কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসে দালালের ‘চেইনে’ না গেলেই ভোগান্তি !
দালালের ‘চেইনে’ গেলেই বাড়তি টাকায় সময়মতো মিলছে পাসপোর্ট। আর দালালের মাধ্যম ছাড়া আবেদন করলে ১৫ দিনের পাসপোর্ট হাতে আসছে না ছয় মাসেও। এতে কারও কারও বিদেশযাত্রা বাতিলের ঘটনাও ঘটছে। সেবাপ্রত্যাশীরা ভোগান্তির অভিযোগ নিয়ে উপ-পরিচালকের কাছে গেলে সেখানেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের চিত্র এটি। এই অফিস দালালদের কাছে ‘জিম্মি’ হয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দালাল ছাড়া কোনো কাজ করতে গেলে সেবাগ্রহীতাদের পদে পদে ভোগান্তি আর হয়রানির শিকার হতে হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অফিসের কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে পাসপোর্ট তৈরির পুরো প্রক্রিয়া এখন দালালদের কবজায়। এখানে দালালদের মাধ্যমটি ‘চেইন’ নামে সবার কাছে পরিচিত। তাদের চেইন ছাড়া পাসপোর্ট করতে গেলেই ভোগান্তি।
গত বছরের অক্টোবরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে পাসপোর্ট দালাল চক্রের সক্রিয় ১০ সদস্যকে আটক করে র্যাব। তাদের কাছ থেকে ৪৩৬টি পাসপোর্ট, নকল সিলমোহর ও টাকা উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা অবৈধ পথে পাসপোর্ট তৈরির সঙ্গে কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা সফিজুল ইসলাম, মিজানসহ তিনজনের জড়িত থাকার কথা র?্যাবকে জানায়। পরে তৎকালীন অফিস প্রধান সহকারী পরিচালক শামীম আহমেদসহ অভিযুক্তদের বদলি করা হয়। দালালদের কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি জরিমানা করা হলেও চক্রের দৌরাত্ম্য কমেনি।
পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকারি নিয়মে ২১ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে খরচ হয় তিন হাজার ৪৫০ টাকা। আর জরুরি ভিত্তিতে ১১ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে লাগে ছয় হাজার ৯০০ টাকা। কিন্তু বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন। দালালরা জরুরি পাসপোর্টের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে নিচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, আর সাধারণভাবে পাসপোর্টের জন্য ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা। ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও দ্বিগুণের বেশি টাকা নিচ্ছে। কোনো গ্রাহক দালালদের চেইনে না গেলে তাদের ফরমে ভুল আছে বলে পদে পদে হয়রানি করা হয়। সহ্য করতে হয় খারাপ আচরণও। এসব দুর্ভোগ সহ্য করে যদি কোনো ব্যক্তি ফরম জমা দিতে পারেন সে ক্ষেত্রেও তাকে পাসপোর্ট পেতে অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, পাসপোর্ট অফিসের মূল ফটকে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে মাসের পর মাস ঘুরেও পাসপোর্ট না পাওয়ার কথা বলছেন এক ভুক্তভোগী। তখন ওই পুলিশ সদস্যও বলে ওঠেন- ‘আমি নিজেও পাসপোর্ট করেছি দালালের মাধ্যমে। দালালের মাধ্যমে না গেলে আমাদেরও হয়রানির শিকার হতে হয়।’
মনোহরগঞ্জের আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ই-পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে গেলে তারা জমা নিতে চায়নি। এটা-ওটা ভুল হয়েছে বলে সারাদিন ঘুরিয়েছে। পরে অফিসের এক লোক বলেন চেইনে আসলে এ সমস্যা হতো না।’
বুড়িচং উপজেলার জাহিদুল ইসলাম গত বছরের জানুয়ারিতে দালাল ছাড়া পাসপোর্টের আবেদন করে এক বছর পর হাতে পেয়েছেন। এতে তার বিদেশ যাত্রা বাতিল হয়েছে।
চাঁদপুরের শাহরাস্তির মামুন মিয়া বলেন, তিনি দালালের মাধ্যমে ৯ হাজার টাকায় পাসপোর্ট করিয়েছেন এবং ২৬ দিনেই হাতে পেয়েছেন।
এসব প্রসঙ্গে কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্টে অফিসের উপ-পরিচালক মো. নুরুল হুদা বলেন, প্রিন্টিং সমস্যা, আবেদনে তথ্যগুলো ভুল, পুলিশ প্রতিবেদন বিলম্বে আসায় অনেক সময় পাসপোর্ট পেতে দেরি হয়।
দালাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সবকিছু নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে মানুষ এখন ভালো সেবা পাচ্ছেন, সরকারি ফি জমা দিয়ে পাসপোর্ট পাচ্ছেন। আমরা চেষ্টা করছি অফিসকে দালালমুক্ত করতে।’
সূত্রঃ সমকাল