লাকসামে ঝুঁকিপূর্ন বেইলী ব্রিজে চলছে যানবাহন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কুমিল্লার লাকসাম-মুদাফরগঞ্জের সড়কে খুন্তা নামকস্থানে ডাকাতিয়া নদীর উপর বেইলী ব্রিজটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি পূর্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নির্মিত পুরাতন জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ন বেইলী ব্রিজ এখন চলাচালকারীদের জন্য মরন ফাঁদে পরিনত। নির্মানের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও মেরামতের কোন খোঁজ খবর নেই। সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাফিলতির কারনে মেয়াদউত্তীর্ণ এ বেইলী ব্রিজে পাটাতন ভেঙ্গে প্রতিনিয়তই ঘটছে অহরহ দূর্ঘটনা। বিকল্প সড়ক না থাকায় প্রতিদিন বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ন এ সেতু দিয়ে চলাচল করছে ভারী যানবাহনসহ হাজার হাজার যাত্রী ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ঝুঁকিপূর্ন সেতুর উপর দিয়ে ১৫/২০ টন ওজনের মালামাল নিয়ে অবাধে চলাচল করছে ট্রাকসহ ভারী যানবাহন। এই ব্রিজটি নিয়ে গত কয়েকবছর ধরে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে তা মেরামত করে। যা কয়েকদিন পরই আবার যেই সেই অবস্থা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেইলী ব্রিজের দীর্ঘদিনে ইস্পাতে পাটাতনগুলোতে অসংখ্য ফাটল আর সেই ফাটলের উপর দিয়ে দেখা যাচ্ছে নীচে নদীর পানিসহ বালুচর। পাটাতনের ফাটলগুলো বন্ধ করতে ব্রিজের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত দেখা হচ্ছে লোহার ঝালাইয়ের অসংখ্য জোরাতালি। ব্রিজের উপর দিয়ে গাড়ী চলাচলের সময় শুনা যায় নরবড়ে ষ্টীলের পাটাতনের বিকট শব্দ। আর কিছূ কিছূ জায়গা লোহার ফ্রেমের উপর ভাসানো পাটাতনগুলো নড়বরে হয়ে যাওয়া ছোটবড় কোন গাড়ী ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচলের সময় গাড়ীর চাকা ভারে পাটাতনের এক পাশে নীচে আর অপরপাশে উপরে উঠে যাচ্ছে। ফলে যে কোন সময় লোহার ফ্রেম উপর অস্থায়ী অবস্থায় বসানো পাটাতন সরে গিয়ে পিস পয়েন্ট ফাঁকা হয়ে পড়ছে। পাটাতন উল্টে গিয়ে সরে নীচে পড়ে আছে ও রেলিং খুলে পড়ায় নাটবল্টুসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি হয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছুদিন থেকেই ঝুঁকি নিয়ে এ পথে চলাচল করছে ছোট বড় শত শত যানবাহন। ব্রিজটির সামনে ও পিছনে নেই কোন ধরনের সওজ কর্তৃপক্ষের সর্কতাবানী। ব্রিজের পাটাতনের বেশির ভাগ পাটাতনই ফাঁকা হলেও মধ্যখানে পাটাতন ভেঙ্গে পড়েছে। ভারী কোন গাড়ীর চাকা ঢুকে পড়লে পুরো ব্রিজটাই ভেঙ্গে পড়তে পারে। ব্রিজের পিস পয়েন্ট খুলে গিয়ে এ স্থানে কয়েকবার দূর্ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। বিশেষ করে রাতে কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় দূরে দেখা না যাওয়ায় যাত্রী ও পন্যবাহী যানবাহন দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে প্রানহাণীর আশংকা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এক যুগেরও বেশি সময় আগে সড়ক ও জনপদ বিভাগে তৈরী করা এ সেতু। বছর পর বছর বেইলী ব্রিজটি এ অবস্থায় পড়ে আছে। জরুরীভিত্তিতে এটি মেরামতের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসীরা। গত কয়েকদিন আগে বালুর ট্রাক নিয়ে লাকসাম থেকে মুদাফরগঞ্জ-হাজীগঞ্জ উপজেলা যাওয়ার সময় ঝুঁকিপূর্ন খুন্তা নামকস্থানে ডাকাতিয়া নদীর উপর বেইলী ব্রিজটি সেতুর একাংশ ভেঙ্গে ট্রাক নদীতে পড়ে যায়। ২০১৫ সালে শেষের দিকে অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে পার হওয়ার সময় একই স্থানে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটে। অপরদিকে সেতুগুলো একমুখী হওয়ায় ট্রাক, বাসসহ বড় যানবাহন পারাপারের সময় সেতু উভয় প্রান্তে সৃষ্টি হয় যানজটের। এতে করে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে চালকসহ এ পথের যাত্রীরা।
এ ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন উপজেলা মুদাফরগঞ্জ আশপাশের বিভিন্ন অ লের অসংখ্য ট্রাক্টর, প্রাইভেটকার, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান, রিক্সা, সিএনজি, ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, মোটর সাইকেল, ইট-বালু বহনকারীসহ ভারী যানবাহন চলাচল করছে।
ট্রাকচালক সেলিম জানান, আমি ১০ বছর ধরে এ রাস্তায় গাড়ী চালাই সে সময় থেকে ব্রিজগুলো ভাঙ্গা দেখতাছি ব্রিজের অবস্থায় বেশি খারাপ হয়ে গেলে মাঝে মধ্যে দেখি ঝালাই-টালাই দেয় হেতারা। কিন্তু যখন গাড়ী নিয়া ব্রিজের উপর উঠি ব্রিজটা যেন কাপাইয়া উঠে মনে হয় ব্রিজটা এখনই ভাঙ্গাইয়া গাড়ীসহ ডাকাতিয়া নদীতে পইরা যাইবো।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজাহী রাব্বী সেতুটির ঝুকির কথা শিকার করে বলেন, মাননীয় এলজিআরডি মন্ত্রীর নির্দেশে আমরা একটি নতুন ব্রিজের অনুমোদ পাওয়ার আবেদন করেছি। তবে বর্তমানে বেশী ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় তা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ভাঙ্গা যায়গাটি রিপ্রেসমেন্ট করা হবে।