কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামে গুরু শিষ্যের লড়াই !
আর মাত্র কয়েকদিন পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কুমিল্লার ১১টি আসনেই জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ। সবকটি আসনেই রয়েছে একাধিক প্রার্থী। তবে সবচেয়ে বেশী আলোচনায় রয়েছে কুমিল্লা-১১ চৌদ্দগ্রাম আসনে। স্থানীয় ভোটারদের মতে, চৌদ্দগ্রামে প্রধান লড়াই হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুল হক মুজিব এবং তাঁরই একসময়ের শিষ্য চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার দুবারের সাবেক মেয়র ফুলকপি প্রতীকের স্বতন্ত্রপ্রার্থী মিজানুর রহমান।
নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, গুরু-শিষ্যের এই লড়াই ততই বাড়ছে। সেই সাথে বেকায়দায় পড়েছেন নৌকারপ্রার্থী। কারণ নৌকারপ্রার্থী মুজিবুল হকের বিপক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা একজোট বেঁধে স্বতন্ত্রপ্রার্থী মিজানুর রহমানের পক্ষে সরাসরি মাঠে নেমেছেন। এই জোটে রয়েছেন সদ্য পদত্যাগ করা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও একই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সোবহান ভূঁইয়া হাসান, শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদারসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না পাওয়া বেশকয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। যাদের নিজ নিজ ইউনিয়নে রয়েছে নিজস্ব ভোটব্যাংক। এদিকে পৌরসভা এলাকায় মিজানুর রহমানের রয়েছে একচ্ছত্র আধিপত্য।
গুরুত্বপূর্ণ এই আসন টানা তিন মেয়াদ ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। মুজিবুল হক মুজিব কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি ধর্ম ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। মুজিবুল হককে বলা হয় রাজনীতির গুরু। শুধু চৌদ্দগ্রাম নয়, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলায় বর্তমানে যাঁরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই তাঁর শিষ্য।
এদিকে মুজিবুল হকের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান ছিলেন তৎকালীন চৌদ্দগ্রাম সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার দুই বারের মেয়র নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। একই সাথে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
স্বতন্ত্রপ্রার্থী মিজানুর রহমান সমর্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় মুজিবুল হক চৌদ্দগ্রামে দূর্নীতির আখড়া তৈরি করেছেন। নিজ দলের নেতাকর্মীদের মামলা-হামলা করেছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করে ভিন্ন মতাদর্শের লোকজনকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়েছেন। তাছাড়া মুজিবুল হকের বয়স হয়েছে। তাই তারা পরিবর্তনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের আরেক নেতা স্বতন্ত্রপ্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।
অন্যদিকে নৌকারপ্রার্থী মুজিবুল হকের সমর্থিত নেতারা বলছেন, মুজিবুল হক চৌদ্দগ্রামে উন্নয়নের রোল মডেল তৈরী করেছেন। উপজেলায় বেশকিছু স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা স্থাপন করেছেন। তাঁর বয়স প্রায় শেষ। তাঁকে শেষবারের মতো নির্বাচিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে চান।
নির্বাচনী প্রতীক পাওয়ার পরপরই গুরু-শিষ্য দুজনেই জোরেশোরে নেমে পড়েছেন প্রচারণায়। বলাই চলে, তাঁদের লড়াইটা বেশ হাড্ডা-হাড্ডি হতে চলেছে। দুই পক্ষের মাঝে কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে ভোট নিয়ে আশংকা সৃষ্টি হয়েছে ভোটারদের মনে। দুই প্রার্থীর মাঝে বাকযুদ্ধও থেমে নেই।
একটি নির্বাচনী জনসভায় মুজিবুল হক নাম উচ্চারণ না করেই মিজানুর রহমানের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যারা এই আসনে আমার বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছে। তারা আমার সঙ্গে বেয়াদবি করছে। তারা হয়তো জানে না ওস্তাদ কী করতে পারে। আমি আমার সারগেদকে সবকিছু শেখালেও শেষ পন্থা শিখাই নাই। তাদের এ বেয়াদবির জবাব আগামী ৭ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রামের ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে দেবে।’
মুজিবুল হকের বক্তব্যে মিজানুর রহমান পাল্টা জবাব দেন। পরদিন তিনি এক নির্বাচনী পথসভায় বলেন, ‘নির্বাচনকে অর্থবহ ও উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্রদের নির্বাচনে দাঁড়াতে সুযোগ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নৌকাও আমার স্বতন্ত্রও আমার। তাই আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। এতে আমি বেয়াদবির কিছুই দেখছি না।’
আসনটিতে মনোনয়ন বৈধ হওয়া আরও পাঁচ প্রার্থী হলেন- জাতীয় পার্টির মোস্তফা কামাল, ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি খোরশেদ আলম, গণফোরামের আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর, বিএনএফের জসিম উদ্দিন ও স্বতন্ত্র মো. নিজাম উদ্দিন। তবে এদের কেউই এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন না।
ভোটারদের প্রত্যাশা, উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে যেন তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।