কুমিল্লায় বাড়ছে শীতের রোগ
শীতজনিত রোগের প্রকোপ। নবজাতকসহ শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে দ্রুত। কিন্তু কুমিল্লার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর শিশু ও নবজাতক ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় শিশুরোগীরা বঞ্চিত হচ্ছে জরুরি চিকিৎসা সেবা থেকে। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতাল ও সদর জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে এখন নবজাতকসহ শিশুরোগীর সংখ্যা শয্যার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষরা বলছেন, ভর্তি রোগীর প্রায় ১৫ শতাংশই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে গত ৭ দিনের ব্যবধানে প্রায় চার শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে, যেখানে শিশু ও নবজাতক দুই ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা মাত্র ৭৪টি। ভর্তি হওয়া এসব রোগীর মধ্যে গত সপ্তাহে ৫ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। আর শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগীদের অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে স্বজনরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে ছুটছেন।
হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডের ইনচার্জ রোশনারা বেগম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত একমাসে এই ওয়ার্ডে ৯ নবজাতক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে শীতে তাদের মৃত্যু হয়নি। নিউমোনিয়া, অপরিপক্কতা ও কম ওজনের নবজাতক এবং জন্মের সময় মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা মেডিক্যালের নবজাতক ওয়ার্ডে ইনকিউবেটরসহ শয্যাসংখ্যা ২৪, কিন্তু গতকাল সোমবার সেখানে নবজাতক রোগী ভর্তি ছিল ৪০ জন, যা নির্ধারিত বেডের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। একই অবস্থা শিশু ওয়ার্ডেও। ১২টি পেয়িংসহ শিশু ওয়ার্ডের শয্যাসংখ্যা ৫০টি। এইদিন নবজাতক ওয়ার্ডের মতো শিশু ওয়ার্ডেও শিশু রোগী ভর্তি ছিল নির্ধারিত বেডের চেয়ে দ্বিগুণ।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সিদলাই থেকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নবজাতক রোগী নিয়ে আসা মো. রোবেল বলেন, ‘তাদের শিশুটি এই হাসপাতালে জন্ম নেয় গত ৩ ডিসেম্বর। সুস্থ হয়ে জন্ম নিলেও একদিন পরই বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয় নবজাতকটি। আজ ৮-৯ দিন হাসপাতালে ইনকিউবেটরে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে।
বরুড়া থেকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসা এক শিশুর স্বজন মোহাম্মদ আলী জানান, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে তাদের শিশুটি। দুইদিন ভর্তি ছিল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। সুস্থতা না দেখে তারা কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন শিশুটিকে।
রোগীর তুলনায় শয্যাসংখ্যা সংকটের বিষয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের সহকারী পরিচালক ডা. সাজেদা খাতুন বলেন, নবজাতকে ২৪ এবং শিশু ওয়ার্ডে ৫০টি শয্যা রয়েছে। শিশু ও নবজাতক রোগীদের জন্য এই ৭৪টি বেড পর্যাপ্ত নয়। করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হাসপাতালের বড় একটি অংশ কোভিড-১৯ ওয়ার্ড ঘোষণা করায় হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে, যার কারণে ইচ্ছা থাকলেও বেড বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনিতেই ৫০০ বেডের এই হাসপাতালে প্রতিদিনই ৯ শ থেকে এক হাজার রোগী ভর্তি থাকে।