কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ১২০ তম জন্মদিন
‘আনন্দ উছলি যায় সুনীলিম গগনে/হাসিতেছে চারদিক দিনমণি কিরণে/হাসিতেছে তরু শির হাসিছে ফুলরুচির/সাঁতারে সমীর ধীর নিচে পবনে।’ ১৮৯৯ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের যাত্রা এ গানের মধ্যে দিয়েই শুরু হয়েছিল। নবীন্দ্রচন্দ্র সেনের লেখা গানটি গেয়েছিলেন পুত্র নির্মলচন্দ্র সেন।
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায়। ১৮৯৯ সালের ২৪ নভেম্বর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘রায় বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করে। কলেজটির নামকরণ করা হয়েছিল তৎকালীন ব্র্রিটেনের রানী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে।
শিক্ষা-সংস্কৃতির বিকাশে ব্রিটিশ ভারতে প্রথম পর্যায়ে যে কয়টি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়, ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ তার অন্যতম। তিতাশ চৌধুরী লিখেছেন, ‘প্রাচীনত্বের বিচারে এই কলেজটি বুড়োদের দলেই পড়ে।
মূলত এইটিই ছিল পূর্বাঞ্চলীয় অন্ধকার যুগের শিক্ষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক’ (ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস)। পাকিস্তান সৃষ্টির পর এ কলেজের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা চালানো হয়। ‘ভিক্টোরিয়া’ শব্দটি ছেঁটে ফেলে দেয়ার চিন্তা করা হয়। শেষ পর্যন্ত তা আর হালে পানি পায়নি।
বর্তমানে কলেজটি দুটি অংশে বিভক্ত। কান্দিরপার রানীদীঘির পাড়ে কলেজের ইন্টারমিডিয়েট শাখা এবং ধর্মপুরে অনার্স শাখা অবস্থিত। প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় কলেজটি মুখরিত হয় প্রতিদিন। ২২টি বিষয়ে অনার্স ও ১৯টি বিষয়ে মাস্টার্স পড়ানো হয় এখানে। এ কলেজে রয়েছে ১২টি সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন। সংগঠনগুলো শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে অবদান রাখছে।
ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে কলেজটির ভূমিকা ছিল অনন্য। উপমহাদেশের বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ শচীন দেববর্মণ, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, অদ্বৈত্য মল্লবর্মণ, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, হানিফ সংকেত, বিদ্যা সিনহা মিম, সংগীত শিল্পী আসিফ আকবরের মতো অসংখ্য খ্যাতনামা সাবেকদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে ভিক্টোরিয়ার ক্যাম্পাস।
আধুনিকতার সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কলেজটি। এখানকার প্রতিটি ভবনের ডিজাইন সত্যিই মনোমুগ্ধকর। এছাড়া হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, জিয়া অডিটোরিয়াম, মুক্তমঞ্চ (নির্মাণাধীন), স্বাধীনতা স্তম্ভ, আনন্দচন্দ্র রায়ের প্রতিকৃতি, শহীদ মিনার, কলেজ ক্যান্টিন, কলেজ লেক, রানীদীঘি, কবি নজরুল ইসলাম হল, নওয়াব ফয়জুন্নেছা হল, মুতাহের হোসেন চৌধুরী লাইব্রেরি ভিক্টোরিয়া কলেজের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইন্টারমিডিয়েট শাখার রানীদীঘির পাড়ে বসে তার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, লিখতেন কবিতা। কথিত আছে, এখানে বসেই কবি তার প্রিয়তমা নার্গিসকে প্রেমপত্র লিখে পাঠাতেন।
শত বাধা পেরিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ আজ তার ১২০ বছর পূর্ণ করছে। নিজস্বতা ধরে রেখে পথ চলছে আগামীর। এ কলেজে এখনও কিছু অপূর্ণতা আছে। শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় চাহিদা একটি খেলার মাঠ। জিয়া অডিটোরিয়ামের পূর্ব পাশের বিশাল খোলা জায়গাটিকে মাঠে পরিণত করা যেতে পারে।
এছাড়া প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ সময়ের দাবি। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠাকালে যে আনন্দধারা প্রবাহিত ছিল, তা অব্যাহত থাকুক। এটাই প্রত্যাশা ১২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে। জয়তু ভিক্টোরিয়া।
মোহাম্মদ শরীফ : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ