কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ: কমিটি প্রকাশের আগেই ‘বিতর্ক’
কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার জন্য প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে ছাত্রলীগের কুমিল্লা জেলা দক্ষিণের নতুন সেই কমিটিতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র ভঙ্গের প্রচেষ্টার জোর গুঞ্জন উঠেছে। জেলা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের মদদে কমিটিতে একাধিক বিবাহিতসহ কোনও কোনও প্রার্থীর বয়স জালিয়াতিরও অভিযোগ উঠেছে।
ইতোমধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে প্রার্থিতার জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন কর্মীরা। দু’একদিনের মধ্যেই নতুন কমিটি ঘোষণাও দেওয়া হবে বলে খবর মিলেছে।
কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি হয় ২০১৪ সালে। দীর্ঘ আট বছর পর ২০২২ সালে সেই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় জেলা ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সেখানে প্রার্থিতা করেন মোট ৪৩ জন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গেলো সপ্তাহে কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় জেলা আ.লীগ সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং মুজিবুল হক স্বাক্ষরিত জেলা আওয়ামী লীগের প্যাডে দুই ছাত্রনেতার নাম উল্লেখ করে তাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নিকট পাঠানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই দুই প্রার্থীর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত মিনহাদুল ইসলাম ওরফে রাফি বিবাহিত। যার বিয়ের প্রমাণপত্র স্বরূপ কাবিননামা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া, যেসব প্রার্থীরা পদবঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা করছেন, তারা কাবিননামার সেই কপি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নিকট ইতোমধ্যেই পাঠিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
উল্লেখ্য, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী রাফির সেই কাবিননামায় সাক্ষী হিসেবে রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের ভাতিজা ও লালমাই উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শাহীনের স্বাক্ষর।
এদিকে, একই পদপ্রত্যাশী অপর এক প্রার্থী ইসমাইল হোসেন মোল্লাও বিবাহিত। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ ০২-০১-১৯৮৯ (বর্তমানে ৩৪ বছর বয়স), বর্তমানে তিনি দুই সন্তানের জনক। স্ত্রী জেসমিন আক্তার কলি, পেশায় একজন শিক্ষিকা (লাকসাম জেলা হাইস্কুল)
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যার কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ শাখার আসন্ন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী কাজী শিহাব শুভ। মূলত পেশায় তিনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন ঠিকাদার। মেসার্স শিহাব এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তিনি। দলীয় পদ-পদবি পেতে তিনি নিজেও ভেঙেছেন সংগঠনটির গঠনতন্ত্র।
জেলায় কোথাও দলীয় কোন পদ-পদবি না থাকলেও শিহাব শুভ সিভিতে বিভিন্ন সময়ের দলীয় পদ উল্লেখ করেছেন, যা সম্পূর্ণ ভুয়া। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাথেও যা প্রতারণার সামিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিবাহিত কিংবা বয়সোর্ধ্ব যেই হোক না কেন, কমিটিতে আসার নিয়ম নেই। তবে বয়সের ব্যাপারটি যদি এমন হয় যে, করোনার কারণে কিংবা অন্য কোনও কারণে কমিটি হতে বিলম্ব হচ্ছে- তখন কেন্দ্রীয় কমিটির পরামর্শক্রমে বিবেচনাধীন রাখতে পারেন। তবে ছাত্রলীগে নিয়মের বাইরে গিয়ে বিতর্কে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই’।