ছেলের বাসায় নয়-নতুন ঠিকানায় বাবা-মা
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ছয় ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে সবার ছোট অলিউর রহমান খান বাবু। চাকরি করে রাজধানীর এনার্জি প্যাক নামে একটি কোম্পানীতে। নতুন ভাড়া বাসা নিয়েছেন ঢাকার সাভারের নন্দন পার্কের পিছনে। গত রোববার নতুন বাসায় বাবা-মা, স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে উঠার কথা ছিলো বাবুর। বাবুর আরও পাঁচ ভাই ও চার বোন রয়েছে, সব ভাই বোনেরা পৃথক পৃথক সংসার করলেও বাবু থাকতো তার বাবা মাকে নিয়ে এক সাথেই। তাই তাদের ছেড়ে নতুন বাসায়ও যেতে চাননি বাবু। বৌ ও নাতির সাথে ঢাকার নতুন ভাড়া বাসায় যেতে অনেক জোড়াজুরি করেই রাজী করান বৃদ্ধ মা-বাবাকে বাবু। বাবা-মাকে সাথে নিয়ে থাকা এ যেন সীমিত আয়ের সংসারে জীবন্ত একটি স্বপ্ন। কে জানতো অনাকাংখিত দুর্ঘটনায় অচিরেই ধুমরে মুচরে যাবে বাবুর জীবন্ত স্বপ্নটা। সড়কের মরণ কামড়ে বাবা গোলাপ খান (৭০) ও মা আনোয়ারা বেগম (৬০) কে হারিয়ে এখন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাবু, বুক ফেটে কি যেন বলতে চায়, বলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ। একটি দুর্ঘটনা বিপর্যস্ত করে দিয়েছে পুরো পরিবারকে। দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত বাবুর শিউরের পাশেই বসা অলৌকিক ভাবে বেঁচে যাওয়া শিশু ইব্রাহীম (৬মাস) ও স্ত্রী সীমা আক্তার (২০)। শিশু ইব্রাহীমকে খাদের প্রায় ৬ ফুট কাঁদা পানি থেকে উদ্ধার করে উদ্ধার কর্মীরা। দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া বাবু স্ত্রী সীমা আক্তার জানান বিভীষীকাময় সে দিনের কথা। এখনও সে কথা মনে হলে আতঁকে উঠেন তিনি। কখনও ভাবেননি বেঁচে ফিরে আসবেন আবার। ভয়ে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছেন স্বামীর শিউরে পাশে। সাবেক মেম্বার আতাউর রহমান খাঁন জানান, দুর্ঘটনার আগের দিন স্থানীয় বাজারে টি স্টলে সহপাঠীদের থেকে ছোট ছেলের নতুন বাসায় যাচ্ছেন বলে বিদায় নিয়েছেন সহজ ও সরল প্রকৃতির গোলাপ খান। এসময় তার মুখে আনন্দের ছাপের পরিবর্তে ফ্যাকাসে দেখা গেছে। এলাকার সকল সামাজিক কাজে অংশ নিয়ে বুদ্ধি, পরামর্শ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন গোলাপ খাঁন। গোলাপ খাঁন’র স্ত্রী আনোয়রা বেগম অত্যান্ত মিষ্টিভাষী ছিলেন, সকলের সাথে ভালো আচরণ করতেন। নাতী-নাতনীদেরও প্রিয় ছিলেন দাদা-দাদী। প্রতিবেশী মফিজুল ইসলাম খাঁন জানান, গোলাপ খান’র আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো না, তাঁর একটি পুত্র মানসিক প্রতিবন্ধী, অন্য ছেলে মেয়েরা আলাদা সংসার করলেও সব ছেলে মেয়েদের সাথে তাঁর ছিলো ভালো সম্পর্ক। আর্থিক দৈন্যতার কারণে তিনি অর্থ দিয়ে সামাজিক কাজে সহযোগিতা করতে না পারলেও সকল কাজে তিনি এগিয়ে এসেছেন সবার আগে। রোববার রাত ৮ টায় অনুষ্ঠিত নিহত গোলাপ খাঁন ও স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের জানাজায় নামে মানুষের ঢল, আশ পাশের সব এলাকা থেকে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয় জানাজায়। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। উল্লেখ্য, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় যাত্রীবাহী তিশা সার্ভিসের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে শিশু ও স্বামী-স্ত্রীসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২০ জন যাত্রী। গত রোববার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলার নূরীতলায় এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।