কুমিল্লায় পাইরেসি ও পর্ণোগ্রাফি চক্রের ১৮ সদস্য গ্রেফতার

ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লায় অডিও ভিডিও পাইরেসি ও চলচ্চিত্রে অশ্লীলতারর অভিযোগে ১৪টি মনিটর, ১৫টি সিপিইউ এবং ৪টি ল্যাপটপসহ ওই চক্রের ১৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১ এর সিপিসি-২ এর একটি দল।
মঙ্গলবার গভীর রাতে জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়া বাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকার বশির মিয়ার পুত্র আজাদ মিয়া (২৪), চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার বিতারা গ্রামের মজনু পাঠনের পুত্র মামুন পাঠান (২১), চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গাছিগ্রামের মো. জামাল মিয়ার পুত্র মো. সোহেল মিয়া (২২), একই উপজেলার জগমোহনপুর গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের পুত্র মো. আল আমিন (২৫), মানিপুর এলাকার আব্দুল মতিনের পুত্র মো. রাসেল (২১), বেলঘরের দুলাল মিয়ার পুত্র নাঈম আহম্মেদ (২২), জগমোহনপুরের মো. ইসহাকের পুত্র মো. জসিম (২৪), কালিকৃষ্ণনগরের মো. মতিউর রহমানের পুত্র মো. হারুন অর রশিদ (৩২), যশপুরের মো. নুরুল হকের পুত্র মো. মোশারফ হোসেন (৩৪), কুমারডুগা গ্রামের মৃত শফিকুল ইসলামের পুত্র মো. শহিদুল ইসলাম জনি (৩২), জগমোহনপুরের আব্দুল মান্নানের পুত্র আকতার হোসেন জনি (৩০), বালিমুড়ির মুমিনুল ইসলামের পুত্র সাইফুল ইসলাম (২৯), সুয়াখিলের নুরুল আলমের পুত্র ফারুক আহমেদ (২৯), ঘাসিগ্রামের মাস্টার সৈয়দ শফিক আহম্মেদের পুত্র আরিফুল ইসলাম (২৯), ঘাসি গ্রামের মানিক মিয়ার পুত্র মোঃ আলমগীর হোসেন (২৭), একই গ্রামের আব্দুর রশিদের পুত্র মো. ফারুক (২০), আশ্রাফপুরের মিজানুর রহমানের পুত্র মো. আতিকুর রহমান (২৩), ও সাত বাড়িয়া দাদামা গ্রামের ফরিদ মিয়ার পুত্র মো. রুবেল (২৫)সহ ১৮ জন। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে বেশ কয়েকজন সদস্য পালিয়ে যায়।
র্যাব জানায়, র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি ও ব্যাটালিয়ন সমূহের তৎপরতায় ইতিপূর্বে র্যাব ফোর্সেস কর্তৃক পাইরেসী ও অশ্লীলতার সাথে সম্পৃক্ত ডন বিপ্লব, পাইরেসী তুষার, মো. বনি ইসলাম ওরফে নোবেলসহ ৩ হাজারের অধিক সংশ্লিষ্ট অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বিষয়ে ৮’শও অধিক মামলা হয়েছে। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমান সিডি/ডিভিডি ও একাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি। অডিও ভিডিও পাইরেসি ও চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযানের পরও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অনেক সংঘবদ্ধ দল সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমার স্বত্ত্ব ক্রয় ছাড়াই পাইরেসির সাথে জড়িত। পাইরেসি ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে চলমান তৎপরতার ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) রাত আড়াই টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা এবং সিপিএসসি, আদমজীনগর, নারায়ণগঞ্জ ও চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা ও পাইরেসি বিরোধী টাস্কফোর্স এর এমআর আলম চৌধুরী এবং সঙ্গীয় ফোর্সসহ কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানাধীন মিয়া বাজারস্থ বিভিন্ন কম্পিউটার ও টেলিকমের দোকানে অভিযান চালায়। এ সময় র্যাব পর্ণোগ্রাফি ও পাইরেসী চক্রের ১৮ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ১৪ টি মনিটর, ১৫ টি সিপিইউ এবং ০৪ টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, তারা এবং তাদের অন্যান্য সহযোগীরা সিনেমা হলে গোপন ক্যামেরায় সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো ধারণ করে নকল/কপি করতঃ তা বিক্রির সাথে জড়িত। এ কাজে কোন কোন সিনেমা হলের কর্মচারী বা মালিকরাও তাদের সহায়তা করে। তারা বিভিন্ন মিউজিক্যাল ষ্টুডিও এবং এ্যাডফার্মের কলাকুশলীদের সাথে যোগাযোগ রাখে এবং তাদের নিকট হতে নতুন মিউজিক ভিডিও সমূহ সংগ্রহ করে। এ সকল ভিডিওর সাথে তারা অশ্লীল ছবির অংশ সংযোগ করে নতুন করে সিডি তৈরি করে বাজারে ছাড়ে। এই ধরনের অসাধু ব্যক্তিদের অপতৎপরতায় বাংলাদেশের ফিল্ম ও মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পাশাপাশি অশ্লীলতা প্রচারের মাধ্যমে যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে যুবসমাজ দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে মাদকদ্রব্যসহ নানামুখী অপরাধ প্রবণতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। তারা সমাজের ভিতর অপসংস্কৃতি প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের (সামাজিক আবহমান কালের) বন্ধনকে আঘাত করে। তাদের অপরাধ কর্মের ফলে যুবসমাজের মধ্যে বিকৃত রুচির প্রচার ও প্রসার লাভ করছে।
কুমিল্লা সিপিসি-২এর অধিনায়ক মেজর মো. আতাউর রহমান র্যাব সূত্রে জানা গেছে -র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আইন শৃংখলা রক্ষা, বিচার বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন কিংবা জনগণের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি চলচ্চিত্রের সুষ্ঠ বিকাশে অশ্লীলতা ও ভিডিও-অডিও পাইরেসীর মূলোৎপাটনে সদা সচেষ্ট। চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম ও লাভজনক শিল্প। ‘সমাজের দর্পন’ এই শিল্প। আমাদের মননশীলতার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সমাজ ও জাতি গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, চলচ্চিত্র শিল্পের অশ্লীলতা বাংলাদেশের এই ঐতিহ্যমন্ডিত শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। একই সাথে ভিডিও পাইরেসীর ফলে এই শিল্পে লগ্নিকারীরাও ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ফলে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
অন্যদিকে অডিও পাইরেসির কারণে মিউজিক ইন্ডাষ্ট্রিও মুখ থুবড়ে পড়েছে। গায়ক/গায়িকারা যেমন হারিয়ে ফেলছে তাদের উৎসাহ তেমনি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যার আমরা অভিযান চালিয়ে ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ১৪ টি মনিটর, ১৫ টি সিপিইউ এবং ৪ টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা এসব অপকর্মের কথা স্বীকার করেছে। এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।