কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ব্যবসায়ী ঠিকাদারের আধিক্য
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে রোববার পর্যন্ত ৪৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর হলফনামা প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৪ জন ব্যবসায়ী ও ১০ জন ঠিকাদার রয়েছেন। এছাড়া বাকি প্রার্থীদের মধ্যে তিনজন সমাজসেবক ও চারজন চাকরিজীবী। এছাড়া দোকান ও বাড়িভাড়া দিয়ে তিনজন, দলিল লিখে একজন, গৃহিণী একজন, কেবল অপারেটর একজন এবং একজন মৎস্য ও পশুর খামারি এ নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। মনোয়নয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, ৪৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে। দুজনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগেও মামলা আছে। তাদের বেশিরভাগই বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক। অতীতে মামলা ছিল এমন প্রার্থী হয়েছেন ১৩ জন। প্রার্থীদের মধ্যে ৩৯ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তারও কম। স্বশিক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন চারজন। ১৫ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি ও তারও কম। ২৬ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি বা তার বেশি। এছাড়া ১৩ জন প্রার্থীর ব্যাংক ঋণ রয়েছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৭ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল। ওই দিন পর্যন্ত সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ১৯ মে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে নয়জনের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। বর্তমানে ১১১ জন কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। ২৬ মে এ সিটি করপোরেশনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ভোটগ্রহণ হবে ১৫ জুন।
এদিকে মনোনয়নপত্র দাখিল ও বাছাই শেষ হলেও রোববার রাত পর্যন্ত ইসির ওয়েবসাইটে সব সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর হলফনামা প্রকাশ করেনি ইসি। এ কারণে বাকিদের হলফনামার তথ্য পর্যালোচনা করা যায়নি। যদিও শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এসব হলফনামা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে ইসির প্রতি আহ্বান জানায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি জানার পর বিস্তারিত বলতে পারব।’
হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৪৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৪ জনই নিজেকে ব্যবসায়ী হিসাবে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তারা হলেন-৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. নাছির উদ্দিন নাজিম, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শাহ আলম খান, মো. ফরহাদ হোসেন ও রিয়াজ উদ্দিন খান, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিকাশ চন্দ্র দাস ও রাজন পাল এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আশিকুর রহমান, মো. কাউসার ও জমীর উদ্দিন খান জম্পি। বাকিরা হলেন-১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. রাজিউর রহমান ও মো. শাখাওয়াত উল্লাহ, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাইফুল বিন জলিল, আরমানুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল ইসলাম, আবু হাসান, আনিসুজ্জামান ও মো. শাহজালাল এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আব্দুল মতিন খাঁন, মহিবুর রহমান, ফজল খান, আবু হানিফ ও মোস্তফা কামাল।
এ নির্বাচনে ১০ জনের পেশা ঠিকাদারি। তাদের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ রায়হান আহমেদও রয়েছেন। বাকিরা হলেন-৭ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রহমান, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. জহিরুল কামাল, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ওমর ফারুক, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. কাউছার খন্দকার, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সেলিম খাঁন, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে হুমায়ুন কবির, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শাহ আলম মজুমদার ও আজাদ হোসেন এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নাসির উদ্দিন।
এ নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রোকসানা আক্তার নিজের পেশা উল্লেখ করেছেন ‘গৃহিণী’। ‘সমাজসেবক’ পেশা উল্লেখ করেছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. মোসলেম উদ্দিন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী মো. মনজুর কাদির (মনি) ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হোসেন।
চাকরিজীবী হয়ে প্রার্থী হয়েছেন-৮ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ মহসিন আলী, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মোশারফ হোসেন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আহাদ হোসেন বিশ্বাস ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. নূরে আলম। এছাড়া দলিল লেখক বিজয় রতন দেবনাথ ২২ নম্বর ওয়ার্ডে, কেবল অপারেটর মো. আব্দুল জলিল, পশু ও মৎস্য খামারি মো. আমিনুল ইকরাম ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। বাড়ি ও দোকান ভাড়ার টাকায় জীবন নির্বাহ করেন এমন ব্যক্তিও এ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন-৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মিজানুর রহমান মিলন ও কামাল হোসেন এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাহবুব আলম।
১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা : হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের হলফনামা প্রকাশ হওয়া ৪৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে। ১১ জনের বিরুদ্ধে আগে মামলা ছিল। এছাড়া ঋণ রয়েছে ১৩ জনের। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে যাওয়া সৈয়দ রায়হান আহমেদের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন মো. শাখাওয়াত উল্লাহ। তিনি ওই ওয়ার্ডের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করলেও তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, বিস্ফোরকসহ ৯টি মামলা রয়েছে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে একটি মামলা ছিল। সেটি থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। বিএ পাশ এ প্রার্থীর নিজ নামে জমি এবং স্ত্রীর নামে জমি ও বাড়ি আছে। তার ব্যাংক ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৩ কোটি টাকা। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা রয়েছে। ৮ম শ্রেণি পাশ এ প্রার্থীর নিজেকে পেশায় সমাজসেবক উল্লেখ করেছেন।
৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন মো. মোশারফ হোসেন। তিনি সদ্য কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২৫টি মামলা চলমান রয়েছে। এর আগে তিনি ৬টি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। এমকম পাশ এ প্রার্থী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এছাড়াও মামলা রয়েছে-৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিকাশ চন্দ্র দাস, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আশিকুর রহমান, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সেলিম খান, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাইফুল বিন জলিল ও সাইফুল ইসলাম, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয় রতন দেবনাথ, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাহবুব আলম ও মো. শাহজালাল এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের নাসির উদ্দিন ও মহিবুর রহমানের বিরুদ্ধেও।
শিক্ষাগত যোগ্যতা : ৪৮ প্রার্থীর মধ্যে চারজন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্বশিক্ষিত’ উল্লেখ করেছেন। তারা হলেন-৭ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রহমান ও মো. শাহ আলম খান, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ওমর ফারুক ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের মোস্তফা কামাল। এছাড়া অষ্টম শ্রেণি পাশ ৭ জন, এসএসসি পাশ ৮ জন, ডিপ্লোমা পাশ ৩ জন, এবং এইচএসসি পাশ ১২ জন। বাকি ১৪ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ।