কুমিল্লায় ভুল চিকিৎসায় বুয়েট ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ
কুমিল্লা নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে পাইলসের ‘ভুল অপারেশনে’ মেহেদী হাসান নামে বুয়েট থেকে পাশ করে কানাডার একটি বিশ^বিদ্যালয়ে পিএইচডিতে অধ্যয়নরত। করা এক মেধাবী ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (২২ জুন) বিকালে নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ভুল স্বীকার করে রোগীর স্বজনদের নিকট ক্ষমা চান। পরে এ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়। এতে ‘বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা থেকে’ রোগীর স্বজনরা রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার মরদেহ বাড়ি নিয়ে যায়।
মেহেদী হাসান জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা ইউনিয়নের সবুজপাড়া গ্রামের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট আলী আক্কাসের ছেলে। বুধবার (২৩ জুন) ১১টার দিকে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মেহেদীর পরিবারের লোকজন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। এদিকে মেধাবী এ ছাত্রের এমন মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা-মা ও স্বজনরা শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছেন।
মেহেদী হাসানের আপন চাচাতো ভাই ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পলাশ হাসান বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, অসুস্থ অবস্থায় গত রবিবার (২০ জুন) মেহেদী হাসান নগরীর নজরুল অ্যাভিনিউ সড়কের গোমতী নামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসক ও জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. আবু বকর সিদ্দিক ফয়সালের অধীনে ভর্তি হন। সেখানে পরদিন বিকালে তার পাইলসের অপারেশন হয়। তাকে ৪ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে গভীর রাতে তাকে বাদুরতলা এলাকার সিডিপ্যাথ নামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২২ জুন) বিকালে তার মৃত্যু হয়।
পলাশ হাসান সাংবাদিকদের আরো জানান, মেহেদী হাসানের মৃত্যুর পর ডা. আবু বকর সিদ্দিক ফয়সাল তার (পলাশ) ও তাদের স্বজনদের নিকট ‘ভুল অপারেশনে’ মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে কান্নাকাটি ও অনুশোচনা করেন। এ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা চালান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, তারা অভিযোগ না করার জন্য বলেন।
মেহেদীর ছোট ভাই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ছাত্র কামরুল হাসান বলেন, ডা. আবু বকর সিদ্দিক ফয়সাল আমাদের নিকট ভুল স্বীকার করে অনেকবার দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আমরা এ মৃত্যুর ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। অবশেষে পরিবেশগত কারণে বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় রাতে মরদেহ বাড়ি নিয়ে যাই। তিনি আরো জানান, তার ভাই মেহেদী হাসান ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি, পরে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষে বুয়েটে ভর্তি হন। সেখান থেকে পাশ করার পর বৃত্তি নিয়ে কানাডায় যান। তিনি কানাডার দ্য ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। গত বছরের ২২ মে তিনি দেশে ফিরেন এবং করোনার কারণে বেশিরভাগ সময় বাড়িতেই থাকতেন। আগামি ২/৩ মাসের মধ্যেই তাঁর পিএইচডি শেষ হওয়ার কথা ছিল।
ঘটনার বিষয়ে জানার জন্য ডা. আবু বকর সিদ্দিক ফয়সালের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে বুধবার সন্ধ্যায় গোমতী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মুজিবুর রহমান জানান, ‘এ মৃত্যুর বিষয়ে আমি ডাক্তারের পক্ষে সাফাই গাইব না, ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে তাও স্বীকার করবো না এবং ভুল ব্যাখ্যাও দিব না। অনেক কারণে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। ডাক্তার ইচ্ছা করে ভুল করে না। অনেক ব্লিডিং পয়েন্ট থাকে। তবে বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
কুমিল্লা সিভিল মীর মোবারক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ঘটনা সম্পর্কে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।। ডা. আবু বকর সিদ্দিক ফয়সালের সরকারি কর্মস্থল ব্রাহ্মণপাড়ায় নিয়মিত যাচ্ছে কি না বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’
কোতয়ালি মডেল থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো অভিযোগ পাইনি, পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক সূত্র জানায়, কুমেক থেকে তিনি সেখানে বদলী হলেও নিয়মিত হাসপাতালে না এসে কুমিল্লা নগরীতে প্রাইভেট চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকেন।