দেবীদ্বারে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
দেবীদ্বারের এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৪০দিনের কর্মসূচীর টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে নেমেছেন দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জেলা প্রশাসন। ওই অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ৪নং সুবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তাহের সরকার’র বিরুদ্ধে।
গত বছরের ২৯ এপ্রিল দেবীদ্বার উপজেলার ৪নং সুবিল ইউনিয়নের ২৪ জন দিনমজুর বাদী হয়ে দূর্নীতিদমন কমিশনে দায়েরকৃত অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছেন দুদক। এরই মধ্যে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তাগন এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক প্রতিনিধি গত জানুয়ারী এবং চলতি ফেব্রুয়ারী মাসে ৩দফা সরেজমিনে এসে তদন্ত করে যান। চলতি বছরের গত ২০ ও ২২ জানুয়ারী দিনব্যাপী দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুমিল্লা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক ও অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা আহমেদ ফরহাদ’র নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধানী দল দু’দফা তদন্ত করে যান।
তদন্তকালে আরো উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিদর্শক মোঃ মোফাজ্জল হায়দার, সড়ক ও জনপদ বিভাগ গৌরীপুর শাখার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাফরুল হায়দার, দেবীদ্বার উপজেলার সাবেক প্রকল্প কর্মকর্মা ইউনুছ মিয়া, কুমিল্লা ময়নামতি শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আল আমিন, দেবীদ্বার উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, প্রকল্প বাস্তবায়ন শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল ইসলাম, সার্ভেয়ার মোঃ মোয়াজ্জেম হোসাইন, এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলার ৪নং সুবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আবু তাহের সরকার, অভিযোগকারী আ’লীগ সুবিল ইউনিয়ন কমিটির সাবেক সাধারন সম্পাদক গোলাম সারোয়ার মুকুল ভূঁইয়া, মোঃ আলাউদ্দিন ও আব্দুল কুদ্দুস প্রমূখ। অপর এক অভিযোগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবাসী কল্যাণ শাখার সহকারী কমিশনার তানজিমা আঞ্জুম সোহানিয়া’র নেতৃত্বে একটি তদন্তকারী দল তদন্ত করে যান।
৪০দিন কর্মসূচী সম্পর্কে ২৪ অভিযোগকারীদের মধ্যে ওয়াহেদপুর গ্রামের মমতাজ বেগম, রেহেনা বেগম, নারায়নপুর গ্রামের ইসমাইল হেসেন, জামাল হোসেন, আব্দল্লাহপুর গ্রামের মিজান, সুলতা মোল্লা বলেন, ওরা এ বিষয়ে অবগত ছিলেননা, ওরা কেউ কাজ করেননাই, টাকাও নেননি কিন্তু তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর সহ জাল স্বাক্ষরে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তলন হয়েগেছে বলে জানতে পারেন। তারা বলেন, ৪০দিন কর্মসূচীর আওতায় দিনমজুরদের প্রতি অর্থবছরে জনপ্রতি ৮হাজার টাকা করে ৩অর্থবছরে ২৪হাজার টাকা করে ২৪৮জনকে ৫৯লক্ষ ৫২হাজার টাকা দেয়ার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান আবু তাহের ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮, ২০১৮-২০১৯ইং অর্থবছরে টাকা আত্মসাৎ করে ফেলেছেন। ওই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দিন মজুরের তালিকায় আছেন,- ওয়াহেদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাজী মামুনুর রশীদ এবং একই বাড়ির সিএনজি চালক কাজী জহিরের নামও রয়েছে।
অপর অভিযোগকারী আ’লীগ সুবিল ইউনিয়ন কমিটির সাবেক সাধারন সম্পাদক গোলাম সারোয়ার মুকুল ভূঁইয়া বলেন, ৪০দিনের কর্মসূচীর আওতায় গত ৩অর্থবছরে কোন কাজ হতে দেখি নাই। কোন মেম্বারও কাজ করেন নাই, দুদক এবং জেলা প্রশাসকের বরাবরে অভিযোগের পর চলতি বছরে কিছু কাজ দিলেও তাও সঠিক ভাবে হচ্ছেনা। তাছাড়া ইউপি চেয়ারম্যানের ভয়ে ইউপি মেম্বার কেন, এলাকার সাধারন মানুষজন মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেনা। এ যেন যে যেমন করে লুটের রাজত্ব কায়েম করছে।
সুবিল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, চলতি অর্থ বছরে ৪০দিনের কর্মসূচীর কিছু কাজ পেলেও ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮, ২০১৮-২০১৯ইং অর্থ বছরের কোন কাজ চেয়ারম্যান দেন নাই। গত বছর সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবীন্দ্র চাকমা আমাদের ডেকে নিয়ে বললেন, আপনাদের ৪০দিনের কর্মসূচীর কাজের কি অবস্থা, তখন বললাম স্যার আমরাতো কোন কাজ পাইনি, কাজ করিও নাই, কাজের অবস্থা বলব কিভাবে ? তখন ইউএনও স্যার কাগজপত্র বের করে বলেন, এই প্রজেক্টের চেয়ারম্যান আপনি, কাজ করেন নাই বলেন কেন ? তখন বললাম স্যার আপনার কাছেই এ বিষয়ে জানলাম। এ অভিযোগ আরো কয়েকজন ইউপি মহিলা ও পুরুষ মেম্বার নাম না প্রকাশের শর্তে স্বীকার করে বলেন,- আমরা কঠিন চাপে আছি।
এ ব্যপারে অভিযুক্ত সুবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তাহের সরকার বলেন, ৪০দিনের কর্মসূচী প্রকল্পের স্ব স্ব ইউপি মেম্বারগন প্রকল্প চেয়ারম্যান, তাদের এলাকার উন্নয়নে তাদের লোক দিয়ে কাজ করেন। এখানে কাজ না করে দিনমজুরের ভোটার নম্বর দিয়ে জাল স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন করার বিষয়টি আমার নয়। আমি সকল ইউনিয়নের দিনমজুর চেনার কথাও নয়, তবে অনেকের নাম তালিকাভূক্ত থাকলেও তারা কাজ করেননা, বিকল্প লোক দিয়ে কাজ করাতে হয়।
এব্যাপারে সাবেক দেবীদ্বার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইউনুছ মিয়া বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তাঘাটের উন্নয়নে কিছু কাজ আমার প্রকল্পের মাধ্যমে হয়। বিশেষ করে ৪০দিনের কর্মসূচীর কাজের বিষয়ে দুদকে অভিযোগকারী ২৪ দিনমজুর তারা কাজও করে নাই, টাকাও নেয়নি, অথচ তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর সহ জাল স্বাক্ষরে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তলন হয়ে যাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প আসে সেগুলো অনুমোদন দিয়ে ব্যাংকে পাঠাই, একজনের টাকা অন্যজনকে দেয়া বা জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর সহ জাল স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি ব্যাংক সংশ্লিষ্টরাই বলতে পারবেন।