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাতে কালিরবাজারে নিপা স্টুডিও থেকে রুনা আক্তার ও তার মা শাহিদা বেগম ফুসলাইয়া পাশ্ববর্তী বরুড়া উপজেলার আমতলী খটকপুর গ্রামের নানার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে খলিলুর রহমানকে বিয়ের জন্য জোর করলে খলিল অস্বীকার করলে তাকে কৌশলে হত্যা করে। পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর সকালে খলিলের পরিবারকে জানানো হয় খলিল স্ট্রোক করেছে। তাকে কুমিল্লা টাওয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। খলিলের পরিবার বিশ্বাস করে হাসপাতাল থেকে মরদেহ এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে।

পরবর্তীতে খলিলের পরিবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারে পাশ্ববর্তী উজিরপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের মেয়ে রুনা আক্তারের সাথে তার পরক্রিয়ার সম্পর্ক ছিল। মেয়ের সাথে পরক্রিয়ার সুবাদে আলমগীর হোসেন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে খলিলুর রহমান থেকে প্রচুর টাকা ধার দেয়। ধার নেওয়া টাকা ফেরত চাওয়া ও মেয়েকে বিয়ে না করায় তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়।

পরবর্তীতে ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানের মা মাফিয়া বেগম বাদি হয়ে রুনা আক্তারকে প্রধান আসামী করে তার মা শাহিদা বেগম, বাবা আলমগীর হোসেন, মামা ও খালুসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে কুমিল্লা আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত হত্যা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্ট্রিগেশন (পিবিআই) কে তদন্তের দায়িত্ব দেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে ময়নাতদন্তের জন্য রোববার আদালতের নির্দেশে মৃত খলিলুর রহমানের মরদেহের কঙ্কাল করব থেকে উত্তোলন করে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের নিবার্হী ম্যাজেস্ট্রেট এ কে এম ফয়সাল, পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্ট্রিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লা শাখার ইন্সপেক্টর আলাউদ্দিন চৌধুরী, কুমিল্লা কালির বাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সিকান্দার আলী।

মামলার বাদি খলিলের মা মাফিয়া বেগম ও স্ত্রী খাদিজা অভিযোগ করে বলেন, পরক্রিয়ার জের ও ধার দেওয়া টাকা ফেরত চাওয়ায় খলিলুর রহমানকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের বিচার চান মা ও স্ত্রী।

কুমিল্লা কালির বাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সিকান্দার আলী বলেন, ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান একটি ভালো ছেলে ছিলেন, যারাই খলিলকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে আমি চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হোক।

পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্ট্রিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লা শাখার ইন্সপেক্টর আলাউদ্দিন চৌধুরী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আদালত পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন তদন্ত করে বিভিন্ন ধরনের হত্যার ক্লু পেয়েছি। যেহেতু মৃত্যুর পর মরদেহটির কোন ময়নাতদন্ত হয়নি। সেহেতু মামলার তদন্তের স্বার্থে আদালতের কাছে আবেদন করলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কবর থেকে উদ্ধারকৃত কঙ্কালগুলো ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার পূণরায় দাফন করা হবে।

আরো পড়ুন