পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পেলেন ডিবির এসআই শাহ কামাল
মো. জাকির হোসেনঃ কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার বহুল আলোচিত এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম পরিদর্শক (নিরস্ত্র) পদে পদোন্নতি লাভ করেছেন। তাকে ময়মনসিংহ রেঞ্জে বদলী করা হয়েছে। কুমিল্লার দেবিদ্বার ও ডিবিতে দায়িত্বপালনকালনি সময়ে শাহ কামাল চাঞ্চল্যকর হত্যা, ডাকাতি, ধর্ষণ, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার এবং সন্ত্রাসী গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে বেশ আলোচিত হন। দায়িত্ব পালনে অসীম সাহসিকতার কারণে তিনি ২০১৬ সালে পিপিএম (সাহসিকতা) পদক লাভ করেন। এছাড়াও জেলা ও চট্টগ্রাম রেঞ্জে এরই মধ্যে কয়েকবার শ্রেষ্ঠ এসআই হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন। কুমিল্লায় দায়িত্বপালনকালীন সময়ে তিনি ৬৮৪টি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং ৪৪৪টি মামলার বাদী ছিলেন। ১৭৪ রাউন্ড গুলিসহ ১০৭টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হন। এছাড়াও ২১৫ জন ডাকাত গ্রেফতার করেন। ৬৮৮ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারসহ বিপূল পরিমান মাদক উদ্ধার ও সন্ত্রাসী গ্রেফতারেও তাঁর রয়েছে বেশ কৃতিত্ব। এদিকে পদোন্নতির পর তাকে পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জে বদলীর খবরে নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনসহ সচেতন মহলে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, রোববার পুলিশ সদর দপ্তরের এক আদেশে সারা দেশের ৪০৬ জন এসআই কে পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে সাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। অনুসদ্ধানে জানা যায়, কুমিল্লার ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ জেলার অর্ধশতাধিক ক্লুলেস হত্যা, অপহরণসহ চাঞ্চল্যকর মামলা তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উৎঘাটনে সফল হয়েছেন। ২০১৪ সালের ২২ নভেম্বর মামলা ছাড়াই গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নগরীর ডুলিপাড়া থেকে গরু ব্যবসায়ী তোতা মিয়ার হাড়-কংকাল উদ্ধারসহ ঘাতকদের গ্রেফতার করেন। এর আগে একই বছরের ১৩ মার্চ দেবিদ্বার থানায় দায়িত্ব পালনকালে উপজেলার ছেচড়াপুকুরিয়া গ্রামের গৃহবধূ শাহিনার মৃতদেহ প্রায় ৮০ ফুট মাটির নিচে নলকুপের পাইপ থেকে উদ্ধারের মধ্যদিয়ে দেশব্যাপি আলোচিত হন। ২০১৬ সালের ৩০ আগষ্ট হত্যার ১৩ মাস পর বন্ধুদের হাতে নিহত দেবিদ্বারের যুবলীগ নেতা টিটুর হাড়-কংকাল নগরীর ঠাকুরপাড়া থেকে তিনি উদ্ধার করেন। একই বছরের (২০১৬) ১৪ জুন মুরাদনগর উপজেলার আন্দিকোট ইউনিয়নের জাড্ডা হাহাতি বিল থেকে প্রবাসী ময়নাল হোসেনের লাশ উদ্ধার করা হয় তারই নেতৃত্বে। এছাড়াও চাঞ্চল্যকর অর্ধশতাধিক মামলার রহস্য বের করে আলোচিত হন শাহ কামাল। ২০১৪ সালের ৬ নভেম্বর ডিবির এসআই ফিরোজ হোসেনকে গুলি চালিয়ে আহত করে অস্ত্র লুটে নেয়ায় জড়িত ছিলেন নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিরা সুমন ও তার বাহিনী। পরে ডিবির শাহ কামাল আকন্দ ডিবির টিম নিয়ে অভিযান চালিয়ে নগরী থেকে জিরা সুমন বাহিনীকে দমন করেন। ঘটনার ৩ দিন পর ৯ নভেম্বর সকালে শাহ কামাল আকন্দের নেতৃত্বে জিরা সুমনের সহযোগী রাব্বী ও জনি আলেখারচর এলাকায় আটক করতে গেলে উভয় পক্ষের গুলি বিনিময়ে ওই ২ সন্ত্রাসী নিহত হয়। পরে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর দিবাগত গভীর রাতে পালপাড়া এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন শীর্ষ সন্ত্রাসী জিরা সুমন। গত বছরের ১৫ অক্টোবর রাতে মেঘনায় সৎভাইয়ের হাতে নিহত আমির হোসেন হত্যা মামলার রহস্য বের করে ৫ আসামীকে গ্রেফতার করেন তিনি। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরে সন্ত্রাসীদের গুলি ও চাপাতির আঘাতে নিহত হন তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জিয়ারকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন সরকার হত্যা মামলা ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল সন্ধ্যায় আবু সাইদ ও মোহাম্মদ আলী নামে দুই যুবলীগ নেতাকে হত্যা করা হয়। একই বছরের ৬ মে দাউদকান্দি পশ্চিম মাইজপাড়া (বলদাখাল) মসজিদের সামনে আমির হোসেন রাজন (৩৪) নামের এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও চলতি বছরের ২ মে রাতে দাউদকান্দির বাজরা গ্রামের ইসলাম হত্যা মামলাসহ এসব হত্যা মামলার রহস্য বের করা হয় এসআই শাহ কামাল আকন্দ ঘাতকদের গ্রেফতার করেন। চলতি বছরের ২৪ মার্চ রাতে তিতাসের ভাটিপাড়া গ্রামে আওয়ামীলীগ নেতা হাজী মোহাম্মদ মনির হোসেন হত্যা মামলার রহস্য বের করাসহ ঘাতকদের গ্রেফতার করেন। গত ২ বছরে সদর উপজেলার আলেখারচর এলাকা থেকে আমেরিকান টোবারোর গুদাম থেকে মালামাল ডাকাতিসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে রফতানীমুখী গার্মেন্টসপণ্য লুটের ঘটনার রহস্য বের করাসহ লুষ্ঠিত মামলাল উদ্ধার করেন। কুমিল্লায় দায়িত্বপালন কালে তিনি ২১৫ জন ডাকাত গ্রেফতার করেন বলে জানা গেছে।
১৯ ডিসেম্বর রাতে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো: শাহ আলমের দেবিদ্বারের গ্রামের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করেন। পরে জড়িতদের ৩ জন বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। মনোহরগঞ্জের কুখ্যাত ডাকাত কাদের এসআই শাহ কামাল আকন্দ গ্রুপের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। এছাড়াও শাহ কামাল টিমের অভিযানে গ্রেফতারের সময় আন্তজেলা ডাকাত সদস্য তাহের, রাসেল,ফারুক, মোস্তফা, শামীম ও হালিম নিহত হয়। এসব ঘটনায় ১৪টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। দেবিদ্বারের ২টি হত্যা ও ধর্ষণ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে শাহ কামাল চার্জশিট দেয়ার পর আদালত থেকে দুটি মামলায় অভিযুক্তদের ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়।