কুমিল্লায় চিকিৎসকের অবহেলায় ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ

কুমিল্লা মহানগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় ময়নাল হোসেন সাগর নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপারেশন ও চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ এনে গত বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, ডিসি, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন ব্যবসায়ী ময়নালের হোসেনের ভায়রা ভাই ও নগরীর রানীর দিঘীর পাড় এলাকার বাসিন্দা জালাল আহমেদ।

অভিযোগে নগরীর ঝাউতলাস্থ শহীদ সামছুল হক সড়কের কিডনী ল্যাপারস্কপি স্পেশালাইজড হসপিটাল ও তাছলিমা মেটার্নিটি এন্ড ফার্টিলিটি কেয়ার সেন্টারের মালিক পরিচয়দানকারী ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: এমএম হাসানের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ এনে রোগীর এক স্বজন যে অভিযোগ করেছেন তা পেয়েছি, এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

লিখিত অভিযোগে জানা যায়, গত ১৭ মে জেলার বুড়িচং উপজেলার কাঁচারিতলা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ময়নাল হোসেন তার স্ত্রী ছালমা আক্তারকে নিয়ে তার ভায়রা ভাই দেবিদ্বারের জালাল আহমেদের কুমিল্লা নগরীর বাসায় আসেন। কিন্তু সেখানে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে গত ১৯ মে তাকে কুমিল্লা মহানগরীর ঝাউতলার কিডনী ল্যাপারস্কপি স্পেশালাইজড হসপিটালে ভর্তি করেন। সেখানে ওই হাসপাতালের মালিক পরিচয়দানকারী ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. এমএম হাসানকে দেখানোর পর তিনি ময়নাল হোসেনকে কিছু পরীক্ষা করাতে বলেন। পরে তিনি রিপোর্ট দেখে ময়নাল হোসেনের কিডনী ও মূত্রথলিতে পাথর থাকাসহ প্রস্রাবের রাস্তায় মাংস বৃদ্ধির কথা জানান। জরুরী অপারেশন না করলে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হবে বলে নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখানো হয়।

অভিযোগকারী জালাল জানান, রোগী ময়নাল হোসেনের ডায়াবেটিক সর্বশেষ রিপোর্ট ১৩ পয়েন্টের বিষয়টি পুনরায় ডাক্তার হাসানকে অবহিত করে এই সময়ে অপারেশন করা রোগীর জন্য ঝুঁকি কিংবা ওষুদে সমস্যা শেষ হবে কি না জানতে চাওয়া হয়? এমন কথায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ডাক্তার আমি, নাকি আপনারা? দ্রুত অপারেশন না করলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে বলে তিনি জানান। এতে আমরা অনেকটা নিরুপায় হয়েই ডাক্তারের কথায় রাজি হই।

পরে ২২ মে সেই হাসপাতালেই ময়নাল হোসেনের কিডনী, মূত্রথলীসহ ৩টি অপারেশন করা হয়। এক পর্যায়ে রোগীর অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। রোগী নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে এমন অবস্থা টের পেয়ে ও অবস্থা বেগতিক দেখে গত ২৪ মে অন্য কোনো হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়ার জন্য রেফার্ড করা হয়। পাশাপাশি ১ লাখ টাকা বিল রেখে দ্রুত হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়।

পরে ২৫ মে ময়নাল হোসেনকে ঢাকার ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুমিল্লায় করা অস্ত্রপচারের স্থানে ইনফেকশন দেখা দেয়ায় দ্রুত রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটে। ফলে ২৭ মে সেই হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

মৃত ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী সালমা হক লিপি জানান, আমার স্বামীর চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে ডাক্তার এমএম হাসান বলেন, ওই রোগীর ডায়াবেটিকের মাত্রা উঠা-নামা করছিল। অপারেশনে ভুল ছিল না, অপারেশনের পর সে খুব ভাল ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে রোগীর অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়ায় আমরা তাকে অন্যত্র নেয়ার সুপারিশ করি।

সূত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ

আরো পড়ুন