কুমিল্লার ৩টি আসন চাইছে জাতীয় পার্টি
ডেস্ক রিপোর্টঃ আওয়ামী লীগের কাছে মহাজোটগতভাবে সর্বশেষ কুমিল্লার ৩টিসহ মোট ৭৬ আসন চেয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। এর আগে ১০৫ জনের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছিল জাপা। আজকালের মধ্যে আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দরকষাকষিতে ৫০টি আসন জাতীয় পার্টি পাবে বলে আশাবাদী।
এদিকে ইসলামী দলগুলোও মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করার জন্য তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে। এ তালিকায় ইসলামী ঐক্যজোট চারটি, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্স চারটি, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট একটি।
জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের সম্প্রতি বনানীতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসনের তালিকা দিয়েছেন তারা। এ তালিকা ধরে দরকষাকষি হবে।
তবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছে তিনি শুনেছেন জোটের শরিকদের আওয়ামী লীগ ৭০টি আসন দিতে চায়। এর মধ্যে জাপা কয়টি আসন পাবে তা দুই দলের নীতিনির্ধারকদের আলোচনায় চূড়ান্ত হবে। জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয় জাপাকে নিরাশ করবেন না। তার বিবেচনা অনুযায়ী সম্মানজনক আসন দেবেন— আমরা আশাবাদী।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসায় দ্রুত আসন সমঝোতা চায় জাতীয় পার্টি। আসন সমঝোতাসহ নির্বাচনী নানান বিষয়ে আলোচনার জন্য এরশাদের নেতৃত্বে ছোট প্রতিনিধি দল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে চান এইচ এম এরশাদ। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছেন তিনি।
শনিবার সন্ধ্যায় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে সে চিঠি পৌঁছে দেন। আজকালের মধ্যে এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে সুনীল শুভ রায় জানান, জাতীয় পার্টি মহাজোটের শরিক দল হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। নির্বাচনে আসন সমঝোতাসহ নানান বিষয়ে আলোচনার জন্য এইচ এম এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছেন। ওই চিঠি গণভবনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আসন ভাগাভাগি নিয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা দ্রুত চান জাপা নীতিনির্ধারকরা। মোট কত আসন জাপাকে ছেড়ে দেওয়া হবে এবং কী কৌশলে হবে, তা ঠিক করতে দুই দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনায় বসতে চান। ৫ জানুয়ারির ১০ম সংসদ নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২১টিসহ ৩৪টি আসনে জেতা জাপার বর্তমান এমপিদের সবার মনোনয়ন নিশ্চিত নয়।
তবে কুমিল্লার বর্তমান দুটি আসনসহ বাড়তি আরো একটি আসন দাবি করছে জাপা। বর্তমান আসন দুটি হলো কুমিল্লা-২ ও কুমিল্লা-৮। গত নির্বাচনে জেতা এ দুটি আসন আবারো চাইছে জাপা সাথে নতুন করে কুমিল্লা-৯ আসনটিও চাইছে।
এ ছাড়া বৃহত্তর রংপুরের ২১টি আসনের সাতটি এখন জাপার দখলে। গাইবান্ধা-২, গাইবান্ধা-৩, গাইবান্ধা-৫, লালমনিরহাট-৩, রংপুর-২, রংপুর-৪ এবং রংপুর-৫ আসনে জোটের মনোনয়ন পেলে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করেন দলটির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপি।
তিনি জানান, এককভাবে ভোট করলে এগুলোতে ভালো করা কঠিন। ঢাকার এই নেতা বলেন, এবার আর বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হওয়ার সুযোগ নেই। ভোট করে জিততে হবে। গত নির্বাচনে জাপা জামালপুর-৪, ময়মনসিং-৫, ময়মনসিংহ-৭, ময়মনসিংহ-৮, লক্ষ্মীপুর-২, কক্সবাজার-১, বগুড়া-২, বগুড়া-৩, বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, ঢাকা-৪, ঢাকা-৬, চট্টগ্রাম-৯, পটুয়াখালী-১ আসনে জয়ী হয়। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে এককভাবে নির্বাচন করে ৩৫ ও ৩২টি আসন পায় এরশাদের জাপা। ২০০১ সালে পায় ১৪টি আসন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে জয়ী হয় ২৯টি আসনে। সেবার জাপা ৪৯ আসনে ভোটে লড়ে। এর মধ্যে ৩১টিতে আওয়ামী লীগের সমর্থন পায়। বাকি ১৮টিতে ছিল নৌকার প্রার্থী।
ইসলামী দলগুলোর চাওয়া আসন : এদিকে ইসলামী ঐক্যজোট প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে চারটি আসন চেয়ে তালিকা পাঠিয়েছে এগুলো হলো— মাওলানা আবুল হাসানাত-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ বা ৩, মুফতি ফয়জুল্লাহ-চট্টগ্রাম-৪, আলতাফ হোসাইন-কুমিল্লা-১ এবং আবদুল লতিফ নেজামী-নরসিংদী-৩। মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ১৬ দল নিয়ে গঠিত ইসলামিক ডেমোক্রেটিক এ্যালায়েন্স চারটি আসন চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছে। এগুলো হলো— লক্ষ্মীপুর-১ তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়াল এমপি। এ্যালায়েন্সের কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। মিছবাহুর রহমান চৌধুরী এই আসনটি পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়াও ফরিদপুর-৪ আসনে জাকের পার্টির চেয়ারম্যান আটরশির পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সল মোজাদ্দেদী, চাঁদপুর-৪ ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদেদ্দী। এ ছাড়াও শরিক দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন মাইজভাণ্ডরী চট্টগ্রাম-২ ও ঢাকা-১৪ আসন চাওয়া হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের চেয়ারম্যান হাফেজ মওলানা জিয়াউল হাসান ঢাকা-১৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে মনোনয়নপত্র জমা এবং সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করা প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে তার বাসভবনে পৌঁছে দিয়েছে। এদিকে এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের সহকারী দফতর সম্পাদক আবদুল হেকিম জানিয়েছেন, এইচ এম এরশাদের কাছে দলের পক্ষে ৪৮ জনের একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। জোটের চেয়ারম্যান যেহেতু ঘোষণা দিয়েছেন মহাজোট থেকে ভোট করবেন তাই আমরা আশাবাদী মহাজোট থেকে ৫ থেকে ৬টি আসন আমাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।
বর্তমান সংসদ সদস্য তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়ালের লক্ষ্মীপুর-১ আসনে আনোয়ার মডার্ন হাসপাতালের মালিক আনোয়ার হোসেন খানকে তরিকত ফেডারেশন থেকে মনোনয়ন ফরম দেওয়ায় দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। গতকাল রাতে দলের চেয়ারম্যান নজিবুলবশর মাইজভাণ্ডারীর হাত থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলের সাবেক মহাসচিব বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের নির্বাচনী এলাকা থেকে মনোনয়ন দেওয়ায় গ্রুপিং তৈরি করা হয়েছে।