কুমিল্লায় করোনা সার্টিফিকেট সংগ্রহে ভোগান্তিতে প্রবাসীরা
প্রবাসী অধ্যুষিত কুমিল্লা অঞ্চলের বিদেশফেরত ব্যক্তিরা করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন। দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে নমুনা পরীক্ষার সিডিউল পেতে। এরপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিপোর্ট পাচ্ছেন না তারা। সরকার বিদেশগামীদের জন্য কোভিড নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করলেও সব জেলায় করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় প্রবাসীদের ভুগতে হচ্ছে। বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন ফি, নমুনা গ্রহণ ও সার্টিফিকেট নিতে নিয়মের বেড়াজালে যাত্রার আগে ঘাম ঝরিয়ে টানা তিন দিন ছুটাছুটি করছেন তারা। কিন্তু সময়মতো করোনা পরীক্ষা করে রিপোর্ট নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে না পারায় বিদেশযাত্রা বাতিল হচ্ছে অনেকের।
জানা গেছে, বিদেশযাত্রীদের করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য সরকারিভাবে একমাত্র কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ছয় জেলার প্রবাসীদের নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা ছাড়াও অপর পাঁচ জেলা নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনীর প্রবাসীদেরও কুমিল্লায় আসতে হচ্ছে এই পরীক্ষার জন্য।
প্রবাসীরা বিমানের টিকেট কনফার্ম করার পর তিন দিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে হাতে পান সার্টিফিকেট। গত (২০ জুলাই) সোমবার থেকে কুমিল্লায় শুরু করা হয় নমুনা সংগ্রহ। বিদেশযাত্রীদের করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার একমাত্র স্থান হচ্ছে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাব। গত মঙ্গলবার থেকে ওই ল্যাবে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন ও নমুনা সংগ্রহ হয় কুমিল্লা সদর হাসপাতালের জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে। রিপোর্টও দেওয়া হচ্ছে এই কার্যালয় থেকে। রেজিস্ট্রেশন, নমুনা প্রদান ও রিপোর্ট গ্রহণের জন্য পরপর তিন দিন ব্যয় করতে হচ্ছে বিদেশযাত্রীদের। এ কারণে ভোগান্তি বেড়েছে। অনেক বয়স্ক যাত্রীকেও বাধ্য হয়ে আসতে হচ্ছে।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিস জানায়, কুমিল্লায় ছয় জেলার বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের সরকারি নিয়ম কানুন মেনে করোনা সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। গত ২০ জুলাই থেকে প্রায় ৫০০ প্রবাসীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে ৪০০ প্রবাসীকে। তার মধ্যে নয় জন প্রবাসীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রবাসীরা করোনা সার্টিফিকেটের জন্য নমুনা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। সামাজিক দূরত্ব না মেনে লাইনে দাঁড়িয়ে রেজিস্ট্রেশন ও নমুনা দেওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে প্রবাসীরা সার্টিফিকেটের জন্য এসে উল্টো সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন।
ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থেকে আবর আমিরাত (দুবাই) প্রবাসী জসিম উদ্দিন সোমবার কুমিল্লা এসেছেন করোনা সার্টিফিকেটেরে জন্য। তিনি গত শনিবার কুমিল্লা সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নমুনা দিয়ে গেছেন। তার ফ্লাইট সোমবার বিকাল ৫টায়। তিনি বলেন, ‘সোমবার ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে ফেনী থেকে কুমিল্লা এসেছি করোনা সার্টিফিকেট নিতে। মাথায় চিন্তা রিপোর্ট পজিটিভ-নেগেটিভ নিয়ে। সকাল ১১টা পর্যন্ত বসে আছি সার্টিফিকেটের জন্য। রিপোর্ট পেলেই যেতে হবে ঢাকা বিমান বন্দরে।’ তার দাবি, হয় সময় বাড়ানো হোক, না হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
অন্যদিকে গত শনিবার মিজানুর রহমান নামে এক প্রবাসী নমুনা দিতে এসে মলমপার্টির খপ্পরে পড়েছেন কুমিল্লা নগরীর চকবাজার বাস স্ট্যান্ডে। তিনি চৌদ্দগ্রাম মিয়া বাজার থেকে এসেছেন। ওইদিন তার ভাই নূরুন নবী জানান, অনেক যুদ্ধের পর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নমুনা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মলমপার্টি কবলে পড়ে তার ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে ফেনী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার আবর আমিরাত (দুবাই) যাওয়ার কথা। ফ্লাইট বিকাল ৫টায় কিন্তু ৪০ ঘণ্টায় করোনা সার্টিফিকেট পাননি।
লক্ষ্মীপুর থেকে নমুনা দিতে এসেছেন বাহরাইন প্রবাসী ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সকাল ৮টায় এসে দাঁড়িয়ে আছি নমুনা দেওয়ার জন্য। রেজিস্ট্রেশন হলেও ৬ ঘণ্টা অপেক্ষার পরও নমুনা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ২৯ তারিখ আমার ফ্লাইট। আজ নমুনা দিয়ে ফ্লাইটের আগের দিন সার্টিফিকেট পাবো কি না সেই চিন্তায় ঘুম আসছে না। কারণ বিমানের টিকিট কেটে ফেলছি।’ তার দাবি, রেজিস্ট্রেশন, নমুনা সংগ্রহ ও রিপোর্ট দেওয়া হলে তাদের দুর্ভোগ কমবে।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘কুমিল্লাসহ ছয় জেলায় এই পর্যন্ত প্রায় ৫০০ প্রবাসীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৪০০ জনকে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। যাদের পজিটিভ এসেছে তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, প্রবাসীদের যেসব সমস্যা হচ্ছে সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা হবে। তবে দালাল কিংবা কারও দ্বারা কেউ যাতে প্রতারিত না হন সে কারণে তাদের নিজেদের আসতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি ৩০ কিংবা ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে প্রবাসীদের করোনা সার্টিফিকেট দিতে।