সাংবাদিক সম্মেলনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরীর মেয়ে (ভিডিও)
মাজহারুল ইসলাম বাপ্পিঃ কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসনে দলের মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরীকে রাজনৈতিক কারণে গায়েবী মামলায় জড়িয়ে হয়রানীসহ নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে সরিয়ে রাখার অভিযোগ করা হয়েছে। বিজয়ের মাসেও কারাগারে বন্দি নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন সংকটাপন্ন একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে এ অবস্থার জন্য আমরা কার কাছে বিচার চাইব। জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার নোয়াগ্রামে মনিরুল হক চৌধুরীর নিজ বাড়িতে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় সাংবাদিক সম্মেলনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এমন আকুতির কথা জানান মনিরুল হক চৌধুরীর মেয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবার দীর্ঘ ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেননি। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমরা আজ কী দেখছি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে একের পর এক মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় তিনি গত ২৪ অক্টোবর থেকে কারাগারে বন্দি আছেন। নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে তার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে, যে কোনো সময় তিনি মারাও যেতে পারেন। এর বিচারটা আমরা কার কাছে চাইব, জবাব কে দেবে। তিনি বলেন, এখানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারছেন না, স্লোগান দিতে পারছেন না। ধানের শীষের পক্ষে যারা মাঠে নামেন তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে মামলায় জড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেতাকর্মীদের মারধরসহ হামলা ভাংচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে। নেতাকর্মীরা এলাকাছাড়া হয়ে পড়েছেন।
এ আসনের বিএনপি নেতা সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়াকেও গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অপর নেতা মোবাশে^র আলম ভূঁইয়াও কারাগারে। আমিও প্রতিনিয়ত নানাভাবে হুমকির সম্মুখিন হচ্ছি। এটা কোন ধরণের গণতন্ত্র। এখানে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। কারাগারে আমার বাবার সঙ্গে দলীয় নেতাদের দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। এসময় তিনি রাজনৈতিক অবস্থার উর্ধ্বে উঠে একজন মানুষ হিসেবে ন্যায় বিচার এবং অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সময়-সুযোগ ও আইনানুগ অধিকার নিশ্চিত করে অবিলম্বে তার পিতার মুক্তিসহ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন কমিশনের নিকট দাবি জানান। এরই মধ্যে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সময়-সুযোগ ও আইনানুগ অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে মনিরুল হক চৌধুরী কারাগারে আমরণ অনশনের হুমকি দিয়ে গত বৃহস্পতিবার জেলা রিটার্নিং অফিসার ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের নিকট চিঠি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী নাজমুস সা’দাত বলেন, জেলার চৌদ্দগ্রামে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দুর্বৃত্তদের হামলায় বাসের ৮ যাত্রী নিহতের ঘটনায় দায়ের করা পৃথক ২টি মামলায় তার (মনিরুল হক চৌধুরী) নাম ছিল না। ওই ঘটনার ২ বছর পর হয়রানীর উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের চাপে সম্পূরক চার্জশিটে ওই ২টি মামলায় তাকে আসামিভূক্ত করা হয়। এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানার আরও ২টি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ ২টি মামলার এজাহারেও তার নাম নেই। এদিকে পেট্রোল বোমা হামলা মামলায় তিনি হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে ছিলেন এবং পরবর্তীতে কুমিল্লা জেলা জজ আদালতে ৫টি তারিখে হাজির ছিলেন। কিন্তু গত ২৪ অক্টোবর কুমিল্লা জেলা জজ আদালত তার জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ করেন। ওই দুটি মামলায় গত ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে তার জামিন আদেশ হয়। এরপর জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশের সন্ত্রাস বিরোধী ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের পৃথক দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এ দুটি মামলার মধ্যে একটি মামলায় তার জামিন না হওয়ায় তিনি জেলহাজতে আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা-১০ আসনের বিভিন্ন এলাকার দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে মনিরুল হক চৌধুরীর নিজ বাড়িতে নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপি তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে নির্বাচনী মতবিনিময় করেন মনিরুল হক চৌধুরীর মেয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস। বিএনপি নেতা মোস্তফা মোরশেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া,মনিরুল হক চৌধুরীর ছোট ভাই জহিরুল হক চৌধুরী, নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডঃ হামিদুল হক ভূঁইয়া,বিএনপি নেতা নজির আহমেদ ভূঁইয়া,ইকরামুল হক মজুঃ,আজাদ,শাহআলম চৌঃ,কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদল সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন ফারুক, সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদল সভাপতি খলিলুর রহমান মজুমদার,নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবদল সভাপতি কলিমুল্লাহ,স্বেচ্ছাসেবকদল সভাপতি অধ্যাপক খোরশেদ আলম,ছাত্রদল সভাপতি সালেহ আহম্মেদ সহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।