অধ্যক্ষ-ছাত্রলীগ দ্বন্দ্বে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ক্যান্টিন বন্ধ

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের একটি অংশের মারামারির ঘটনা ঘটে। এ মারামারি ঘটনার পর কলেজের ক্যান্টিনটি বন্ধ করে দেন কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান। এতে করে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ছাত্রলীগসহ শিক্ষার্থীদের একাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্যান্টিনটি চালুর জন্য অধ্যক্ষ আবু জাফর খানের সাথে বৈঠক করে সুফল পায়নি।

বৈঠক বসার পরও কলেজের অধ্যক্ষ ক্যান্টিনটি পুনরায় চালু না করায় ছাত্রলীগ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে।

এদিকে,ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলছে, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ক্যান্টিনটি চালু করা হোক। আর অধ্যক্ষ বলছে এটি চালু করা যাবে না। এ বিষয়ে ছাত্রলীগ ও কলেজ অধ্যক্ষের দ্বন্দ্বে ক্যান্টিনটি আর চালু হচ্ছেনা এমনটাই জানাচ্ছে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের তত্বাবধানে ছাত্র/ছাত্রীদের সুবিধার্থে ক্যাফে ৭১ নামের ক্যান্টিনটি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অর্থায়নে তৈরী করা হয়। পরে এটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন অধ্যক্ষ রতন কুমার সাহা। এটি চালুর পর শিক্ষার্থীদের আর বাহির থেকে বাড়তি খাবার কিনতে হতো না। সকলে ক্যান্টিন থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে স্বল্পমূল্যে খাবার কিনে খেতো।

করোনা মহামারীতে কলেজ ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ক্যান্টিনটিও বন্ধ থাকে। তবে কেউ কেউ অভিযোগ করে এই ক্যান্টিনে নাকি মাদক সেবনসহ নানা ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ হতো। পরে ২০২২ সালের মে মাসের ২১ তারিখ ক্যান্টেনটি আবার চালু হলেও ২১ শে আগস্ট আবার ক্যান্টিনটি বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ভিক্টোরিয়া কলেজ শিক্ষার্থীরা ক্যান্টিন থেকে আর খাবার খেতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের কলেজের বাইরে গিয়ে আগের মত আবার খাবার কিনতে হয়। তাই শিক্ষার্থীদের দাবি পুনরায় ক্যান্টিনটি চালু করা হোক।

ভিক্টোরিয়া কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্রী মারিয়া বলেন, আমরা ক্যান্টিনে সিঙ্গারা চা খেতে যেতাম। এতে কিছুক্ষণ আড্ডা দিতাম। এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর যাওয়া হয়না।

মিল্লাত নামের পরিসংখ্যানের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যান্টিন চালু হলে এটাতে রাজনীতির আড্ডা শুরু হয়। তাই চালু হলেও যাতে ক্যান্টিনে যাতে কেউ রাজনীতি আলাপ না করতে পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন মনে করি।

সোহানা নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা সবসময় ক্যান্টিন থেকে খাবার নিতাম, ওখানে বসে খেয়ে চলে আসতাম। প্রথমে কেউ ভেতরে এতো আড্ডা দিতোনা। ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে তারা প্রতিটি খাবারের মূল্য বেশী নিতো আর কিছু শিক্ষার্থী ভেতরে সিগারেট খেত। তাদের এসব দেখে আমরা আর খাবার কিনতে যাই না। এসব বন্ধ করে কলেজের নিয়ন্ত্রণে যাতে ক্যান্টিনটি চালু রাখা যায় সে প্রত্যাশা করছি।

ছাত্রলীগ নেতা আবদুল আজিজ সিহানুক বলেন, আমি নিজে ছাত্র/ছাত্রীদের সুবিধার্থে এই ক্যান্টিন চালু করে ছিলাম। সকল শিক্ষার্থীরা স্বল্প মূল্যে খাবার কিনে খেতে পারত। আর এটা এখন কলেজের অধ্যক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে। অনার্সের শিক্ষার্থীরা সিগারেট খেতেই পারে। এটা দোষের কিছুইতো দেখছিনা। এই সিগারেট তো আর মাদক না। সিগারেট খাওয়ার কারনে ক্যান্টিন বন্ধ হবে এটাতো ঠিক না।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান বলেন, কিছু ছাত্রলীগের ছেলেরা মারামারি করে ক্যান্টিনে ভাঙচুর করেছে। এর আগে মাদক ও খাবারের বেশি দামের বিষয়েও অভিযোগ পেয়েছিলাম৷ সকল দিক বিবেচনা করে একাডেমিক সিদ্ধান্তে ক্যান্টিনটি বন্ধ করা হয়েছে।

আর এই ক্যান্টিনটি ওখানে থাকায় পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়। তাই এটি কলাভবনের সামনে দিয়ে কোথাও করা যায় কিনা তার জন্য একটি প্রস্তাব করা হয়েছিলো। কিন্তু ক্যান্টিনের বরাদ্দ দেওয়া হবেনা বলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ নিষেধ করেছে। তাই এই ক্যান্টিন চালু রাখা যাবেনা।

আরো পড়ুন