কুমিল্লায় গোমতী বাঁধের বিকল্প সড়কটির বেহাল দশা
কুমিল্লা মহানগরীর প্রধান সড়কগুলোর মুখে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকায় নিরাপদে নগরীতে প্রবেশ ও বের হতে সিটিকরপোরেশনের পক্ষ থেকে ২০১৮ সালে জেলার প্রধান নদী গোমতীর প্রতিরক্ষা বাধেঁর উপর দিয়ে একটি বিকল্প সড়ক নির্মান করা হয়েছিল। এতে দেশের বিভিন্ন জেলা বা উপজেলা থেকে নিরাপদে এই বিকল্প সড়কটি ব্যবহার করে লোকজন যানবাহন নিয়ে কোন ভোগান্তি ছাড়াই নগরীতে আসা-যাওয়া করতো। কিন্তু একটি চক্র নদীর ভিতর থেকে সংগৃহীত বালু ও মাটি বড় বড় ডাম্প ট্রাকযোগে বাঁধের উপর দিয়ে বহন করায় সড়কটি দিন দিন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সৃষ্ট হয়েছে বড় বড় খানাখন্দনক।
দেশের অন্যতম প্রাচীন জনপদ কুমিল্লা। বর্তমানে এটা মহানগরী। বিভিন্নস্থান থেকে নগরীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার প্রধান সড়কগুলো হচ্ছে শাসনগাছা ও চকবাজার এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন ট্রাঙ্ক রোডজুড়ে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল, টমসমব্রীজ জাঙ্গালীয়ায় আন্তঃজেলা বাস ও সিএনজি অটোরিক্সা ষ্ট্যান্ড থাকায় সবসময় নগরীতে প্রবেশ ও বের হতে যানবাহন চালকদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হতো। ফলে যানজট আর জনদুর্ভোগ ছিল মানুষের নিত্যদিনের সাথী। এ থেকে মুক্তি দিতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জেলার প্রধান নদী গোমতীর দক্ষিণ পাড়ের প্রতিরক্ষা বাঁধের উপর ২০১৮ সালের শুরুতে একটি বিকল্প সড়ক তৈরী করে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ময়নামতি সেনানিবাস সংলগ্ন আমতলী থেকে ভারত সীমান্তবর্তী জেলার একমাত্র বিবিরবাজার স্থল বন্দর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি নির্মানের পর নিরাপদে ব্যক্তিগত যানবাহনে করে নগরীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি এই সড়কটি ব্যবহার করে পাশ্ববর্তী বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার হাজার হাজার মানুষও ব্যক্তিগত যানবাহনে করে মহাসড়ক পথে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে। তাছাড়া “বিবিরবাজার”স্থল বন্দর হয়ে ভারতগামী বিভিন্ন প্রকার রপ্তানী পণ্য বোঝাই কিছু গাড়িগুলোও যাতায়াতে এই সড়কটি ব্যবহার করে।
নদীতীরের আলেখারচর এলাকার জগির নামের এক ব্যক্তি জানান, বড় বড় ডাম্পট্রাকগুলো মাটি বা বালু নিয়ে বাঁধের ভিতর থেকে বহন করে সড়কটির উপর দিয়ে বেপরোয়া গতিতে চালানোর ফলে সড়কটি নির্মানের পর খুব কমসময়ের মধ্যে খানাখন্দক সৃষ্টি হতে থাকে। এতে দিন দিন সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। বাঁধের উপর এত দ্রুতগতিতে চালানোর কারণে সড়কটির ক্ষতির পাশাপাশি বায়ূদুষনেও মানুষ বিপর্যস্ত। ফলে এরই মাঝে আমতলী, আলেখারচর, দুর্গাপুর, পালপাড়া, বানাসুয়া, বদরপুর, ভাটপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য বড় বড় খানা-খন্দকের সৃষ্ট হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়ছে গাড়ি চালকরা।
স্থানীয় নদীতীরের একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডাম্প ট্রাকগুলোর কারণে শুধু সড়কটির ক্ষতি হচ্ছেনা,অবাধে নদীর ভিতর থেকে মাটি ও বালু বহনের কারণে প্রতিরক্ষা বাঁধের বহুস্থানেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এঅবস্থায় নদী তীরবর্তী এই বিকল্প সড়ক ও প্রতিরক্ষা বাঁধ রক্ষায় ডাম্প ট্রাক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে সাধারন মানুষ।
বিষয়টি জানতে চাইলে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন. কোন অবস্থাতেই ডাম্পট্রাকে করে মাটি পরিবহনের কারণে সড়কসহ বাঁধের ক্ষতি করতে পারেনা। আমরা অবশ্যই এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।