কুমিল্লা নগরীতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগী

কুমিল্লা মহানগরীর রেড জোন চিহ্নিত ৪ ওয়ার্ডে চলছে কঠোর লকডাউন। গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এলাকাভিত্তিক এ লকডাউনে থমকে গেছে ওইসব এলাকার জীবনযাত্রা। সেচ্ছাসেবক বাহিনীর কঠোর নজরদারীতে দিনে বাসা থেকে লোকজন বাহির না হওয়ায় চিরচেনা কোলাহল মুখর মহল্লার গলিগুলোতে নেমে এসেছে শুনসান নিরবতা। রাতে রূপ নেয় ভূতুরে অবস্থা।

এদিকে নগরীতে ক্রমন্বয়ে আশংকাজনক হারে করোনা আক্রান্ত ও মৃতে্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় পুরো কুমিল্লা মহানগরীকে লকডাউন করার দাবি তুলেছে সচেতন মহল।

কুমিল্লা নগরে হু হু করে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে করোনা রোগী। আজ মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছে ২৮৭৩ জন। এর মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (নগরে) ২৭টি ওয়ার্ডে আজ মঙ্গলবার (২৩ জুন) পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন মোট ৭৬৩ জন।

নগরবাসীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবে, নয়তো ঢাকা। তাতে দেখা যাচ্ছে, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পিসিআর পরীক্ষায় প্রতি ১০০টি নমুনার মধ্যে ৩০টিই করোনা ‘পজিটিভ’ হচ্ছে। আর ঢাকায় পাঠানো প্রতি পাঁচজনের নমুনায় একজন করে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন।

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কুমিল্লা নগরীর চারটি ওয়ার্ডকে রেড জোন চিহ্নিত এলাকা হিসেবে লকডাউন ঘোষণা করে শুক্রবার (১৯ জুন) দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে লকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে। চলবে আগামী ৩ জুলাই রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। ওযার্ড সমূহ হচ্ছে ৩, ১০, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড। লকডাউন রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে শুক্রবার দুপুরে গণবিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়।

গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, রেড জোন এলাকার বসবাসরত ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকরা পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে শুধুমাত্র একবার বের হতে পারবেন এবং একবার প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কেউ বের হতে পারবেন না। এসব এলাকায় গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। শুধু ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। ওয়াক্ত নামাজের ক্ষেত্রে পাঁচ জন এবং জুম্মার নামাজের ক্ষেত্রে ১০ জন অংশগ্রহণ করতে পারবেন। পুলিশ, র্যাব, স্বেচ্ছাসেবক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সার্বক্ষণিক এসব বিষয় তদারকি করবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

তবে সচেতন নগরবাসী করোনা রোধে এই ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট নন জানিয়েছেন। তাঁরা পুরো নগরীকে অন্তত ১৪ দিন লকডাউন করার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে নগরের সব প্রবেশমুখ যত্র দ্রুত সম্ভব বন্ধ করে দিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কঠোর ব্যবস্থা নিলে তবেই নগরবাসীকে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ থেকে বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করছেন তাঁরা। জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন মো. সাহাদাত হোসেন বলেন, নগরে ঊর্ধ্বগতিতে বাড়ছে রোগী। এখনই পুরো নগরীকে রক্ষার কথা ভাবা উচিত।

প্রবীন সাংবাদিক মো. লুৎফুর রহমান বলেন, “পুরো সিটি করপোরেশনের সব ওয়ার্ডেই কমবেশি করোনা রোগী আছেন। এ অবস্থায় চার ওয়ার্ড লকডাউন করে যাঁদের সুরক্ষিত করা হয়েছে, তাঁরা তো ১৪ দিন পর অরক্ষিত ওয়ার্ডের মানুষের সঙ্গে মিশে পূর্বের অবস্থায় চলে যাবেন। এ অবস্থায় আমার মতে পুরো নগরী লকডাউন করা হোক।”

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহসান উদ্দিন টুটুল বলেন, ‘কুমিল্লা নগরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে কমপক্ষে ১৪ দিনের জন্য হলেও পুরো নগর লকডাউন করতে হবে। নগরের প্রবেশপথ আলেখারচর, শাসনগাছা, পদুয়ারবাজার, চৌয়ারা বাজার, চকবাজার ও চাঁনপুর এলাকা বন্ধ করে দিতে হবে। শুধু হাসপাতালে যাওয়ার ব্যবস্থা ও খাদ্যসামগ্রীর গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে। প্রত্যেক নেতা ও বিত্তবান লোকজন নিজ নিজ লোকদের দিয়ে ১৪ দিন করে একেকটি নিম্নবিত্ত পরিবারের খাওয়ার দায়িত্ব নেবেন। সবায় এগিয়ে আসলে করোনা সংক্রমন থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করা সম্ভব।

এদিকে, কুমিল্লায় নতুন করে একদিনে ৮১ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছে ২৮৭৩ জন। নতুন মৃত্যু ঘটেছে ২ জনের। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃত্যুবরন করেছে ৮৫ জন।

নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সিটি করপোরেশন- ৪৫, চৌদ্দগ্রাম- ১২, বুড়িচং- ৪, দেবিদ্বার- ৯, সদর দক্ষিণ- ৩, নাঙ্গলকোট- ৫, লাকসাম- ১, চান্দিনা- ১, মনোহরগঞ্জ- ১ জন।

আরো পড়ুন