নিমসার পাইকারি বাজারে কমেছে সব্জির দাম, লাগাম ছাড়া খুচরা বাজার
দেশের অন্যতম বৃহৎ সব্জির পাইকারী বাজার কুমিল্লার নিমসার কাঁচাবাজার। প্রতিনি দেশের বিভিন্নস্থান থেকে শত শত ট্রাক, কাভার্ডভ্যান বোঝাই সব্জি নিয়ে পাইকাররা এই বাজারে মালামাল নিয়ে আসে বিক্রির জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে সব্জির অস্বাভাবিক মূল্য থাকলেও শীতের সব্জির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। তবে খুচরো বাজারে এখনো রয়ে গেছে অতিরিক্ত মুল্য। এঅবস্থায় ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও ক্রেতারা ভালো নেই।
সরেজমিন কুমিল্লার নিমসার বাজার ঘুরে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, দেশের অন্যতম বৃহৎ এই সব্জির বাজারটি দেশের প্রধান জাতীয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসার এলাকায়। দীর্ঘ প্রায় ৪ দশকেরও বেশী সময় ধরে বাজারটি পুরো জেলার পাশাপাশি আশপাশের বিভিন্ন জেলার পাইকার ও খুচরা বাজারে সব্জি সরবরাহে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। প্রতিদিন রাত বাড়ার সাথে সাথে বাজারের ব্যস্ততা বাড়ে। আবার দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে বাজারের ব্যস্ততা কমে যায়।
দেশের রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাও, গাইবান্ধা, রাজশাহী, মেহেরপুর, নাটোর, নওগা, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোহর, ঝিনাইদহ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুরসহ স্থানীয়ভাবে জেলায় উৎপাদিত শাক-সব্জির বিরাট একটা অংশ পাইকাররা প্রতিদিনই নিয়ে আসে এই বাজারে। পরে জেলাসহ আশপাশের অন্য জেলার পাইকাররা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে খুচরা বিক্রির জন্য।
বাজারে কথা হয় পিয়াস বানিজ্যালয়ের মালিক খোরশেদ আলম,পাইকার মাহফুজ আহমেদ ,শরিফ বানিজ্যালয়ের মালিক শরীফুল ইসলাম,নোয়াখালী বানিজ্যালয়ের মহিউদ্দিন, বারআওলিয়া বানিজ্যালয়ের আবুল বাশার, মোহসেন আউলিয়া বানিজ্যালয়ের পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেনসহ একাধিক পাইকারের সাথে। তারা জানান,৮/১০ দিন আগেও যেখানে সব্জির দাম অস্বাভাবিক ছিল,সেখানে বর্তমানে শীতের সব্জির ব্যাপক আমদানী হওয়ায় পাইকার বাজারে মূল্য অনেকটা কমে গেছে।
তারা জানান, এই ক’দিন আগে যেখানে শশা ৩৫/৪০ টাকা ছিল প্রতি কেজির মুল্য সেখানে বর্তমানে ২০/২২ টাকা, ৩০/৩৫ টাকার ঝিঙ্গা ১৮/২০ টাকা,৩০/৩৫ টাকার ধুন্দুল ১৭/১৮ টাকা,৩০ টাকার মুলা ৪/৫ টাকা, ৫০/৫৫ টাকার পটল ২৫/২৬ টাকা,৩৫/৪০ টাকার বেগুণ ১২/১৫ টাকা,৫০ টাকার গোল বেগুণ ৩০ টাকা,৪০/৪৫ টাকার সাদা গোল বেগুন ১৮ টাকা,২৫/২৬ টাকার মিষ্টি কুমড়ো ১৪/১৫ টাকা,২৫/২৬ টাকার পেপে ১৪/১৫ টাকা,৩০/৩২ টাকার কচুর ছড়া ২০/২১ টাকা, ৭০/৭৫ টাকার ফুল কপি ১৪/১৫ টাকা,৩৫/৪০ টাকা প্রতি পিছ বাধা কপির মুল্য কমে ১৫/১৬ টাকা, ১০০/১১০ টাকার টমেটো ৭০ টাকায়,৪০/৪৫ টাকার কাচা টমেটো ২৫/২৬ টাকা,৬০/৭০ টাকার প্রতি পিছ লাউ ২৫/৩০ টাকা,৭০/৮০ টাকার শিম ২২/২৩ টাকা,৮০/৯০ টাকার বরবটি ৪০/৪৫ টাকা,২০০ টাকার কাচামরিচ ৮০ টাকা,৪০/৪৫ টাকার চিচিঙ্গা ২০/২২ টাকা,৩৮/৪০ টাকার কচুলতি ২০/২২ টাকা,৮০/১০০ টাকার ধনে পাতা ২৫/৩০ টাকা, ৩০/৩২ টাকার ডাটা ১৩/১৪ টাকা, ২০ টাকার লালশাক ৫ টাকা,১৮/২০ টাকার কুমড়ো শাক ৭/৮ টাকা,৩০/৩৫ টাকার পালং শাক ১৫ টাকায় নেমে এসেছে। এতে পাইকার বাজারে বিভিন্নস্থান থেকে আসা খুচরো ক্রেতারা খুশি হলেও তারা বিভিন্নস্থানে নিয়ে এখনো উচ্চ মুল্যে এসব সব্জি বিক্রি করায় সাধারণ ক্রেতাদের মনে স্বস্তি নেই।
নিমসার থেকে ৮ কিলোমিটার দুরের ময়নামতি সেনানিবাস কাঁচাবাজার। এখানে ঘুরে দেখা গেছে পাইকার মুল্যের প্রায় দ্বিগুণ দামে খুচরো বিক্রেতারা সাধারন ক্রেতাদের কাছে এসব সব্জি বিক্রি করছে। এপ্রসঙ্গে জানতে চাইলে সেনানিবাস এলাকার একাধিক দোকানী জানান, নিমসার থেকে মালামাল ক্রয় করে আনতে সেখানে খাজনাসহ অতিরিক্ত পরিবহন ভাড়ার কারনে কিছুটা বেশী মুল্যে সব্জি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। ফলে দেখা যায়, খুচরো বাজারে লতি ৪০ টাকা,শিম ৪৫ টাকা,প্রতি পিছ লাউ ৫০/৬০ টাকা,এক কেজি ওজনের ফুল কপি ৪০/৪৫ টাকা,বাধা কপি একই মুল্যে,কচুরছড়া ৪০ টাকা,মিষ্টিকুমড়ো ৩৫/৪০ টাকা,পেপে ২৫/৩০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে।
বাজারে ক্রয় করতে আসা ময়নামতির সমেষপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর, সিন্দুরিয়াপাড়ার বাবলুসহ একাধিক ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, নিমসার বাজারের সাথে এখানকার বাজারের মুল্য প্রায় দ্বিগুণ। তারা আরো বলেন,বাজার মনিটরিং নিয়মিত হলে খুচরা বিক্রেতারা এতটা বেশী দামে বিক্রির সুযোগ পেতোনা। তারা আরো বলেন,যে কৃষক এই সব্জি উৎপাদন করেছে,তারা কিন্তু ন্যায্য দাম পায়নি। কুমিল্লা মহানগরীর বাজারগুলোতেও একই অবস্থা। সেখানেও পাইকার বাজারের তুলনায় বেশ অতিরিক্ত মুল্যে সব্জি ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে ক্রেতারা। মোট কথা বাজারে শীতের আগমনে সব্জির সরবরাহ বাড়লেও সেটার সুফল পাচ্ছেনা ক্রেতাসাধারণ।