কুমিল্লা টাউন হল ভাঙা নিয়ে গণশুনানির সিদ্ধান্তে এমপি সীমার ক্ষোভ

কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন, সেনানিবাস) আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে এবার নানা অভিযোগ তুললেন একই দলের সংরক্ষিত মহিলা সাংসদ আঞ্জুম সুলতানা। রোববার বেলা ১১টায় কুমিল্লা নগরের নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকার মডার্ন কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন। এর আগে ৩ ডিসেম্বর কুমিল্লা টাউন হলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময়সভায় সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করেন। সাংসদ আঞ্জুম সুলতানা আফজল খানের মেয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আফজল খানের বড় ছেলে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মাসুদ পারভেজ খান ইমরান ও মেজো ছেলে আজম খান নোমান।

সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আঞ্জুম সুলতানা একই কমিটির সহসভাপতি। বাহাউদ্দিনের সঙ্গে ৩৬ বছর ধরে আফজল খান পরিবারের রাজনৈতিক বিরোধ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাংসদ আঞ্জুম সুলতানা বলেন, আফজল খান কুমিল্লা মডার্ন হাইস্কুল থেকে ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যমূলক। বাহাউদ্দিনের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সব নথিপত্র উনি নিয়ে গেছেন। ওনার কাছে কাগজপত্র। উনি ওই কাগজ ঘঁষামাজা করে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও চ্যালেঞ্জ জানাতেই পারেন।’

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন বলেন, ‘আমি মডার্ন স্কুলের কেউ না। আমি শিক্ষকদের এমপিও বাতিল করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি, দুর্নীতি বন্ধ করেছি, চুরি বন্ধ করেছি। ওই কারণে ওরা আমার বিরুদ্ধে কথা বলছে।’

সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ আঞ্জুম সুলতানা বলেন, কুমিল্লার গোমতী নদী থেকে জোরপূর্বক বালু উত্তোলন, বিভিন্ন দপ্তরের অফিস ও স্থাপনা চলছে তাঁর অনৈতিক নির্দেশে। এ বছর এমপি বাহাউদ্দিন সাহেবের লোকজন গোমতী নদীর বালুমহালের ইজারা না পাওয়ায় তিনি বেসামাল হয়ে পড়েছেন। তিনি বালুমহাল বন্ধ করার হুমকি দেওয়ার কে? ১২ বছর তাঁর লোকজন বালুমহাল গিলে খেয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন বলেন, ‘গোমতীতে এখন আর বালু নেই। পাড়ের মাটি কাটা হচ্ছে। ডিসিকে বলেছি এটা রোধ করতে। প্রয়োজনে আমি ডিসিকে নিয়ে যাব।’

আঞ্জুম সুলতানা বলেন, সারা জীবন মানুষকে তিনি (বাহাউদ্দিন) ষড়যন্ত্রের মিথ্যা গল্প শুনিয়েছেন। অথচ সামান্য ক্ষমতা পেয়েই পুরো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিজের পরিবার, সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের দিয়ে কুক্ষিগত করেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাঁর আত্মীয়, মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক তাঁর আপন ভাতিজা, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তাঁর ভাতিজা, কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তাঁর ভাতিজা।

এ প্রসঙ্গে আ ক ম বাহাউদ্দিন বলেন, ‘আমার পরিবারের অন্তত ৩০ জন রাজনীতি করেন। সবার পদ নেই। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবাই রাজনীতি করেছেন। তাঁরাও বিভিন্ন কমিটিতে আছে।’

আঞ্জুম সুলতানা বলেন, ‘কুমিল্লা টাউন হলের উন্নয়ন আমরা চাই। কিন্তু এর কাঠামো ঠিক রেখে উন্নয়ন করতে হবে। এটা ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। এটা ভাঙার জন্য বাহাউদ্দিনের এত তোড়জোড় কেন? টাউন হল এলাকায় উনার লিজের মার্কেট আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাংসদ বাহাউদ্দিন ভিন্নমতের লোকদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তাঁদের রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করে নেন। সম্প্রতি খুন হওয়া জিল্লুর হত্যাকাণ্ডকে তিনি বলছেন ভাগাভাগি নিয়ে। এটা মোটেই সত্য নয়। বাহাউদ্দিন আমার বাবা আফজল খান ও আমাদের পরিবার নিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগ থেকে সব অনুষ্ঠানে কথা বলেন। এটা কেন? আফজল খান কি এখন রাজনীতিতে আছেন?’

এ প্রসঙ্গে সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন বলেন, ‘আফজল খান পরিবারের সাহস থাকলে ওরা আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করত। এমপি হিসেবে আফজল খানের স্ত্রীর এক কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহারে আমিও সুপারিশ করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় ওই সব মামলা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই আমি সুপারিশ করেছি। যুবদল নেতা ইউসুফ মোল্লা টিপুর কোনো মামলায় আমি সুপারিশ করেছি বলে মনে পড়ে না। কোনো একটি মামলায় হয়তো আওয়ামী লীগের কর্মী ও বিএনপির কর্মীরা আসামি হতে পারে, হয়তো সেই ক্ষেত্রে সবারটাই প্রত্যাহার হয়েছে। আমি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছি। আমার সততা নিয়ে কারও প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। ’

সূত্রঃ প্রথম আলো

আরো পড়ুন