কুমিল্লা বুড়িচংয়ে রাতে-দিনে কাঁটা হচ্ছে পাহাড়

জে.এইচ বাবুঃ কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল ইউনিয়নের জামতলা, কলীকৃষ্ণনগর, গদানগর এলাকায় প্রশাসনের চোখের সামনে রাতে-দিনে কাঁটা হচ্ছে পাহাড়। উজার হয়ে যাচ্ছে সরকারী শত-শত একর বনায়ন। ফলে পরিবেশ হারাচ্ছে ভারসম্য, মাটিবাহী অতিরিক্ত ট্রাক্টর চলাচলের কারনে নষ্ট হচ্ছে রাস্তা-ঘাট।

উপজেলার বাকশীমূল ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী সরকারী বনায়ান ও পাহাড় অ লে ঘুরে দেখা যায় মাটি কাঁটার চিত্র। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহীনির তোয়াক্কা না করে দিনে-রাতে পাহাড়ে বুক থেকে এসকিউভিটর (ভেকু) দিয়ে কাঁটা হচ্ছে মাটি। জামতলা মৌজার মোড়া বাড়ি এলাকায় একটি পাহাড়ের অর্ধাংশ ইতিমধ্যে কেঁটে মাটি বিক্রয় করে দিয়েছে ওই এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল। আর ওই কাঁটা অংশে রাতের আধাঁরে ঘর নির্মানের জন্য অবকাঠামো তৈরী করেছে মহলটি।

এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজন বুড়িচং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। লিখিত অভিযোগে এলাকাবাসী উল্লেখ করেন, উপজেলার বাকশীমূল ইউনিয়নের জামতলা (মোড়া বাড়ি) এলাকায় স্থানীয় মৃত নেয়াজ আলীর ছেলে মোঃ মুমিন মিয়া ও মৃত ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মুজিবুর রহমান ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ওই রিপন মিয়ার বাড়ীর পার্শ্বের সরকারী একটি পাহাড় কেঁটে মাটি বিক্রয় করছে। পাহাড়ের মধ্যে থাকা আম, জাম, কাঁঠাল, মেহগুনী, একাশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাঁছ কেঁটেও বিক্রয় করছে তাঁরা। জামতলা গ্রামের আবুল কাশেম, মোশারফ হোসেনসহ আরো অনেকে জানান, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তাঁরা একের পর এক পাহাড় কেঁটে যাচ্ছে।

তাছাড়া প্রভাবশালী মহলটি মোড়া বাড়ী এলাকায় ভূমিহীন প্রতিবন্ধি (দুটি পা নেই) রিপন মিয়া (৪০) এর বাড়ীটির পাশের পাহাড় কেঁটে গরু-মুরগীর ফার্ম করার ঘোষনা দেয়। মুড়াবাড়ি এলাকায় সরকারী খাস জমিতে দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ী ঘর নির্মান করে বসবাস করছে প্রতিবন্ধি হারুন মিয়ার পরিবার। এই হারুন মিয়ার ছেলে রিপন মিয়া একজন জন্ম প্রতিবন্ধি। সংসারের চাকা সচল রাখতে পরিবারের নারী সদস্যদের দিয়ে স্থানীয়ভাবে বাঁশ সংগ্রহ করে পরবর্তীতে পরিবারের সকলে মিলে বাঁশের তৈরী নানা উপকরণ টুরকি, ডুলা, খাঁচা, কুলাসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরী করছে প্রতিদিন। এই যখন পরিবারটির জীবন যুদ্ধের ইতিহাস, তখন স্থানীয় দু’জন প্রভাবশালী ভূমি দস্যূ মুজিবুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান ভূমিহীন প্রতিবন্ধি পরিবারের সদস্যদের সরকারী খাস জমি থেকে উচ্ছেদের নানা ফন্দিফিকিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রভাব খাটিয়ে তারা এরই মাঝে প্রতিবন্ধি পরিবারের ঘরের পাশে থাকা সরকারী টিলা থেকে লক্ষাধিক টাকার মাটি কেটে বিক্রি করে দেয়। পাশাপাশি এই সরকারী ভূমিতে অবৈধভাবে গরু ও মুরগীর খামার করার ঘোষনা দিয়ে প্রতিবন্ধি পরিবারের লোকজনদের তাদের ঘর সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দেয়।

এ অবস্থায় চরম আতঙ্কের মাঝে দিন কাটছে প্রতিবন্ধি পরিবারের লোকজনদের। রিপন জানান, আমরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। তারা সরকারী খাস জমির টিলা থেকে মাটি বিক্রি করছে, আবার দখল করতে চাচ্ছে এই টিলাসহ জায়গা। এব্যাপারে বুড়িচং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এদিকে একই ইউনিয়নের কালিকৃষ্ণনগর, গদানগর এলাকার সরকারী বনায়নের পাহাড় কেঁটে মাটি বিক্রয় করে দিচ্ছে স্থানীয় একটি মহল।

এ সকল বিষয়টি জানতে চাইলে বুড়িচং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিনা আক্তার বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাহাড় কাঁটা বন্ধ করেছি। কাঁটা অংশে যে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে আজ (মঙ্গল বার) ভাঙ্গা হচ্ছে। পাহাড় কাঁটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যহৃত থাকবে।

আরো পড়ুন