দুর্ঘটনা এড়াতে কুমিল্লায় আন্ডারপাস-ইউলুপ, খরচ ৫৬৮ কোটি টাকা
দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের কুমিল্লাতে তিনটি আন্ডার পাস ও একটি ইন্টারসেকশন ইউলুপ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ উদ্যোগের আওতায় জাতীয় এই মহাসড়কের ৯৩তম কিলোমিটার পদুয়ার বাজারে তিন রাস্তার মোড়ে নির্মাণ করা হবে আন্ডারপাসসহ ইউলুপ। অন্যদিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে নির্মাণ করা হবে আন্ডারপাস। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরেছে ৫৬৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
‘ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে তিনটি আন্ডারপাস ও পদুয়ার বাজার ইন্টারসেকশন ইউলুপ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে যাবে। সেই সঙ্গে টেকসই, নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, এরই মধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থানের প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক (এন-১) ও কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পদুয়ার বাজার ইন্টারসেকশনে ইউলুপ ও একটি আন্ডারপাস, কুমিল্লা সদরের দক্ষিণ উপজেলা গেট ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলতলী গেট সংলগ্ন স্থানে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে (এন-১) দুইটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে।
মন্ত্রণালয় বলছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক রাজধানী ঢাকাকে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযোগকারী যোগাযোগের অন্যতম করিডোর হিসাবে বিবেচিত। এ করিডোরের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের সঙ্গেও ভবিষ্যতে যোগাযোগের পরিকল্পনা রয়েছে। যেহেতু সড়কটি আঞ্চলিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহাসড়কের মেরুদণ্ড, এর বর্তমান ও ভবিষ্যতের ট্রাফিক চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষমতা ও গতিশীলতা থাকা অপরিহার্য। ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক এবং কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক দু’টি পদুয়ার বাজারে এসে মিলিত হয়ে চার রাস্তার মোড় তৈরি করেছে। এ মোড়ে ঢাকা-চাঁদপুর, চট্টগ্রাম-কুমিল্লা, কুমিল্ল-চাঁদপুর ও চাঁদপুর-চট্টগ্রামগামী বিপুল সংখ্যক যানবাহনকে কম বেশি ৫০০ মিটারের মধ্যে ইউটার্ন করতে হয়। ফলে এ স্থলে অধিকাংশ সময়ে তীব্র যানজট দেখা দেয়। তাতে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয় এবং প্রায়ই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
এছাড়া কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা গেট ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলতলী গেট এলাকাতেও তীব্র যানজট দূর করাসহ সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এ জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পদুয়ার বাজার ইন্টারসেকশনে আন্ডারপাসসহ একটি ইউলুপ এবং কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা গেট ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলতলী গেট সংলগ্ন স্থানে জাতীয় মহাসড়কে দুইটি আন্ডারপাস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে ২ হাজার ১৪২ দশমিক ৭০ মিটার ইউলুপ নির্মাণ, তিনটি আন্ডারপাস, ১ দশমিক ৫৩ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ এবং একটি গ্রেডার, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ও একটি ট্রাক কেনা হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ল্যান্ডস্কেপ, ইউটিলিটি শিফটিং ও বৃক্ষরোপণসহ অন্যান্য কাজও করা হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. মামুন-আল-রশীদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ৯৩তম কিলোমিটারে পদুয়ার বাজার ইন্টারসেকশনে একটি আন্ডারপাসসহ ইউলুপ ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা গেট সংলগ্ন স্থানে একটি এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে একটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হলে যানজট নিরসন হবে, দুর্ঘটনা কমবে এবং সমন্বিত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ সামগ্রিক আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।