ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার সনদ চলবে না

দেশের চার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ গ্রহণের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে অনুমোদন বাতিল হওয়ায় কুমিল্লায় অবস্থিত ‘দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা’র সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না। এর বাইরে আলোচিত বেসরকারি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ গ্রহণযোগ্য হবে কি না তা উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী ২০০৬ থেকে ২০১৬ সালের ৪ মার্চ পর্যন্ত যথাযথ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা পেয়েছেন কি না তা যাচাইয়ের সুপারিশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি ও সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফাউন্ডেশনের (এসআইটি) সনদ গ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে তথ্য চাওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

সম্প্রতি এই চার বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বৈধতার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গঠন করা একটি কমিটির প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ২৯ মে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ড. মো. ফরহাদ হোসেন স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) সোনা মনি চাকমা, উপসচিব (কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ) মো. কামরুল হাসান ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপরিচালক (কলেজ) মো. এনামুল হক হাওলাদার।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, উল্লিখিত এই চার বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ গ্রহণযোগ্য হবে কি না তা নিয়ে গত ১৮ মে সভা করেন কমিটির সদস্যরা। যেখানে এর আগে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বিষয়ে উচ্চ আদালতের রিটের রায় নিয়েও পর্যালোচনা করা হয়।

দারুল ইহসানের বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত তুলে ধরে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রিট পিটিশনের রায় প্রচারের পর থেকে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় আইনের দৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিগণিত নয়। উক্ত নির্দেশনার আলোকে সরকার দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করবে এবং ভবিষ্যতে এই নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার অনুমতি প্রদান করবে না। বর্ণিত নির্দেশনার আলোকে রিট মামলার রায় প্রচারিত হওয়ার পর দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সনদ আইনত বৈধ নয়। তবে রিট পিটিশনের রায় প্রচারিত হওয়ার পূর্বের সনদসমূহের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাধীন এবং তা রায়ে অবৈধ মর্মে ঘোষণা করা হয়নি।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্বিক পর্যালোচনা শেষে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশ জারির পর দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিট পিটিশনের রায় প্রচারিত হওয়ার পূর্বে অর্জিত সনদসমূহের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বিষয়ে সাব কমিটি কর্তৃক সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নরূপ সুপারিশ করা হয়।

ক. দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্রসমূহ সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সালের ০৩ মে সুপ্রিম কোর্টের রায় হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদিত ক্যাম্পাস থেকে যে সকল শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়েছে, সে সকল শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী তালিকাভুক্ত এবং যাদের অনুকূলে সনদ ইস্যু করা হয়েছে, তাদের একাডেমিক শিক্ষা সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় এ ক্ষেত্রে সব কার্যক্রম সঠিকভাবে হয়েছে কি না, তা যাচাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে।

খ. শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির সনদ গ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে তথ্য চাওয়া যেতে পারে।

গ. দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার অনুমোদন বাতিল হওয়ায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদ গ্রহণযোগ্য নয়।

ঘ. সাইন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি ফাউন্ডেশন (এসআইটি) সনদ গ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে তথ্য চাওয়া যেতে পাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ ঢাকা মেইলকে বলেন, বিতর্কিত চার বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বৈধতাসংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়। স্কুল-কলেজে শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওভুক্তিসংক্রান্ত বিষয়ে এসব সনদ গ্রহণযোগ্য হবে কি না নির্ধারণে এই কমিটি কাজ করে। এ বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য চাইলে আমরা তথ্য দিয়েছি। দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদসংক্রান্ত আদালতের একটি রায় রয়েছে। সেটি কার্যকর করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন