কুমিল্লার খাদিতে ফিরছে প্রাণ
কুমিল্লার নামের সঙ্গে খাদি নামটি অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে। খাদি কাপড়কে বলা হয় কুমিল্লার ঐতিহ্যের স্মারক। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলন শুরুর সময় কুমিল্লায় খাদি শিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার ডাক ওঠে। সর্বত্র একটাই আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’।
সেই মোটা কাপড় এখন মিহি হয়েছে। কাপড়ে লেগেছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। বর্তমান খাদির পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, ফতুয়া, চাদর ও থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে সারাদেশেই। দেশ-বিদেশে এখনো কুমিল্লার ঐতিহ্য খাদি কাপড়ের চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু গত বছর দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলে ভাটা পড়ে খাদি বেচাকেনায়। লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েন ঐহিত্যবাহী খাদি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।
এরপর দোকানপাট চালু হলেও বিক্রি-উৎপাদন নেমে আসে অর্ধেকে। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ছিল এবারের ঈদুল ফিতরে তাদের বেচাকেনা হবে জমজমাট। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসে আবারো অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে তাদের।
অবশেষে চলতি মাসের ৫ তারিখ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলার অনুমতি পাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে ব্যবসায়ীদের মাঝে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাড়ছে বেচাকেনা। কুমিল্লার ঐতিহ্য খাদিতে ফিরতে শুরু করেছে প্রাণ। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে কুমিল্লার খাদি দোকানগুলোতে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।
দেখা গেছে, বর্তমানে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে খাদি পাঞ্জাবি। প্রায় প্রতিটি দোকানেই বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কম দামের মধ্যে ভালো খাদি কাপড় কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারাও।
কুমিল্লায় খাদি কাপড় বিক্রির অন্তত চার শতাধিক দোকান রয়েছে। নগরীর কান্দিরপাড়ের খাদি জ্যোৎস্না স্টোরের মালিক রতন পাল বলেন, ঈদুল ফিতরেই আমরা বেশিরভাগ খাদি কাপড় বিক্রি করি। আগে তো শুধু রমজানেই কুমিল্লায় প্রায় শত কোটি টাকার খাদি বিক্রি হতো। ব্যবসায়িদের পুরো বছরের ঘাটতি পুষিয়ে যেত এক ঈদে।
তিনি আরো বলেন, গত বছর লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকায় আমরা বড় ক্ষতির মুখে পড়ি। এ বছরও দোকান খোলা নিয়ে প্রথমে অনিশ্চয়তা ছিল কিন্তু অবশেষে দোকান চালু করায় আমরা স্বস্তিতে আছি। আগের মতো না হলেও বিক্রি ভালোই হচ্ছে। সকাল থেকে রাত মানুষ আসছেন। করোনাকালে এই বিক্রিতে আমরা খুশি।
কুমিল্লা নগরীর বাসিন্দা পারুল বেগম বলেন, আমাদের পরিবারের সবাই নিয়মিত খাদির কাপড় পরেন। এ বছরও ঈদ উপলক্ষে সবার জন্য খাদি কাপড় কিনেছি। এ কাপড়ের মান যেমন ভালো, দামও সাশ্রয়ী।
তরুণ ক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, প্রতি বছরই ঈদে খাদির পাঞ্জাবি পরিধান করি। ৫-৬শ’ টাকার মধ্যে খাদির ভালো মানের পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। এ পাঞ্জাবি দেখতে সুন্দর, পরতেও আরাম। মার্কেটে দেখলাম আমার মতো অনেকেই ঈদ উপলক্ষে খাদির পাঞ্জাবি কিনছে।
কান্দিরপাড়ের খাদি শিল্প ভবনের মালিক মেহেরাজ হোসেন বলেন, খাদি কাপড় কুমিল্লার ঐতিহ্যের প্রতীক। এক সময় খাদির সকল পণ্যেরই ব্যাপক চাহিদা ছিল দেশ-বিদেশে। কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় কাপড়ের আগ্রাসনে খাদির থ্রিপিসসহ অন্যান্য কাপড়ের আগের মতো চাহিদা নেই। তবে এখন মানুষের চাহিদা বেশি খাদি পাঞ্জাবিতে। আমরা পাঞ্জাবিই বেশি বিক্রি করছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্যান্য পণ্যও ভালোই বিক্রি হচ্ছে।