মুরাদনগরে আওয়ামী লীগে বাপ-ছেলে বিএনপিতে স্বামী-স্ত্রীর মনোনয়ন লড়াই
মুরাদনগর (কুমিল্লা) সংবাদদাতাঃ নির্বাচন ঘিরে কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনে জমে উঠছে রাজনীতির মাঠ। এ আসনে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার আওয়ামীলীগের মনোনয়নপত্র ক্রয় করলেও তারই ছেলে কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিব ড. অহসানুল আলম সরকার কিশোরও একই দল থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। অপর দিকে একই আসনে বিএনপি থেকে থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও তার স্ত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. শাহিদা রফিক।
মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বাপ-বেটা কিংবা স্বামী- স্ত্রী সবাই। স্বজনদের এ দ্বৈরথ দেখতে ভোটাররা মুখিয়ে থাকলেও কেউ কেউ মনে করছেন, মনোনয়ন নিয়ে দলকে চাপে রাখতেই পিতা-পুত্র, স্বামী- স্ত্রী বা স্বজনরা একই দল থেকে ফরম নিয়েছেন। তবে মুখে অবশ্য এটি স্বীকার করেননি কোনো স্বজনই। তারা প্রত্যেকেই বলছেন, নিজেকে যোগ্য মনে করেই মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে আহসানুল আলম সরকার কিশোর বলেন, ‘বাবা মনোনয়ন পেলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব। কোনো কারণে যদি তিনি নির্বাচন না করেন সেক্ষেত্রে মনোনয়নের ব্যাপারে কঠোর থাকব আমি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই আমাদের কাছে চুড়ান্ত।’
তবে একই আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করতে চান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। একই দলে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদে আছেন তার স্ত্রী ড. শাহিদা রফিক। কিন্তু তারা দু’জনই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে নামতেও নিচ্ছেন প্রস্তুতি। তাদের দু’জনেরই বিশ্বাস, আসন্ন নির্বাচনে নিজ দলের হয়ে মনোনয়ন পাবেন তারাই।
এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘আমি অনেক আগে থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ১৯৯১ ও ‘৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনে এ আসনে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। ওই সময় থেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততাও বাড়িয়েছি। তাই আশা করছি এবার মনোনয়ন পাব। স্ত্রীও যদি দল থেকে মনোনয়ন পায় আমার বিশ্বাস, নিশ্চিতভাবে বিজয় আনতে পারবো।’
তবে ভিন্নমত পোষণ করে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, ‘তরুণদের ওপর আস্থা রেখে প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে অথবা আমার ছেলেকে সুযোগ দেন তবে বিজয় উপহার দিতে পারব আমি। আমার বিপক্ষে যদি এ আসনে খালেদা জিয়াও নির্বাচন করেন, নিশ্চিতভাবে হারবেন তিনি। নিজ নিজ দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারেও আশাবাদী পিতা-পুত্র, স্বামী- স্ত্রী ওরা চারজনই।
এ আসন থেকে আওয়ামীলীগের ১৫ জন ও বিএনপি থেকে ৬ জন মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন।
আওয়ামীলীগের অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন তারা হলেন বর্তমান স্বতন্ত্র এমপি ও আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এফসিএ, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হানিফ সরকার, ম. রুহল আমিন, কেন্দ্রীয় আ’লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ সম্পাদক আ.খ.ম গিয়াস উদ্দিন, মুরাদনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম খসরু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ আহাম্মদ হোসেন আউয়াল, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সদস্য সচিব ড. এহসানুল আলম সরকার কিশোর, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি সফিকুল ইসলামের ছেলে আবু কাওছার সরকার মাসুদ, উপজেলার শ্রীকাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অলিউল্লাহ পলাশ, আবুল কালাম ও জাহাঙ্গীর আলম।
অপরদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন ৬ জন। তারা হলেন, বিএনপির স্থায়ি কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, তার স্ত্রী ড. শাহিদা রফিক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, ঢাকা দক্ষিন শ্রমীক দলের সাধারন সম্পাদক কাজী আমীর খসরু, এড. নূর এ আলম ও ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন।