কুমিল্লায় অটোরিকশা চালক হত্যায় কাউন্সিলরের ফাঁসি দাবি

কুমিল্লা নগরীর টিক্কারচর গোমতি ব্রিজের নিচে অটোচালককে খুন করে ফেলে রাখার ঘটনায় মামলার আসামিদের দ্রুত বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নগরীর বজ্রপুর কাশারীপট্রি এলাকার নিহত মো. ইয়াছিন হোসেন রবির মা শিরিন আক্তার। খুনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে কাউন্সিলর কাজী গোলাম কিবরিয়াসহ অন্যান্য আসামিদের ফাঁসি দাবি করেন তিনি।

রোববার (৩ জুলাই) সকালে নগরীর কান্দিরপাড় একটি রেস্টুরেন্টে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত রবির মা বলেন, আমার ছেলে পেশায় একজন অটোচালক। অটো চালিয়ে সে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করত। গেল ৩ জুন প্রতিদিনের মতো আমার ছেলে রবি অটোরিকশা নিয়ে বের হয়ে চকবাজার থেকে কান্দিরপাড় যাওয়ার পথে সুজানগর হাড্ডি খোলার ডিস সুজন তাকে ভাড়ায় ঠিক করে। সদর উপজেলার শাহাপুর থেকে জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডে একটি কসমেটিকসের পার্সেল পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে। তিনশ টাকার বিনিমিয়ে এই ভাড়া ঠিক করে। রবি অটোরিকশাযোগে এই পার্সেলটি জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। রাস্তায় টমছম ব্রিজ এলাকায় পৌঁছলে র‌্যাব সংকেত দিয়ে বিভিন্ন গাড়ি তল্লাশিকালে রবি গাড়িতে থাকা মালামাল সম্পর্কে সন্দেহ হলে পার্সেলটি অটোরিকশা থেকে নামিয়ে রেখে ১০০ গজ সামনে চলে আসে।

শিরিন আক্তার বলেন, র‌্যাব পার্সেলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পেয়ে খুলে দেখে পার্সেলের ভেতরে গাঁজা। র‌্যাব এই গাঁজা উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এসময় রবিও ভয় পেয়ে পালিয়ে চলে আসে এবং ঘটনাটি ডিস সুজনকে জানায়। ডিস সুজন এ বিষয়টি বিশ্বাস না করে তাদের অবৈধ মাদক ব্যবসার অপর সিন্ডিকেট সদস্য সুজানগর হাড্ডিখোলা এলাকার রনি ও নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুন্সেফ কোয়াটার এলাকার কিবরিয়াসহ অন্যান্যদের জানায়। পরে কাউন্সিলর কিবরিয়ার নেতৃত্বে ৮/৯জন এসে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেয়। মালামাল উদ্ধার না করে দিলে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়।

রবির মা বলেন, এ দিনই আমার ছেলে রবি অটোরিকশা মালিকের কাছে রিকশাটি জমা দিয়ে আর বাড়িতে আসেনি। পরে ৮ জুন টিক্কারচর এলাকার গোমতি নদী ব্রিজের নিচ থেকে স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ রবির লাশ উদ্ধার করে। লাশের গলার গামছা পেচানো। চোখে বুকে গলায় এবং বাম চোখ সম্পূর্ণ থেতলানো ছিল। কোতয়ালী থানা পুলিশের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আমার ছেলের দাফন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এ ঘটনায় জয় নামে একজনকে আটক করে পরে ছেড়ে দেয় পুলিশ। পুলিশ আমাকে ডেকে অলিখিত সাদা পাঁচচটি কাগজে স্বাক্ষর রেখে চলে যেতে বলেন। এ বিষয়ে মামলা করার কথা বললে পুলিশ নির্বাচনের পরে থানায় যোগাযোগ করতে বলেন এবং মামলা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু এখন পযর্ন্ত থানা কর্তৃপক্ষ কোনো মামলা না নিয়ে আদালতে মামলা করতে বলেন। পরে আমি কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ১ নম্বর আমলি আদালতে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনের নামে মামলা দায়ের করি।

নিহত অটোরিকশা চালকের মা বলেন, আদালতের নির্দেশে ২৯ জুন কোতোয়ালি মডেল থানা মামলাটি নথিভুক্ত করে। মামলায় কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার সুজানগর হাড্ডিখোলা এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে মো. রনি (৩০), বিষ্ণুপুর মুন্সেফ কোয়াটার এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে কাউন্সিলর মো. কিবরিয়া, সুজানগর হাড্ডিখোলা এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে সুজন প্রকাশ ডিস সুজন, কুমিল্লার মুরাদ নগর উপজেলার মুরাদনগর মধ্যপাড়ার শাহ আলমের ছেলে মো. ইব্রাহিম, কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার বাটকাশ্বর এলাকার মৃত ইদুন মিয়ার ছেলে এছহাকসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলার পর আসামিরা মামলা উঠিয়ে নিলে ভবিষতে চলার জন্য টাকা পয়সা দেবে। মামলা তুলে না নিলে আমাকেও খুন করার হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমি এ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছি।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত রবির মা শিরিন আক্তার বলেন, জামায়াত নেতা কাউন্সিলর গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছেলের হত্যাকারীরা মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ও চোরাচালানের সাথে জড়িত। কিবরিয়ার নামে অস্ত্র আইন, সন্ত্রাস দমন আইন, বিস্ফোরণ আইন, দ্রুত বিচার আইনসহ বিভিন্ন অপরাধের ২৭টি মামলা চলমান রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অতীতে এমন আর ১০টি মামলা ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে শিরিন আক্তার তার ছেলের হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, কাউন্সিলর গোলাম কিবরিয়া পূজামন্ডপের সহিংসতার মামলায় জেলে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

আরো পড়ুন