কোটি মানুষের প্রাণের দাবি: কুমিল্লা বিভাগ চাই
ডেস্ক রিপোর্টঃ ষাটের দশকে কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন নিয়ে বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল। কুমিল্লায় বিভাগ প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা ও গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের উত্থাপিত হয় বলে জানা গেছে। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে রেলযোগে চট্টগ্রাম গণসংযোগে যাওয়ার সময় কুমিল্লা রেল স্টেশনের পথসভায় বলেছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে কুমিল্লাকে বিভাগ করা হবে। এর ২ বছর পর ১৯৯৬ সালে ও ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকার পরও কুমিল্লা বিভাগ হয়নি।
জনসংখ্যা এবং সংসদ সদস্যের সংখ্যার দিক থেকে বিচার করলে কুমিল্লা অঞ্চলকে বিভাগ করা যুক্তিসঙ্গত। চট্টগ্রামে ১৬ জন সংসদ সদস্য, কক্সবাজারে ৪ সংসদ সদস্য, রাঙ্গামাটি ১ জন সংসদ সদস্য, খাগড়াছড়ি ১ জন সংসদ সদস্য, বান্দরবান ১ জন সংসদ সদস্যসহ সাবেক চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের এ ৫ জেলায় সংসদ সদস্যের সংখ্যা ২৩ জন। বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের কুমিল্লায় ১১ জন সংসদ সদস্য, নোয়াখালী ৬ জন সংসদ সদস্য, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ৬ জন সংসদ সদস্য, চাঁদপুর ৫ জন সংসদ সদস্য, লক্ষীপুর ৪ জন সংসদ সদস্য, ফেনী ৩ জন সংসদ সদস্যসহ বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ৬ জেলায় সংসদ সদস্যের সংখ্যা ৩৫ জন। এর মধ্যে বৃহত্তর কুমিল্লার ৩ জেলায় ২২ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। ২০১১ সালের গণনা অনুযায়ী সাবেক চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট জন সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ ৪১ হাজার। বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের জনসংখ্যা ১ কোটি ৭৬ লাখ ৩৮ হাজার ৯৬৩ জন। এর মধ্যে বৃহত্তর কুমিল্লার জনসংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৩৮৬ জন এবং বৃহত্তর নোয়াখালীর জনসংখ্যা ৬৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭৭ জন। বাংলাদেশে অনেক বিভাগ এরচেয়েও কম জনসংখ্যায় এবং কম সংসদ সদস্য নিয়ে গড়ে উঠেছে। জনসংখ্যা এবং সংসদ সদস্যের দিক থেকে বিচার করলেও কুমিল্লা বিভাগ ন্যায্য দাবি।
চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৩ দশমিক ৯০৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে রয়েছে ১১টি জেলা ২টি সিটি কর্পোরেশন, ১০০টি উপজেলা, ৬১ পৌরসভা, ১২০টি থানা, ৯৪৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বিশাল বিভাগ। যা একজন কমিশনারের পক্ষে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই কষ্টকর। সবচেয়ে বড় বিষয় এটি উন্নয়নেরও অন্তরায়। সেই সঙ্গে এত বড় বিভাগ সামলাতে নানা সিস্টেম লসে সরকারের আর্থিক ব্যয়ও বাড়ে। কুমিল্লাকে বিভাগ করলে ওই ব্যয় কমে আসবে। দেশে এখন ১১টি জেলা নিয়ে আর কোনো বিভাগ নেই। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণের স্বার্থে বড় বড় বিভাগগুলোকে বিভক্ত করা হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে এখন কুমিল্লাকে বিভাগ করা উচিত। তা না হলে এ অঞ্চলের উন্নয়নমুখী মানুষের প্রতি অন্যায় করা হবে। সৃষ্টি হবে চরম বৈষম্যের। শক্ত প্রশাসনিক কাঠামো বিনির্মাণ, সুষম উন্নয়ন বণ্টন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় রাষ্ট্রীয় সেবা পৌঁছে দিতে কুমিল্লাকে বিভাগ প্রতিষ্ঠা জরুরি।
জাতীয় ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় এবং কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে গঠিত অর্ধশতাধিক সরকারি-বেসরকারি দপ্তর রয়েছে কুমল্লায়।
কুমিল্লাকে বিভাগ করলে এ দপ্তরগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই নতুন করে স্থাপন করতে হবে না। এগুলোকেই বিভাগীয় দপ্তর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে কুমিল্লার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অবস্থান।
কুমিল্লার যোগাযোগ ব্যবস্থা সর্র্বকালেই উন্নত ছিল। এ জেলার ওপর দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক গেটওয়ে হিসেবে খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১১২ কিলোমিটার অংশ বয়ে গেছে। বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালীর ৬টি জেলার ৫টিই মূলত কুমিল্লার চারদিক বেষ্টিত। শুধুমাত্র লক্ষীপুর জেলা একটু দূরে হলেও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে। কুমিল্লার সীমানা ঘেঁষে উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে চাঁদপুর জেলা, দক্ষিণে নোয়াখালী জেলা এবং দক্ষিণ-পূর্বে ফেনী জেলা অবস্থিত।
কুমিল্লা আন্তর্জাতিক সীমান্তে অবস্থিত বলে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কাজে আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ খুব সহজেই করা যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিবেচনাও কুমিল্লা বিভাগের অগ্রাধিকার পাওয়ার অধিকার রাখে।
সময়ের প্রয়োজনে কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। এ গণদাবির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ ৩ দশক ধরে কুমিল্লা গণদাবি পরিষদ আন্দোলন করে আসছে। সম্প্রতি সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বিভাগ ভেঙে আরো একটি বিভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় কুমিল্লাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি আরো সামনে চলে আসে। এর ফলে তাদের দীর্ঘদিনে দাবি বাস্তবে রূপ পাবে বলে মনে করছেন তারা।
তাই বৃহত্তর এ অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রাণের দাবি কুমিল্লা বিভাগ এবার বাস্তবে রূপ নেবে বলে কুমিল্লাবাসী আশায় বুক বেঁধেছে।