কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের দৃষ্টিনন্দন লাইব্রেরি
দুর্লভ সব সংগ্রহ মোতাহের হোসেন চৌধুরী গ্রন্থাগারে। তবে পাঠককে তা আকৃষ্ট করেনি। বলা যায়, মুখ ফিরিয়ে নেন তাঁরা। কারণ হিসেবে সবার অভিযোগে ছিল পরিবেশ। দীর্ঘদিন পূর্বাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের এ গ্রন্থাগার যেমন জরাজীর্ণ ছিল, তেমনি ভেতরে তৈরি হয়েছিল স্যাঁতসেঁতে, ভূতুড়ে পরিবেশ। অবশ্য নতুন অধ্যক্ষের উদ্যোগে এখন আর সে পরিবেশ নেই। অবহেলা-অনাদরে পড়ে থাকা গ্রন্থাগার প্রাণ ফিরে হয়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন। বই রাখার আলমারি থেকে শুরু করে সর্বত্র লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। নজরকাড়া ডেকোরেশন, লাইটিং, বসার টেবিলসহ আসবাবপত্রে গ্রন্থাগার হয়ে উঠেছে রুচিসম্মত। পাঠককেও ভীষণ টানছে। আগামী মাসে এটি উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
১৮৯৯ সালে শিক্ষানুরাগী রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায় মহারানী ভিক্টোরিয়ার নামে কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্র রানীর দীঘির পশ্চিম পাড়ে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে শহরতলির ধর্মপুর এলাকায় এর ডিগ্রি শাখা স্থাপন করা হয়। ১৯৮৭ সালে সেখানে কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও প্রথিতযশা সাহিত্যিক প্রয়াত মোতাহের হোসেন চৌধুরীর নামে করা হয় গ্রন্থাগার।
সহকারী লাইব্রেরিয়ান রেজাউল করিম ভূঁইয়া জানান, শুরু থেকেই গ্রন্থাগারটির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতনামা মনীষী ছাড়াও দেশের বিশিষ্টজনের জীবনী, মুক্তিযুদ্ধ, গল্প, উপন্যাস, রেফারেন্স বই, কুমিল্লার ইতিহাস-ঐতিহ্যসহ একাডেমিক-চাকরিমুখী বই সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে এখানে প্রায় ৪০ হাজার বই রয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই দুর্লভ। কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী স্থান নিয়ে লেখা অসাধারণ কিছু বইও রয়েছে। কিন্তু এতদিন সেভাবে পাঠকের মন জয় করা যায়নি। এখন সংস্কারের মাধ্যমে গ্রন্থাগারটির আধুনিকায়ন হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত গ্রন্থাগারের সঙ্গে অনলাইনে যুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। এ ছাড়া কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় প্রায় ১০ হাজার বই নিয়ে আরেকটি গ্রন্থাগার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জয়নাল আবেদীন জানান, কলেজে নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চললেও গ্রন্থাগারের অভাব ছিল। কলেজের সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার থাকলেও তা শিক্ষার্থীদের কোনো কাজে আসছিল না। তবে বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু জাফর খানের উদ্যোগে গ্রন্থাগারে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী অনন্যা চৌধুরী বলেন, আগে মন চাইলেও গ্রন্থাগারে ভয়ে যেতে পারতাম না। ভেতরে ছিল ভূতুড়ে পরিবেশ। এখন বসার মতো পরিবেশ হয়েছে। আশা করছি, সব পাঠকের ভালো লাগবে।
গ্রন্থাগারে কলেজ শিক্ষকদের জন্য রয়েছে আলাদা কর্নার। একটি অংশে গবেষকদের জন্য রাখা হয়েছে নানা সংগ্রহ। প্রায় ১০০ আসনের গ্রন্থাগারের সংগ্রহশালায় দেশ-বিদেশের অনেক বিখ্যাত লেখকের বই রয়েছে। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জ্ঞান অর্জনের সুযোগও রাখা হয়েছে। কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেরুন্নেছা বলেন, পড়ার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত স্থান ও পরিবেশ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মোতাহার হোসেন চৌধুরী গ্রন্থাগারের ভেতরের পরিবেশ পাঠকবান্ধব হয়েছে। আশা করি, শিক্ষার্থীরা এখান থেকে অনেক উপকৃত হবে।
শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মঈন উদ্দিন বলেন, আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা অবসর সময়ে এখানে আসবে, পড়াশোনা করবে। তারা এখানে বসেই দেশের বাইরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে পারবে, যা তাদের উচ্চশিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাদের আমরা লাইব্রেরিমুখী করতে চাই।
অধ্যক্ষ আবু জাফর খান বলেন, ‘গত বছর হঠাৎ এক প্রবাসী এসে রানী ভিক্টোরিয়া সম্পর্কে গবেষণার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এক পর্যায়ে আমাদের লাইব্রেরিতে তিনি উপযোগী বইটি পান। এখানে বেশিরভাগ সংগ্রহ প্রাচীন ও দুর্লভ, যা গবেষকদের জন্য খুবই কার্যকর। আগামী মাসে গ্রন্থাগারটি উদ্বোধন করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু টেবিলে বসে বই পড়া নয়, বিশ্বের খ্যাতনামা লাইব্রেরির সঙ্গে যুক্ত হতে আমরা প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা রেখেছি। আমাদের দুর্লভ বইগুলোও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’