মেয়ের সুন্দর মুখ দেখতে মাথাটি চান বাবা
আহাজারি করতে করতে পাষণ্ড আবির আলীর কঠিন নির্মমতার শিকার শিশু আয়াতের বাবা বলেন, আমার মেয়ের পা এখনো পচে নাই। মেয়ের মুখ অনেক সুন্দর। এই মুখ দিয়ে বাবা বাবা বলে ডাকত। কোরআন পড়ত। আমি সুন্দর মুখটি দেখতে চাই। আজ বুধবার বিকেলে নগরের বন্দরটিলার আকমল আলী ঘাটসংলগ্ন স্লুইচ গেটের খাল থেকে আয়াতের দুইটি পা উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান আয়াতের বাবা সোহেল রানা।
এ সময় পিবিআইয়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তারা এত দিন ধরে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অনুরোধ করবো আরো কয়েকদিন যেন উদ্ধারকাজ চালায়। যাতে মেয়ের মাথাসহ শেষ অংশটুকু পাওয়া যায়। এর আগে, বুধবার সকাল থেকে আকমল আলী ঘাটসংলগ্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান শুরু করে পিবিআই। তল্লাশির একপর্যায়ে বিকেল ৩টার দিকে সাদা পলিথিনে স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় দুইটি পা পাওয়া যায়।
এদিকে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, লাশের খণ্ডিত অংশ পাওয়া গেছে। পাঁচ দিন ধরে তল্লাশি চালাচ্ছে পিবিআই। লাশের বাকি অংশ পেতে তল্লাশি অব্যাহত আছে। আয়াত নিখোঁজের নয় দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার রাতে আকমল আলী সড়কের পকেট গেট এলাকা থেকে আবির আলীকে আটক করে পিবিআই।
আটকের পর তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে খোলে ঘটনার জট। পিবিআইর কাছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিতে থাকেন আবির। এরপরই তাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যায় ব্যবহৃত বঁটি ও অ্যান্টি-কাটার উদ্ধার করে পিবিআই। উদ্ধার করা হয় আয়াতের জুতাও।
এদিকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে আবির জানান, শিশু আয়াতকে অপহরণ করে ছয়-সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা ছিল তার। এজন্য রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটি সিমও সংগ্রহে রেখেছিলেন। যাতে নম্বরটি থেকে ফোন করে টাকা দাবি করতে পারেন। কিন্তু সিমটি সচল না থাকায় আর ফোন করতে পারেননি। আয়াত চিৎকার করতে চাইলে তাকে গলা টিপে হত্যা করেন। পরে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে তাকে কেটে ছয় টুকরা করে কিছু অংশ সাগরে ভাসিয়ে দেন। আর কিছু অংশ পার্শ্ববর্তী আকমল আলী ঘাটসংলগ্ন স্লুইচ গেটের পাশে ফেলে দেন।
এর আগে গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে পাশের মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় পাঁচ বছর বয়সী আলিনা ইসলাম আয়াত। এ ঘটনায় একইদিন রাতে ইপিজেড থানায় জিডি করেন তার বাবা। সন্তানের সন্ধান না পেয়ে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন বাবা সোহেল রানা ও মা তামান্না খাতুন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, থানা-পুলিশ ও হাসপাতাল ঘুরেও পাননি আদরের সন্তানকে। পরে সন্ধান দিলে পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছিল পরিবার।