কুমিল্লায় চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ, আটক একজন
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লা সদর উপজেলার কালির বাজারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে স্কুল ছুটির পর এলাকার স্থানীয় দুই যুবক রাস্তা থেকে তুলে স্কুলের অদূরেই একটি ছাপড়া ঘরে দুই ঘন্টা আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ১৫ অক্টোবর ঘটনাটি ঘটলেও প্রাথমিকভাবে ভয়ে পরিবার ছাড়া আর কাউকে জানায়নি পিতা মাতাহীন এতিম মারিয়া (১১) (ছদ্দনাম)। মামী এবং নানা বিষয়টি জানালে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিনকে জানায়। তিনি স্কুলের সভাপতি শাহাআলমসহ ম্যানেজিং কমিটিকে বিষয়টি অবহিত করেন। এর পরই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল।
ভূক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর বরাত দিয়ে জানা যায়, স্কুল ছুটিরপর গত ১৫ই অক্টোবর বুধবার দুপুর আনুমানিক ২ টায় স্কুলের সামনের দোকানে দাড়িয়ে সিঙ্গারা খাচ্ছিল মারিয়া। এ সময় স্থানীয় আইসক্রিম ফ্যাক্টরির কর্মচারী জসপুর এলাকার লতিফ মিয়ার ছেলে রিপন ও তার সহযোগী আনিসসহ দুজন তাকে ডেকে পেছনের রাস্তায় নিয়ে যায়।
এ সময় আনিস ও রিপন মেয়েটিকে জোরপূর্বক আইসক্রিম ফ্যাক্টরির মালিক বশির আহম্মদের মালিকানাধীন বাড়ির ভেতরে একটি টিনের ঘরে নিয়ে স্কার্ফ ও বেল্ট দিয়ে হাত এবং মুখ বেঁধে ফেলে।
মেয়েটি আরও জানায়, এ সময় প্রায় দু’ঘন্টা যাবৎ তাকে আটকে রেখে মারধরসহ পাশবিক নির্যাতন চালায় ধর্ষক রিপন। মেয়েটি কান্নাকাটি ও চিৎকার শুরু করলে এক পর্যায়ে রিপন ও তার সহযোগী স্থানীয় বল্লাবপুর এলাকার আনিস দু’জনের মধ্যে বাক বিতণ্ডা এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ঐ স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির অপর এক ছাত্রী বিষয়টি লক্ষ করে এগিয়ে এলে রিপন ও আনিস ফারজানা আক্তার নামের ঐ মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর ভুক্তভোগী মারিয়া বিষয়টি কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দিয়ে চুপচাপ বাড়িতে চলে যেতে বলে।
পিতামাতাহীন হতদরিদ্র মেয়েটি প্রথম দিন ভয়ে বিষয়টি কাউকে না জানালেও পরদিন মামীকে সব খুলে বলেলে, তার মামী বিষয়টি মেয়ের নানা কানু মিয়াকে জানায়। পূজার বন্ধ থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষকে না জানালেও এলাকার স্থানীয় কয়েকজনের পরামর্শে স্কুল খোলার পর বিষয়টি প্রধান শিক্ষিকাকে অবহিত করেন।
কালির বাজার সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিনকে জানায়। তিনি স্কুলের সভাপতি শাহাআলমসহ ম্যানেজিং কমিটিকে বিষয়টি অবহিত করেন। এরপর ঘটনার সাথে জড়িত আনিস মিয়ার কাছ থেকে সাদা কাগজে একটি লিখিত নিয়ে তাকে এলাকায় থেকে বের করে দেওয়া হলেও অদৃশ্য কারণে রিপনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হতে থাকে।
বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে সোমবার (২৯ অক্টোবর) অভিযুক্ত রিপনের বিরুদ্ধে একটি শালিস আয়োজন করে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি। স্থানীয় কয়েকজন যুবক ও সচেতন মহল শালিসে কারচুপি ও ঘটনার সঠিক বিচার হবে না বুঝতে পেরে সংবাদিকসহ স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করে। পরে এলাকাবাসী ধর্ষক রিপনকে আটক করে কোতোয়ালি মডেল থানাধীন নাজিরা বাজার ফাড়ি পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। ঘটনার সাথে জড়িত আরেক সহোযোগি আনিসকে এ সময় খোঁজ করে এলাকায় পাওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ঘটনাটি গত শনিবার স্কুলে আসার পর মেয়ের অভিভাবকের কাছ থেকে জানতে পারেন। তাৎক্ষণিকভাবে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিকে অবহিতও করেন। ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
নাজিরা বাজার ফাঁড়ি পুলিশের আই সি ইন্সপেক্টর মাহমুদ হাসান রুবেল বলেন, এলাকাবাসী ও ভিকটিমের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত একজনকে ফাড়িতে আনা হয়েছে। এখনো লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ হাতে পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এলাকাবাসী নেক্কারজনক এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়াসহ আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ রিপোর্ট লিখার সময় থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানায় ভুক্তভোগীর পরিবার।